বরিশাল
এসএসসি ফরম পুরনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
বরিশালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০১৯ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফরম পুরনে আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা বোর্ড থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফি নির্ধারন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হলেও কেউই তা মানছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেশী আদায় করা হচ্ছে। টেষ্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পুরনে আদায় করা হচ্ছে ৬/৭ হাজার টাকা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের আগৈরঝাড়া উপজেলায় ৩৮টি হাইস্কুলের ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় ৫ হাজার নিয়মিত ও সাড়ে ৪ শত অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছে। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম এক চিঠিতে ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ১৮৫০ ও বিজ্ঞান ১৯৭০ টাকা ফি নির্ধারন করেন। অনিয়মিতদের জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা আদায় করার নির্দেশনা রয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনে আগৈলঝাড়া উপজেলার ৩৮টি হাইস্কুলের মধ্যে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকরা কেউই বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মানছেন না। তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির একাধিক নেতা জানান, এবারে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরন সংক্রান্ত সিদ্বান্ত সমিতির সভায় এবারে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনের ফি নির্ধারন করা হয় সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনে স্কুলগুলোতে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। বোর্ডের ফরম পুরনে কোন শ্রেনী পার্থক্য (কল) না থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেনী পার্থক্য অনুযায়ী ফরম পুরনের ফি আদায় করা হয়। উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের পয়সারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, তাদের ছেলে বাছনিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম কলে নির্বাচিত হন। বিদ্যালয়ে কোন বকেয়া পাওনা নেই অথচ পরম পুরন বাবত সাড়ে তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। আরেক অভিভাবক জানান, তার কন্যার ফরম পুরনে ৪ হাজার নেওয়া হয়েছে। রতœপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, ব্যবসায় শিক্ষা ফরম পুরনে স্কুল কর্তৃপক্ষ ৪ হাজার টাকা করে আদায় করেছে। প্রধান শিক্ষক মো. মোতালেব হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফরম পুরনের টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ক্লাসের ফি বাবত টাকা নেওয়া হয়েছে। ছয়গ্রাম স্কুল এ্যান্ড কলেজের একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, মানবিক বিভাগে তার ছেলের কাছে কোন বকেয়া না থাকা সত্বেও ফরম পুরনে সাড়ে তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগ রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জল মন্ডল বলেন, বোর্ডের নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত ক্লাস বাবত (কোচিং ) ১হাজার ৫শত টাকা ও স্কুল বকেয়া পাওয়া আদায় করা হয়। রাংতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত ক্লাস ফি নেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায় রোধকরনে ইতিমধ্যেই প্রতিটি স্কুলে চিঠি দিয়ে শতর্ক করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের এসএসসি ফরম পুরনে কোন ক্রমেই বোর্ডের নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ সম্পর্কে আগৈলঝাড়া উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বারপাইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার বাড়ৈ বলেন, সমিতির সভায় বোর্ড ফি নিয়ে ফরম পুরণের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ক্লাস ফি বাবদ ১৫শত টাকা নেওয়া যাবে। আগৈলঝাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি নিতে বলা হয়েছে। কোন স্কুলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।