বরিশাল
ইউপি চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার জের \ বসত ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলারা জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার ওরফে নান্টুকে নিজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গুলি করে হত্যা করে দূবৃত্তরা। হত্যার পরের দিন নিহতের কথিত স্বজন পরিচয়ে কতিপয় বিক্ষুব্ধ যুবক বাজারের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও একাধিক বসত বাড়িতে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করে এক পর্যায়ে আগুন দিয়ে সম্পূর্নভাবে পুড়িয়ে দেন। ঘটনার নয় মাস পর গতকাল ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলার বিলগাববাড়ির রমেশ হালদার বাদি হয়ে বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪০ জনকে আসামি করে একটি মামলা কারেন। আদালতের বিচারক ইফতেখার আহমেদ শুনানী শেষে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামী ৩ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। হামলা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় এ নিয়ে পৃথকভাবে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন উজিরপুর উপজেলার কাঠালবাড়ি গ্রামের মৃত বাদল জয়ধরের ছেলে পংকজ জয়ধর, বাউধর গ্রামের মৃত শ্রীধাম চৌধূরীর ছেলে হরনাথ চৌধূরী, হরি শীলের ছেলে বিমন শীল, নারদ বাড়ৈর ছেলে মিন্টু বাড়ৈ, বিলগাববাড়ি গ্রামের মৃত সুরেন বিশ্বাসের ছেলে দুলাল বিশ্বাস, মৃত হরলাল বিশ্বাসের ছেলে সচীন বিশ্বাস, মঙ্গল বিশ্বাসের ছেলে অশোক বিশ্বাস, বিনোদ বাড়ৈর ছেলে পিযুষ বাড়ৈ, মৃত বাগানী বাড়ৈর ছেলে অমল বাড়ৈ, পেনু বাড়ৈ ছেলে রিপন বাড়ৈ, কৃষ্ণকান্ত বাড়ৈর ছেলে প্রদীপ বাড়ৈ, জল্লার আঃ মালেকের ছেলে মিজান হাওলাদার, মৃত যতীন বাড়ৈর ছেলে পরিমল বাড়ৈ, বাহেরঘাটের হাবিবুর রহমানের ছেলে সুমন সিকদার, সহিদুল ইসলাম মুন্সির ছেলে সাইফুল ইসলাম মুন্সি, আঃ সোবাহন হাওলাদারের ছেলে মোহাম্মদ আলিমুজ্জান, মৃত আঃ ছালামের ছেলে নেয়ামত হাওলাদার, ছাইদুর রহমান মুন্সির ছেলে শহীদুল ইসলাম মুন্সি, মৃত আঃ আজিজ হাওলাদারের ছেলে ফারুক হাওলাদার, আঃ হালিম বেপারীর ছেলে ইকবাল বেপারী, শাহজাহান হাওলাদরের ছেলে মাসুদ হাওলাদার, ইন্দুরকানীর মৃত রবিন্দ্র নাথ বাড়ৈর ছেলে লবাই, কারফার সত্যরঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে বুলেট, হরিচরন বিশ্বাসের ছেলে নির্মল বিশ্বাস, জগদীশ বিশ্বাসের ছেলে স্বদেশ বিশ্বাস। আসামিরা সকলেই নিহত চেয়ারম্যানের সমর্থক ও স্বজন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে উজিরপুর জল্লা ইউসিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার ওরফে নান্টুকে কারফা বাজারে নিজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গুলি করে হত্যা করে দূবৃত্তরা। ওই দিন রাতে এ ঘটনায় নিহত নান্টুর বাবা বাবা সুখ লাল হালদার বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরের দিন নান্টু হত্যার বিচারের দাবিতে কতিপয় বিক্ষুব্ধ লোকজন ও কথিত স্বজন পরিচয়দানকারীরা সন্ত্রাসীরা নান্টু হত্যার জের ধরে বাদির বাড়িতে ও বাজারে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে করে। এ সময় আসামিরা তার (বাদি রমেশের) বাড়িতে ব্যপক ভাংচুর চালিয়ে ২ লাখ টাকার ক্ষতি করে। এছাড়া তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজিব স্টোর্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে প্রতিষ্ঠানে থাকা ৩৩টি গ্যাসের চুলা, ১৭টি গ্যাস সিলিন্ডার, ৩৫টি মাছের ঘেরের নেট, ২৫টি টেবিল ফ্যান, ১টি টেলিভিশন, ৫ কার্টন মোবিল, দেড় ব্যারেল পেট্রোল ও ডিজেল, ৪টি মোবাইল ফোন, ক্যাশে থাকা নগদ ২৯ হাজার টাকা, ২২৫টি টাইগার ও কক মুরগীর বাচ্চা লুট করে নিয়ে তার ৪ লাখ টাকার ক্ষতি করে। একই সাথে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১ ব্যারেল পেট্রোল ও ২ ব্যারেল ডিজেল মাটিতে ফেলে দিয়ে নষ্ট করে। পরে চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার করে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। রমেশ হালদার জানান, সে দীর্ঘদিন ষরযন্ত্রমূলকভাবে জেল হাজতে থাকার কারনে মামলা করতে পারেননি। তাই জামিনে বের হয়ে গত রোববার মামলাটি দায়ের করেন।
বাহেরঘাট গ্রামের সৌদী প্রবাসী খোকন সরদারের স্ত্রী ঝুমুর আক্তার অভিযোগ করেন, কারফা বাজার সংলগ্ন তিনতলা পাকা ভবনের ৯টি ফ্লাটে হামলাকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট করে। এবং প্রতিটি তালায় পেট্রোলের ব্যারেল ঢেলে আগুন দিয়ে দুই দিন ধরে সম্পূর্ন ভবনটি ভস্মীভূত করেছে। এ ঘটনায় প্রবাসী খোকন সরদারের স্ত্রী ঝুমুর আক্তার, তাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর লুটের ঘটনায় দেবর সোহাগ সরদারের স্ত্রী নুসরাত আক্তার, বাজারের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের দোকানপাট ভাঙচুর-লুটের ঘটনায় সাইদুল বাদি হয়ে অঅদালতে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। নান্টু চেয়ারম্যান হত্যার পর বিক্ষুব্ধ স্বজন ও সমর্থক কর্তৃক হামলা ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় এ পর্যন্ত চারটি মামলা দায়ের করা হয়। উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, রমেশ হালদারের দায়ের করা মামলায় আদালতের নির্দেশনা এখনো হাতে পাইনি। পেলে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত করে যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।