গৌরনদী
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি ভরাট, উৎকোচ দাবির অভিযোগে ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ননের বাগধা মৌজার প্রায় কোটি মূল্যের ৪৩ শতাংশ জমি দখল করে বালু ভরাট করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুর রশিদ খানের পুত্র মো. ওবায়েদুল হক খান। ওই জমির মালিকানা দাবি করে ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বালু ভরাট কাজে বাধা দেওয়ায় গত বৃহস্পবিার দুই লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবির অভিযোগে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাসহ ৫ জনকে আসামি করে বরিশাল সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন দখলদার। আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলাটি গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন বরিশাল আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামের বাগধা মৌজার এসএ ৩৮নং খতিয়ানের এসএ -৬১৩৭ ও ৬১৬৭ নং দাগের ৫৮শতাংশ জমি বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৭২ সালে সাতলা বাগধা প্রকল্পের অনুকূলে হুকুম দখল করেন। দীর্ঘদিন যাবত ওই জমি পরিত্যক্ত পরে ছিল। ওই জমির বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। মাঝে মধ্যে ওই জমিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসে তদারকি করে থাকত। হঠাৎ এ বছর ওই জমির ক্রয় সূত্রে মালিকানা করেন পশ্চিম বাগধা গ্রামের রশিদ খানের ছেলে মো. ওবায়েদুল হক খান ও সহদর মনির খান। ভূমি জরিপে ৪৩ শতক জমি তারা রের্কড করে নেন।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)র গৌরনদী সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান জানান, সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে সাতলা বাগধা প্রকল্প উন্নয়নে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহন করেন। গত বৃহস্পতিবার ওই প্রকল্পের জরিপ কাজে গিয়ে তিনি দেখেন তাদের জমি দখল করে বাল ুভরাট করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুর রশিদ খানের পুত্র মো. ওবায়েদুল হক খান। ্ সময় তিনি ভরাট কাজে বাধা দেন।
উৎকোচ না দেওয়ায় ভরাট কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় অভিযোগে গত সোমবার ওবায়েদুল হক খান বাদি হয়ে বরিশাল সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইরফান, গৌরনদী সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী করিম আলী, সার্ভেয়ার ফরিদ উদ্দিন, মধ্যস্থকারী (দালাল) আগৈলঝাড়া উপজেলার পশ্চিম বাগধা গ্রামের হাবিব তালুকদার। আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলাটি গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন বরিশাল আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আরজিতে বাদী ওবায়েদুল হক খান উল্লেখ করেন তার ভাই মনির খান একই এলাকার রানা গাইন ও তার স্বজনদের কাছ থেকে ২০১৫ সালে জমি ক্রয় করেন। কয়েকদিন পূর্বে ওই জমিতে বালু ফেলে ভরাট কাজ শুরু করেন। ভরাটের খবর পেয়ে পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান গত ১৮ জানুয়ারি ভরাটকৃত জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি করেন। ভরাট কাজে বাধা দিয়ে তাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিয়ে জমির মালিকানার কাজগপত্র দেখাতে চাইলেও প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান কাগজপত্র না দেখে দুর্ব্যবহার করেন। বৃহস্পতিবার পুলিশ দিয়ে তাদের ভরাট কাজ বন্ধ করে দেন।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ৭২ সালের অধিগ্রহনের পর থেকে ওই জমির বৈধ মালিক বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড। অবৈধ দখলে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে দুই লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। টাকা যদি চাওয়া হত তাহলে কাজ বন্ধের জন্য পুলিশ ডাকা হত না। ভরাট বন্ধের সময় পাউবোর একাধিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারাও বিষয়টি জানতেন। সকল বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ এ প্রসঙ্গে বলেন, জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডে। মিথ্যা মামলা দিয়ে কর্মকর্তাদের হয়রানী করা হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আউনজীবির মতামতের ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।