গৌরনদী
সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মহাসড়কে ঢাকা মুখি মানুষের ঢল, প্রশাসনের অভিযান
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম / বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতি প্রতিরোধে সাধারন ছুটি ঘোষনা করে সকলকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার অধিকাংশ হাট, বাজার ও বাস ষ্টেশনে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে স্বাভাবিকভাবে চলছে জমজমাট ব্যবসা বানিজ্য। মহাসড়কে বাড়ছে ঢাকা মুখি মানুষের ঢল। করোনা ভয়াবহতা এড়াতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অবৈধ যাত্রী পরিবহনের অভিযোগে তিন ট্রাক চালককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন হাট বাজারে গিয়ে আগত ক্রেতা বিক্রেতা ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করেনা প্রতিরোধে সরকারি ছুটি ও নির্দেশনা সম্পর্কে প্রায় সকলেই অবগত। তারপরেও নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্বাভাবিক কেনা কাটা থেকে শুরু করে ঘোরাফেরা করছেন হাজারো সাধারন মানুষ। প্রায় প্রতিটি বাজারেই ছিল উপচে পরা ভীর। শনিবার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া বাসষ্টান্ডের ষ্টেশনগুলোতে ছিল ঢাকা ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান শত শত যাত্রী। গাড়ি বন্ধ থাকলে ট্রাকে উঠে গন্তব্যে পৌছার যাত্রীদের ভীড় লক্ষ্যনীয়। এসব যাত্রী ও বাজারে আগতদের ধারনা বাংলাদেশে করোনা তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না।
শনিবার ১১টায় গৌরনদী বাসষ্টান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা যাওয়ার জন্য ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দাড়িয়ে আছে শতাধিক যাত্রী। গনপরিবহন বন্ধ থাকায় বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকলে কাউন্টারের শ্রমিকরা চড়া মূল্য নিয়ে এসব যাত্রীদের মাইক্রোবাস ও ট্রাকে তুলে দিচ্ছেন। মাওয়া ঘাট যেতে ডেকে ডেকে ট্রাকে তুলছেন যাত্রী। স্বাভাবিক অবস্থায় গৌরনদী থেকে মাওয়াঘাট ২শ থেকে আড়াই শত টাকা নিলেও বর্তমানে ট্রাক ও মাইক্রেববাসে থেকে ৮শত টাকা নেওয়া হয়। বাড়িতে থাকার নির্দেশনা অমান্য করে চলাচল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যাত্রী আল হামজা (৩৭), তেন্নাত আলী (৫৫), জাবের ফকির (৪৪) বলেন, সরকারি ছুটি ঘোষনার পরে বাড়িতে আসছিলাম পরিবারের সঙ্গে কযেকদিন থেকে পুনরায় কর্মস্থলে যাচ্ছি। করোনার সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, করোনা আমাগো দেশে তেমন কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ঢাকা যাওয়ায় সমস্যা নেই। এ ছাড়া গৌরনদীর বটাজোর, মাহিলাড়া, টরকী, ভুরঘাটা ও আগৈলঝাড়ার গৈলা, আগৈলঝাড়া, পয়সার হাট, জোবারপাড় বাসষ্টান্ডে দেখা গেছে একই চিত্র।
হাট বাজারের শপিং কমপ্লেক্সে ও বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে গৌরনদীর পৌর কাঁচা বাজার, টরকী মাছ বাজার গৌরনদী বন্দর, সরিকল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে বাজারে চলছে জমজমাচ কেনাবেচা। সাধারন মানুষ সামাজিক দুরত্ব না মেনে স্বাভাবিক বাজারের মত বেচাকেনা চালিয়ে যান। গৌরনদী পৌর কাচা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মৎস্য শাহজাহান, সঞ্জয় দাস জানান, ক্রেতারা নিয়ম না মেনে কেনাকাটা করছে। আমরা নিষেধ করলেও তা মানেন না। আমরা কি করতে পাড়ি। আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের আগৈলঝাড়া বাজার গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের মাছ ও সবজির দোকান খোলার পাশাপাশি খোলা রয়েছে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি দোকানেই দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচে পরা ভীড়। একে অপরের সঙ্গে শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছিলেন ক্রেতারা।
এ সময় করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই বলেন, করোনা নিয়ে ভয় আছে কিন্তু প্রয়োজন আসতে হয়েছে। আমাদের দেশে বিদেশের মত কিছু হবে না। এ সময় কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, করোনা আতঙ্কে আমাদের বেচাবিক্রি কিছুটা কমেছে কিন্তু বন্ধ হয়নি। আগৈলঝাড়া উপজেলার নগরবাড়ী এলাকার হাবিল হাওলাদার (৩৭) বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আমি ঘর থেকে বের হই নাই। কিন্তু আজ বাজার করতে এসে দেখি পূর্বেকার দিনের মতনই একই চিত্র। মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারের নগরবাড়ী, ফুল্লশ্রী, সুজনকাঠীসহ আশ পাশের অন্তত ২৫টি এলাকার কয়েক হাজার মানুষ নিয়মিত বাজারে কেনাকাটা করছে। এ ছাড়াও উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া, ছয়গ্রাম মিশ্রীপাড়ার হাট বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে চলছে কেনাকাটা।
কয়েকজন শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের অনেকেই লকডাউর মানতে মানুষকে বাধ্য করতে প্রশাসনের প্রতি কঠোরতা অবলম্বনের জন্য দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, এক সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রন ও হোম কোয়ারেন্টিনে বাধ্য করতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। সকলকে সতর্ক করার পরেও সরকারি নির্দেশনা না মানায় ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলার সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিয়ে পরামর্শ করে আরো কঠোরভাবে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান বলেন, সাধারন মানুষ অনেকটাই অসচেতন। তারপরেও সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকতে প্রশাসনের অভিযান অব্যহত রয়েছে।