গৌরনদী
মালামাল জব্দ, মালিকসহ গ্রেপ্তার-৩ ॥ উজিরপুরে অবৈধ তেলের ডিপো ও নকল কারখানা আবিস্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের পাশে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সোনার বাংলা বাজার নামক স্থানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অবৈধ তৈলের ডিপো, নকল পেট্রোল, ডিজেল ও মবিল তৈরীর কারখানা আবিস্কার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে অবৈধ তৈলের ডিপো ও কারখানার মালিকসহ পুলিশ তিন জনকে আটক ও মালামাল জব্দ করেছে পুলিশ। এঘটনায় গতকাল রবিবার মালিকসহ ৫ জনকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই দিনে আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে বরিশাল জেল হাজতে প্রেরন করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী, ডিপোর কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের গাববাড়ি গ্রামের মৃত নুর মহাম্মদ হাওলাদারের পুত্র মো. সাইফুল ইসলাম (৪৫) ২০১১ সালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সোনার বাংলা বাজারে মেসার্স সালমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে খুচরা তৈল বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। স্থানীয়রা জানান, সাইফুল ইসলাম সামনে ছোট একটি শো-রুম থাকলেও পিছনে বিশাল একটি বদ্ধ টিনসেড ঘরে স্থাপন করেন অবৈধ তৈলের ট্যাংকি। এ ছাড়া ওই বদ্ধ ঘরের মধ্যে তৈরী করতেন ভেজাল প্রেট্রোল, ডিজেল ও মবিল। ওই ভেজাল সামগ্রী বরিশাল উত্তরের গৌরনদী, অগৈলঝাড়া, হিজলা, মুলাদী, উজিরপুর ও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ডিষ্টিবিউটর হিসেবে সরবারহ ও বাজারজাত করে আসছিল।
অভিযানে অংশ নেওয়া উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) গাজী শামছুর রহমান, মো. হাবিবুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জানান পরে গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় তারা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড ও উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঝুমুর বালাকে নিয়ে সোনার বাংলা বাজার নামক স্থানে মো. সাইফুল ইসলামের ডিপো ও নকল কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এসময় টিনসেট ঘরের মধ্যে স্থাপনকৃত ২২ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংকি আবিস্কার করা হয়। যার মধ্যে ভেজাল তৈল ভর্তি ছিল। এ ছাড়া ওই কারখানায় তৈরী ভেজাল পেট্রোল, মবিল ও ডিজেলসহ নকল মালামাল তৈরীর রং, তারপিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী জব্ধ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অবৈধ ডিপো ও ভেজাল কারখানার মালিক মো. সাইফুল ইসলাম, (৪৫), প্রধান ব্যবস্থাপক মানিক হোসেন(৩৫), হিসাব রক্ষক গোপাল বিশ্বাস (৩২)কে নগত ৮০ হাজার ৮৩০ টাকাসহ আটক করেন এবং ডিপো ও কারখানা সিলগালা করা হয়। এসময় মার্কেটিং ম্যানেজার মো. রুবেল (৩০) ও অপারেটর জুয়েল (২৬) পালিয়ে যান।
আটককৃত গোপাল বিশ্বাস জানান, ৫ বছর পূর্বে সাইফুল ইসলাম মহা-সড়কের পাশে সোনার বাংলা বাজারে সেলিম হাওলাদারের দোকান ভাড়া নিয়ে খুচরা তৈল বিক্রি শুরু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতে পেট্রোল, ডিজেল ও মবিলের ভেজাল দিয়ে নিজের দোকানে বিক্রি শুরু করেন। এক বছরের মাথায় সাইফুল তৈরীকৃত ভেজাল সামগ্রী মজুদ ও বাজারজাত করার জন্য গোপনে ২২ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংকি স্থাপন করে নকল প্রেট্রোল মজুত করেন। যাহা যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটিডের ডিষ্টিবিউটর পরিচয়ে বিভিন্ন উপজেলায় বাজারজাত করে আসছিলেন।
অবৈধ তৈলের ডিপো স্থাপন ও নকল কারখানায় ভেজাল তৈরী সামগ্রী বাজারজাত করার অভিযোগ সম্পর্কে কারখানার মালিক মো. সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অধিক মুনাফার জন্য একাজ করেছেন। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপ-পরিদর্শক (এস,আই) মো. হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে মালিকসহ ৫ জনকে আসামি করে অবৈধ ডিপো স্থাপন, ভেজাল তৈরী ও বিক্রির অপরাধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড ঝুমুর বালা কারখানা সিলগালা ও জব্দকৃত মালামালের ছিজারলিষ্ট তৈরীর কথা স্বীকার করেছেন।