গৌরনদী
উজিরপুরে ৮০ কেজির বদলে ৬০ কেজি চাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ এবারে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের মৎস্যজীবিদের চাল বিতরনে প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে ২০ কেজি করে চাল কম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য হরেন রায়ের বিরুদ্ধে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রনতি বিশ্বাসের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সুবিধাভোগীরা। বিষয়টি তদন্তের জন্য উজিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
উজিরপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা অয়ন সাহা জানান, ঝাটকা নিধন প্রতিরোধে ত্রান ও দূর্যোগ মন্ত্রনায়ন মৎস্যজীবিদের পূর্নবাসনের জন্য বিশেষ ভিজিড কার্যক্রম চালু করেন। এ কার্যক্রমের অধীনে বছরের চার মাস তালিকাভূক্ত মৎস্যজীবিদের প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। বর্তমানে মৎস্যজীবি পূর্নবাসন কার্যক্রম কর্মসূচী মৎস্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে রয়েছে এবং মৎস্য অধিদপ্তর তদারকি করছে।
উজিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোঃ জামাল হোসাইন জানান, মৎস্যজীবি পূর্নবাসন কর্মসূচীর প্রকল্পের অধীনে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নে ৬৪ জন সুবিধাভোগী রয়েছে। তারা বর্তমানে ঝাটকা নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিজন সুবিধাভোগী চারমাসে ৪০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। ফেব্রæয়ারি মার্চ মাসের চাল বিতরন কার্যক্রম চলছে। সুবিধাভোগী নিকুঞ্জ হালদার, শষধর বাড়ৈ, লক্ষন বাড়ৈ, সুমন রায়সহ কয়েকজন জানান, হারতা ইউনিয়নের মৎস্যজীবি পূর্নবাসন সুবিধাভোগীদের মধ্যে ফেব্রæয়ারি মার্চ মাসের চাল বিতরনে প্রতিকার্ডে ৮০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান হরেন রায় দুই মাসের একত্রে ৬০ কেজি করে চাল প্রদান করেছে। ২০ কেজি করে চাল কম দেয়ার বিষয়টি তারা বুধবার উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রনতি বিশ্বাসের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হারতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হরেন রায় মৎস্যজীবিদের ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বিতরনের সময় ৮০ কেজির স্থলে ৬০ কেজি করে চাল প্রদান করেন। আমরা (সুবিধাভোগী অভিযোগকারীরা) এর প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান আমাদেরকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে। কার্ড বাতিলসহ নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে ৮০ কেজির স্থলে ৬০ কেজি চাল নিতে বাধ্য করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য যুধিষ্ঠীর বিশ্বাস বলেন, অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। ইউএনর কাছে দেয়া দরখাস্তের ব্যবস্থা নিতে আমি সুপারিশ করেছি। ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য নিখিল চক্রবর্তি বলেন, আমার ওয়ার্ডের মৎস্যজীবি সুবিধাভোগীদের প্রত্যেককে ৮০ কেজির স্থলে ২০ কেজি চাল কম দিয়ে ৬০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ৬৪ কার্ডের মধ্যে ২০/২৫টি বেনামে ভুয়া কার্ড রয়েছে। যার মাল তুলে আত্মসাত করা হচ্ছে। যা তদন্ত করলেই বের হয়ে যাবে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে হারতা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলেিগর সদস্য হরেন রায় বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সকল দায়িত্ব পালন করলেও ত্রানসহ হতদরিদ্রে সুবিধাভোগী কার্যক্রমের কোন দায়িত্ব আমি পালন করি না। এসব কার্যক্রমের তালিকা ও বিতরনের জন্য ইউপি সদস্যদের দায়িত্ব বন্টর করে দেয়া হয়েছে। মৎসজীবিদের চাল বিতরন কার্যক্রম পরিচালনা করেন ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন তালুকদার। আমাকে হয়রানী করতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক হোসেন তালুকদার বলেন, চাল কম দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। চেয়ারম্যানসহ আমাকে হয়রানী করতে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাল ভাগ করে অতিরিক্ত কিছু লোকককে সুবিধা দেয়ায় চাল কিছুটা কম হয়ে থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রনতি বিশ্বাস বলেন, হাতে নাতে ধরা পরলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। অভিযোগ পাওয়ার পরে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জামাল হোসাইনকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।