গৌরনদী
শাপলা বিলে পর্যটকদের সুবিধ্যাার্থে গড়ে তোলা ব্রিজ ও গোলঘর ভেঙ্গে ফেললেন ইউএনও
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ সৌন্দার্য পিপাষু পর্যটক প্রেমিদের অবাধ বিচরন ভূমি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের লাল শাপলা বিল। এখানে আগত হাজারো পর্যটকদের সুবিধ্যাার্থে ্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ব্রিজ, গোলঘার, নৌকায় উঠানামার সিঁড়ি ও সেট। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আক্তার আকস্মীকভাবে উপস্থিত হয়ে বিনা নোটিশে গতকাল মঙ্গলবার সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আগত পর্যটক ও স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, পর্যটক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৌন্দার্য পিপাষু পর্যটক প্রেমিদের অপরুপ সৌন্দার্যের লীলাভূমি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের কালবিলা লাল শাপলার বিল। শাপলার বিল বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। প্রতিবছর জুলাই মাষ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শাপলা বিলের লাল শাপলার সৌন্দার্য্য উপভোগ করতে দেশের ঢাকা, চট্রগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, খুলনা, ঝিনাইদা, কুমিল্লা, পটুয়াখালিসহ দেশ বিদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটক প্রেমি পরিবার পরিজন এখানে ভীড় করে সৌন্দার্য উপভোগ করেন। স্থানীয়রা জানান, দেশ বিদেশ থেকে আগত পর্যকট বৃন্দের সবিধ্যার্থে এখানে ছিল নৌকায় উঠার সিঁড়ি, ওয়াসরুম ও বিশ্রামের জন্য বসার ঘর ও নারী পর্যটকদের পরিধেয় বস্ত্র পরিবর্তনের স্থান। এতে পর্যকটদের খুবই অসুবিধা ও ভোগান্তি পোহাতে হত।
এলাকাবাসি জানান, পর্যকটদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে স্থানীয় সমাজসেবক মো. মিজানুর রহমান(৪২), আল মাহমুদ মিলন(২৫) ও মহসীন রানা(২৫)সহ চার বন্ধু মিলে জনৈক জুলহাস খানের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে নিজ খরচে নৌকায় উঠার সিঁড়ি, ওয়াসরুম, বিশ্রামের জন্য বসার ঘর, ৫০ ফুট ব্রিজ, ৪০ ফুট দীর্গ সেট ও নারী পর্যটকদের পরিধেয় বস্ত্র পরিবর্তনের স্থান নির্মানের উদ্যোগ নেন। উদ্যোক্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, চার বন্ধু পর্যটকদের সুবিধা দিতে সিঁড়ি, ব্রিজ, ওয়াশরুম ও গোল নির্মানের সিদ্বান্ত নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করি। জেলা প্রশাসক আমাদের উদ্যোগতে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে বলেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মৌখিক কথা বলে পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যায়ে সিঁড়ি, ব্রিজ, ওয়াশরুম, গোলঘর ও সেট নির্মান করি। এতে পর্যটকদের বিনোদনকে আরো রোমাঞ্চকর করে বাড়তি আনন্দ পান।
আগত পর্যটক মো. মিজানুর রহমান, সেতু আক্তার, শারমিন সুলতানাসহ অনেকেই বলেন, প্রতিবছর বরিশালের শাপলা বিলের লাল শাপলার সৌন্দার্য্য উপভোগ করতে আমরা এখানে আসি কিন্তু এখানে কোন ধরনের সুবিধা না থাকায় অনেকটা ভোগান্তি পোহাতে হত। বিনোদন অনেকাংশে ¤øান হয়ে যায়। এখানে সরকারি উদ্যোগে সিড়ি, ওয়াশরুম, গোলঘর নির্মান করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। এবছর স্থানীয় যুবকরা উদ্যোগ নিয়ে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করেছে তা সত্যিই প্রসংশার দাবিদার। তবে সরকারি উদ্যোগে স্থায়ীভাবে এগুলো নির্মানের জন্য তারা কর্তৃপক্ষের আহবান জানান।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোলঘর, সেট দুটি ভেঙ্গে শাপলা বিলের মধ্যে পড়ে আছে। ব্রিজ ভাঙ্গার কাজ করছেন ৫/৭ জন শ্রমিক। এসময় কেন ভাংছেন জানতে চাইলে শ্রমিক সর্দার গৌড়াঙ্গ বিশ্বাস (৩৮) স্যারের নির্দেশ ভাইঙ্গা নিতেছি। উদ্যোক্তা মো. আল মাহমুদ মিলন জানান, তারা পর্যটকদের সুবিধা দিতে ব্রিজ, গোলঘর নির্মান করেন। শাপলার বিল দেকতে এসে অর্থ মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব রেহানা পারভীন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার সহকারী অধ্যাপক ডাঃ শাহানা বেগম, বরিশাল জেলা প্রশাসকসহ স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ আমাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি (আল মাহমুদ) অভিযোগ করে বলেন, উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আক্তার গতকাল সকালে আকস্মীকভাবে পুলিশ ও লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে কোন কিছু না বলেই বিনা নোটিশে ভাঙ্গা শুরু করেন। এসময় আমিসহ অন্যান্যরা ভাংতে নিষেধ করলে সে আমাকে গালিগালাজ করে মারতে উদ্যাত হন। এমন কি আমাদেরকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানোর ভয় দেখান। আমাদের কোন কথা বলতেই দেননি। এসব ভেঙ্গে ফেলায় ক্ষুব্ধ আগত পর্যটক ও এলাকাবাসি। পর্যটক বেলায়েত হোসেন, আরিফুল হকসহ অনেকেই বলেন, ব্যক্তিগত জমিতে নিজস্ব অর্থ ব্যায় করে পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এটা ভাঙ্গার কোন যুক্তি নেই। কি কারনে ইউএনও এটা করেছে তা বোধগম্য নয়। অনতিবিলম্বে সরকারিভাবে এগুনো নির্মানেরজন্য তারা দাবি জানান।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আক্তার বলেন, আমি যে স্থান নির্বাচন করেছি সেখানে করা হয়নি। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে যে যায়গায় করেছে সেখানে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া অনুমোদন ছাড়া নির্মান করায় ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস বলেন, কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসককে সঙ্গে নিয়ে আমি শাপলা বিলে গিয়েছিলাম। ব্যবস্থাপনা না থাকায় পর্যটকদের অসুবিধা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহনেজেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে ব্যবস্থা করা অনেকটা সময়ের ব্যাপার। জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে নির্মান করা হলে হয়তো ইউএনও ভাংতে পারতেন না। আমার পদক্ষেপ নেওয়ার কিছু নেই বিষয়টি জেলা প্রশাসক দেখবেন। বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ওটা নিয়ম মেনে করা হয়নি। রেস্ট হাউজ, সড়কসহ ৫০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। জেলা পরিষদের মাদ্যমে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।