গৌরনদী
খালে বাঁধ দেয়ায় তিন গ্রামে জলাবদ্ধতা, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের তাঁরাকুপি গ্রামে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মান করে বরিশাল পল্লী বিদ্যু সমিতি-২র ঠিকাদার। এতে উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের তিন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রায় এক হাজার একর জমির ধান, পাট, পান বরজসহ নানা ধরনের সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পেরেছে প্রায় দেড় হাজার কৃষক। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ডিজিএমর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।
স্থানীয় লোকজন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও গ্রাসবাসি জানান, বরিশাল-ঢাকা মাহসড়কের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের কটকস্থল Ñ বার্থী খালের পাড়ে তাঁরাকুপি গ্রামে বরিশাল পল্লী বিদ্যু সমিতি-২র আরইইবিডিপি-২ প্রকল্পের অধীনে ২০১৮ সালের এপিল মাসে ৩,৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নিমার্ণের জন্য মেসার্স সানরাইস এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ওই সময়ই কাজ শুরু হয়। ভবনসহ যাবতীয় কাজ শেষ করে ঠিকাদার। গত ৩/৪ ধরে রাস্তা নির্মানের কাজ শুরু করেন। রাস্তা নির্মান করতে গিয়ে ঠিকাদার খালের মধ্যে বাঁধ নির্মান করেন। খালের মধ্যে অবৈধ বাধ নির্মান করায় বর্ষার পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। এতে গত ২/৩ দিনের বৃষ্টি পানি অপসারন না হওয়ায় উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের তিন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রায় এক হাজার একর জমির ধান, পাট, মুগডাল ও পান বরজসহ নানা ধরনের সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পেরেছে প্রায় দেড় হাজার কৃষক।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের কটকস্থল, তাঁরাকুপি ও পশ্চিম বাউগাতি গ্রামের পানবরজ, পাট, মুগ ডাল ফসল পানির নিচে। বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সড়ক নির্মানের বাঁধ দেয়ার কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা না করেই খালের মধ্যে বাঁধ দেয়ায় ফসলে ব্যাপক ক্ষতিসহ কৃষকের দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জহুরুল হক বেপারী অভিযোগ করে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রটি নির্মাণের সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কটকস্থলÑবার্থী খালটি সচল রেখে নির্মান কাজ করার কথা বললেও ভবন নির্মান কাজ শেষ করে রাস্তা করতে গিয়ে তিনি কথা রাখেনি। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না করে ঠিকাদার খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মান শুরু করেন। এতে খালে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে বৃষ্টিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। গত বুধবার কৃষকরা ও এলাকাবাসি খালে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না করে রাস্তা নির্মান কাজে বাধা দেন। ঠিকাদারের লোকজন বাধা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যান।
তাঁরাকুপি গ্রামের আলম সরদার, আব্দুর রশিদ, আবু তালেবসহ কয়েকজন কৃষক জানান, খালে বাঁধ দেয়ার কারনে খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। গত ২/৩ দিনের বৃষ্টিতে ফসল তলিয়ে আমাদের অপুরনীয় ক্ষতে হয়েছে। কৃষক জানে আলম অভিযোগ করে বলেন, ২০ শতক জমিতে মুগ ডাল চাষ করেছি সবই পানির নিচে তলিয়ে গেচে। কটকস্থল গ্রামের মোঃ মাসুদ মিয়া বলেন, ‘গত কয়েকদিনের ভাড়ি বর্ষনে জলাবদ্ধতার কারনে মোর তিন একর জমির আঁধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ঠিকাদার খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মোর সব শেষ কইররা দিছে। একই ভাবে জানালেন তাঁরাকুপি গ্রামের পারভীন বেগম, আনোয়ার হোসেনসহ ক্ষতিগ্রস্থ অনেক কৃষক। তাঁরাকুপি গ্রামের আঃ হালিম বেপারী জানান, পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদারের বাঁধের কারণে তারসহ তিন গ্রামের প্রায় অর্ধশত কৃষকের বরজে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কটকস্থল গ্রামের কৃষক কেরামত আলী মাঝি জানান, তার ৪ একর জমির মেজতা ও বগি পাট নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সবজিসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও ভূক্তভোগী গ্রামবাসি বাঁধ অপসারন ও ক্ষতি পুরন চেয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ও গৌরনদী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম)র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ঠিকাদারের অবৈধ বাঁধের ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধাতায় তিন গ্রামের ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কথা স্বীকার করে বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান প্যাদা বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে বাঁধ দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু ঠিকাদার বা পল্লিবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তারা করেননি। দ্রæত বাধ অপসারন করার দাবি জানান তিনি। অভিযোগে ব্যাপারে জানতে প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাওন আহম্মেদের কাছে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। গৌরনদী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জুলফিকার হায়দার চৌধুরীর এ প্রসঙ্গে বললে, ঠিকাদারকে কর্তৃপক্ষ কার্যাদেশ দিয়েছে, বিষয়টি ঠিকাদারের । এর বেশী কিছু তিনি বলতে রাজি হয়নি। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান লিখিত আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।