বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় স্বেচ্ছশ্রমে রাস্তা নির্মান করলেন ২৫ যুবক
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের করিম বাজার থেকে দপাইরপাড় পর্যন্ত কাঁচা সড়কটি দীর্ঘ ধরে কর্দমাক্ত হয়ে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রতœপুর ইউয়িননের তিন গ্রামসহ আশপাশের প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে। এলাকাবাসি সড়কটিতে ইট বসানোর জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ধর্না দিলে কোন ফল পাননি। অবশেষে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কয়েকদিন যাবত বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা নির্মান কাজ শুরু করে গতকাল সোমবার শেষ করেছে তিন গ্রামের স্থানীয় যুবক ২৫ যুবক। এ উদ্যোগ স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, উদ্যোগী যুবক, গ্রামবাসি ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার রতœপুর ইউনিয়ন পরিষদ ১৯৯৯ সালে বারপাইকা গ্রামের করিম বাজার থেকে দপাইরপাড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নির্মান করেন। পরবর্তি বছরে সড়কটিতে ইট বসিয়ে আধাপাকা সড়ক নির্মানের প্রতিশ্রতি দিয়েছিল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও চেয়ারম্যান। কিন্তু ইট বসানোতো দুরের কথা গত ২০ বছরে কাঁচা সড়কটি কোন সংস্কার করা হয়নি। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির ফলে মাটি ক্ষয় হতে হতে কাঁচা সড়কটি প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সড়কটি যাতায়াত অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তিন গ্রামসহ আশপাশের প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে। শারদীয় উৎসবে সাধারন মানুষকে যাতায়াতের সুবিধা দিতে স্বেচ্ছশ্রমে সড়কটি নির্মান করেন স্থানীয় ২৫ যুবক।
স্কুল শিক্ষক সুনীল কুমার বাড়ৈ জানান, রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইক্কা, দপাইরপাড় ও রতœপুর গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই সড়কটি ব্যবহার করে জেলা উপজেলা সদরসহ হাট বাজারে যাতায়াত করে থাকে। এ ছাড়া ওই তিন গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী এই সড়কটি ব্যবহার করে বারপাইক্কা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বারপাইক্কা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কলেজসহ আশপাশের স্কুল মাদ্রসা ও মসজিদে আসা যাওয়া করে। গত ২০ বছর ধরে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় মাটি ক্ষয় হয়ে কাঁচা সড়কটি প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলে সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে তাতে হাটু পর্যন্ত কাদায় ডেবে যায়। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুসহ দূর্ভোগ পোহাতে তিন গ্রামের মানুষকে। তিনি বলেন, সড়কটির দেড় কিলোমিটরের ১৫/২০টি স্পটের অবস্থা খুবই নাজুক। কার্তিক দাস, রতন মন্ডলসহ কয়েকজন জানান, আমরা মেম্বর ও চেয়ারম্যানদের কাছে র্ধনা দিতে দিতে জুতা ক্ষয় করেছি কিন্তু সড়কটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অবশেষে গ্রামের কতিপয় যুবক গত শুক্রবার থেকে নিজ উদ্যোগে সড়কটি সংস্কার ও বালুর বস্তা ফেলে নির্মান কাজ শুরু করে।
সড়ক সংস্কার ও বালুর বস্তা বসানো কাজের উদ্যোক্তা দপাইরপাড় গ্রামের শঙ্কর বিশ্বাস, স্বপন বিশ্বাস, মিথুন বিশ্বাস জানান, তারা ২৫ যুবক নিজেরা চাদা দিয়ে ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে বালু কিনে নিজেরা শ্রম দিয়ে বস্তা ভরে রাস্তার সংস্কার ও খারাপ অংশের ২০টি স্থানে বালুর বস্তা বসিয়ে সরকটি নির্মান শুরু করেছি। আমাদের উদ্যোগ ও কাজ দেখে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ওই টাকা দিয়ে বালু কিনে তা বস্তায় ভরে নিজেরা শ্রম দিয়ে সড়কটি চলাচল উপযোগী করে রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে নির্মান কাজ শুরু করে গতকাল সোমবার কাজ শেষ করেছি।
রতœপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, গ্রামের লোকজন চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়ে। তাছাড়া এলাকাবাসিকে বাড়ি থেকে বের হতে জুতা হাতে নিয়ে চলতে হয়। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যেতে খুবই কষ্ট হয়। সামান্য টাকা ও উদ্যোগের অভাবে দীর্ঘ দিন ভোগান্তি পোহাতে হত। এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ইউনিয়ন পরিষদের সভায় রাস্তাটি পাকাকরন করার জন্য একাধিকবার বলেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এলঅকার ২৫ এগিয়ে এসে জনদূর্ভোগ লাঘব করেছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয় উদ্যাগ। এ ব্যাপার রতœপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তফা সরদার বলেন, উপজেলা পরিষদের সভায় সড়কটি পাকা করনে একাধিকার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী স্কীম করেছে বলে জানিয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী রাজ কুমার গাইন বলেন, রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। রাস্তাটি পাকা করার জন্য প্রকল্প তৈরী করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে পাকাকরন করা হবে।