প্রধান সংবাদ
উজিরপুরে মহিলা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মসজিদ- মন্দিরের বরাদ্ধ আত্মসাতের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম / বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য দিপালী হালদারের বিরুদ্ধে মসজিদ ও মন্দিরের নামে বরাদ্দকৃত টিআর টাকা অঅত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকাবাসি।
স্থানীয় লোকজন, মসজিদ-মন্দির কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট মূত্র জানান, ২০১৮-২০১৯ইং অর্থ বছরের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের মুন্সিরতাল্লুক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নামে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং পশ্চিম কারফা শিশির হালদারের বাড়ির কালী মন্দিরের নামে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ১শত ৩০ টাকা বরাদ্দ দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে মুন্সিরতাল্লুক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হয় মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান (সিপিসি) মোফাজ্জেল হোসেন মল্লিক এবং কালি মন্দির প্রকল্প কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যনরা জানান, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংক উজিরপুর শাখায় চেক ইস্যু করেন। গত ১৯ জুন মহিলা ইউপি সদস্য দিপালী হালদার তাদেরকে নিয়ে উজিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেখানে তাদের দিয়ে চেক গ্রহনের স্বাক্ষর করিয়ে চেক দুটি নিজেই (ইউপি সদস্য) বুঝে নেন। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলে ইউপি সদস্য ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার পরে মসজিদ ও মন্দির কমিটির সভাপতি টাকা দিতে তালবাহানা শুরু করেন।
মুন্সিরতাল্লুক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও প্রকল্প চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জেল হোসেন মল্লিক অভিযোগ করেন, আমি মসজিদের নামে বরাদ্ধকৃত টাকা চাইলে মহিলা মেম্বর দিপালী হালদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আমাকে বলে মসজিদের নামে টাকা তোলা হয়েছে কিন্তু ওই টাকা আপনরা পাবেন না। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আপনার ক্ষতি হবে। কালী মন্দিরের সভাপতি ও প্রকল্প চেয়ারম্যান রবীন্দ্র নাথ বিশ্বাস একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমি টাকা চাইলে মহিলা মেম্বর আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে মন্দিরের উন্নয়নের কাজ করতে বলে। আমি পুরো টাকা চাইলে সে আমাকে জানান টাকা তুলতে অফিসে, দলে, পরিষদের সকল চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে টাকা দিতে হয়েছে আর কোন টাকা দেয়া যাবে না।
স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে মসজিদের মুসল্লী ও মন্দিরের ভক্তদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মো. জাকারিয়া, শিক্ষক আসাদুজ্জামান, ফারুক হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মো. তোতা মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ এলাবাসি ইউপি সদস্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে বৃহস্পতিবার বিকালে জল্লা শহীদ স্মরণিকা মার্কেটের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মল্লিকের কার্যালয়ে এক সমঝোতা বৈঠক বসে। ওই সময় চাপের মুখে মসজিদকে ২৫ হাজার নগত দেন। বৈঠকে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা মো. জাকারিয়া ও শিক্ষক আসাদুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তারা জানান, মহিলা মেম্বর মসজিদ ও মন্দিরের দুই প্রকল্পের ২ লাখ ৩৯ হাজার ১শত ৩০ টাকা থেকে মসজিদে ২৫ হাজার ও মন্দিরে ১০ হাজার টাকা দিয়ে পুরো টাকা তিনি আত্মসাত করেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউপি সদস্যা দিপালী হালদার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যাদের নামে চেক হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে তারাই স্বাক্ষর করে চেক বুঝে নিয়েছেন। আমি কোন টাকা তুলিনি এবং টাকা তোলার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেবী রানী দাস বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মসজিদ ও মন্দিরের নামে দুটি প্রকল্পে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্পের টাকা তুলে কে কিভাবে নিয়েছে তা আমার জানা নেই। উজিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মফিজুৃর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, গত ১৯ জুন ওই দুই প্রকল্পের সভাপতি দুটি চেক নিয়েছেন। পরে তারা কাকে দিয়েছেন তা আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।