বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় বাল্য বিয়ে থেকে নিজেকে বাঁচতে থানায় হাজির স্কুল ছাত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাবা-মা জোর পূর্বক বিয়ে দেয়ায় বাল্য বিবাহ থেকে নিজেকে বাঁচাতে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী গ্রামের শাহজাহান ফকিরের মেয়ে ও আগৈলঝাড়া সদরের বিএইচপি একাডেমীর ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী তিন্নি আক্তারকে(১৪) থানায় গিয়ে হাজির হয়ে পুলিশের আশ্রয় চান। রোববার রাতে স্কুল ছাত্রীর পিতা শাহজাহান ফকির ও মাতা পারুল বেগমকে আটক করে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ। সোমবার পুনঃ বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে নয় মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পান স্কুল ছাত্রীর বাবা মা।
স্থানীয় লোকজন জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী গ্রামের শাহজাহান ফকির তার মেয়ে ও আগৈলঝাড়া সদরের বিএইচপি একাডেমীর ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী তিন্নি আক্তারের (১৪) গোপনে বিয়ে ঠিক করেন একই উপজেলার বসুন্ডা গ্রামের রুহুল তালুকদারের ছেলে হাসিব তালুকদারের (২২) সাথে। স্কুল ছাত্রীর অজান্তে দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হওয়ার পরে সম্প্রতি মেয়ের বাবা শাহজাহান ফকির নোটারির মাধ্যমে নিজেই স্বাক্ষর করে বিয়ে রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করেন। রোববার রাতে স্কুল ছাত্রীর অভিভাবকদের সম্মতি নিয়ে ছাত্রীর স্বামী দাবী করে তাদের বাড়িতে আসেন জামাতা হাসিব তালুকদার। ওই সময় মেয়ে তার বিয়ের খবর জানতে পারে বাবার মার কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হাসিবকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। এতেও হাসিব বাড়ি থেকে চলে না যাওয়ায় স্কুল ছাত্রী তিন্নি আক্তার রোববার রাত সাড়ে ৯টায় বাড়ি থেকে দৌড়ে বের হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় আশ্রয় নেয় এবং বাল্য বিবাহ থেকে নিজেক বাঁচানোর জন্য পুলিশের সহযোগীতা চান। তিন্নি আক্তার বলেন, আমি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাড়াবো এবং সমাজের জন্য দেশের জন্য কাজ করবো। তারপরে বিয়ে, এখনই বিয়ে নয় বিষয়টি কোন কিছুইতে বাবা মাকে বুঝাতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে থানায় আশ্রয় নিতে হয়েছে।
পারিবারিক একটি সূত্র জানান, পুলিশ স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে পুলিশ পৌছার খবর পেয়ে স্বামী দাবিদার হাসিব তালুকদার পালিয়ে যায় পরে পুলিশ স্কুল ছাত্রীর বাবা-মাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। স্কুল ছাত্রীর বাবা শাহজাহান ফকির ও মা পারুল বেগমের কাছে মেয়ের বিয়ে সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা নোটারীর মাধ্যমে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়ের বাল্য বিয়ে দেয়ার কাজটি আমাদের ঠিক হয়নি। আমরা ভূল করেছি। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ গোলাম সরোয়ার বলেন, রোববার রাতে স্কুল ছাত্রী থানায় এসে বিষয়টি জানালে পুলিশ পাঠিয়ে বাবা-মাকে আটক করে। এর আগেই বড় পালিয়ে যায়। গতকাল সোমবার স্কুল ছাত্রীর বাবা শাহজাহান ফকির ও মা পারুল বেগমের কাছ থেকে পুনঃবয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ার শর্তে মুচলেখা রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।