গৌরনদী
৫’শ ২২ বছরের প্রাচীন ॥ গৈলা বিজয় গুপ্তের গৈলা মনসা মন্দিরের বাৎসরিক মনসা পূজা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার এতিহ্যবাহী গৈলায় মধ্যযুগের কবি ও মনসা মঙ্গল কাব্যেরে রচয়িতা বিজয় গুপ্তের ৫শত ২২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত মা মনসা মন্দীঅরের বাৎসরিক মনসা পূঁজা গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা উপলক্ষে ঐতিহাসিক মনসা মন্দিরে ভারত. নেপালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ভক্ত, হিন্দু সম্প্রদায়েরর দর্শনার্থী ভিড় করে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চাঁদশী ঈশ্বর চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারক চন্দ্র দে জানান, মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যর অমর কবি ও অমর কাব্য মনসা মঙ্গঁল এর রচয়িতা বিজয় গুপ্তের প্রতিষ্ঠিত মনসাকুন্ড নামে খ্যাত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত পাঁচ’শ ২২ বছরের পুরোনো মনসা মন্দিরের বাৎসরিক পূঁজা মহা আড়ম্বড়ের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫শ ২২ বছর আগে থেকে বাংলা শ্রাবন মাসের শেষ দিনে প্রতি বছর এ পূঁজা মন্ডপে পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পূঁজার আগে গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার তিনদিন ব্যাপি মন্দির আঙ্গিনায় রয়ানি গান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐতিহাসিক মতে, মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি বিজয় গুপ্ত “বিষহরি” (বিষ হরণকারী) মনসা দেবীর স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে নিজ বাড়ির দীঘিতে স্বপ্নে পাওয়া পূঁজার ঘট পেয়ে গৈলা গ্রামের নিজ বাড়িতে বিজয় গুপ্ত ৫’শ ২২ বছর পূর্বে মা মনসার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং পাশ্ববর্তি বকুল গাছের নিচে বসে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েই তিনি মনসা মঙ্গল রচনা করেছিলেন। দেবী তাকে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে বলেছিলেন “ তুই নাম চাস না কাজ চাস ?” উত্তরে বিজয় গুপ্ত বলেছিলেন “ আমি নাম চাই” সেই থেকে অদ্যাবধি ওই মন্দিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর শ্রাবনের সংক্রান্তি তিথীতে বাৎসরিক পূঁজা উদ্যাপিত হয়ে আসছে।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্বকালে ইংরেজী ১৪৯৪ সনে বিজয় গুপ্ত মনসা মঙ্গঁল রচনা করে সুলতানের দরবারে “মহাকবি”র খেতাবে অধিষ্টিত হন। কারণ বিজয় গুপ্তই সর্ব প্রথম ইংরেজী তারিখ ও সন তার কাব্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এর আগেও একাধিক পন্ডিত মনসা মঙ্গল রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম হলেন ময়মনসিং এর কানা হরি দত্ত। কিন্তু তাদের তুলনায় বিজয়গুপ্তর কাব্য নিরস হলেও ইংরেজী সন, তারিখ লিব্বিদ্ধ করার কারণে তিনিই হয়ে ওঠেন মনসা মঙ্গল কাব্য রচয়িতাদের অন্যতম। মহা কবি খেতাব পাওয়ার পর ভারত বর্ষে মনসা দেবীর মহা ধুমধামে পূঁজার প্রচলন ঘটে। মহাকবি বিজয় গুপ্তের পিতার নাম সনাতন গুপ্ত ও মাতার নাম রুক্ষিনী দেবী।
কবি বিজয় গুপ্ত স্মৃতি রক্ষা, মনসা মন্দির সংরক্ষণ কমিটির সাধারন সম্পাদক ও গৈলা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল দাস গুপ্ত জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক সেনারা বিজয় গুপ্তের মন্দির থেকে মনসা দেবীর বিগ্রহ চুরি করে নেয়ার পর ২০০৮ সনে ঢাকাস্থ সনাতন ধর্মের সম্প্রদায়, বিদেশে অবস্থানরত ভক্তবৃন্দদের আর্থিক অনুদানে পিতলের তৈরি মনসা দেবীর প্রতিমা পুঃণ স্থাপন করা হয়। এরপর হাতে নেয় হয় পুরানো মন্দির সংস্কারের কাজ। যার উন্নয়ন কাজ এখনও চলছে। পূঁজা অনুষ্ঠানে একটি বাক্য উচ্চারিত হয়, তা হল; “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”-এ বাক্যকে ধারন করে জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে বাৎসরিক পূঁজায় দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দদের সমাগম ঘটেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পূঁজা উপলক্ষে মানত দিতে দেশ-বিদেশের ২০/২৫ ভক্তবৃন্দ পূজার্ঘ্য মনসা মন্দিরে যোগদান করেন।