বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতাল বন্ধ করেছে প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে দুঃস্ত মানবতা নামে একটি অবৈধ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মৃত প্রসূতির স্বজনরা হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষকে লাঞ্চিত করেছে। পরবর্তিতে অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার বিকেলে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষনা করে সিলগালা করেছে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস।
স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী পরিবার ও সংশ্লিষ্টরা জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের ফুলশ্রী এলাকায় দুঃস্ত মানবতার হাসপাতাল নামে লাইসেন্স বিহীন ১০ বেডের একটি অবৈধ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ভুয়া চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারনা করে আসছিল। বিভিন্ন ভুল ও অপচিকিৎসায় একাধিক রোগীর মৃত্যু ও বেশ কিছু রোগীর অঙ্গহানি ঘটনা ঘটে এ হাসপাতালে। উপজেলা ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তাদের জড়িমানাসহ সর্তক করা হলে তা উপক্ষো করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যান কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ বুধবার হাসপাতালটি বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের লিটন অধিকারী অভিযোগ করেন, দুঃস্ত মানবতার হাসপাতালের দালাল অর্পনা রানীর মাধ্যমে তার সন্তান সম্ভ্যবা স্ত্রী পলি অধিকারীকে গত ৩০ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিন রাতে গৌরনদী হাসপাতালের জুনিয়র কনস্যালটেন্ট (গাইনী) ডা. বিপুল বিশ্বাস ও এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার ছিলেন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। কথিত চিকিৎসক দিয়ে টানাহেচরা করে স্বাভাবিক সন্তান প্রসাবের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে অস্ত্র পাচারের পর কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনে পলি রানী মারা যান। পরবর্তিতে প্রসূতি পলির মারা যাওয়ার বিষয়টি গোপন রেখে ৩১ জানুয়ারি রোগীর স্বজনদের কাছে রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত রোগীর নাকে অক্সিজেন লাগিয়ে তাদের এ্যাম্বুলেন্স করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী অনেক আগেই মারা গেছে বলে জানান। পরের দিন ১ ফেব্রæয়ারি দুঃস্থ হাসপাতালের ম্যানেজার মো. সুমন ফকির তাদের নিজস্ব এ্যা¤ু^লেন্সে পলির লাশ পৌছে দিতে বাড়িতে গেলে মৃত প্রসূতি পলির স্বজনরা তাদের লাঞ্চিত করেন। তারা (মৃত প্রসূতির স্বজনরা) গত বুধবার সকালে বরিশাল-১ আসনের সাসংদ আবুল হাসানাত অবদুল্লার কাছে অভিযোগ করলে তিনি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাসকে নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ও পুলিশ জানান, সাংসদের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম. মনিরুল ইসলাম, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শুকলাল সিকদার, আগৈলঝাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্বাসউদ্দিন সহ একদল পুলিশ নিয়ে উপজেলা সদরে ফুল্লশ্রী বাইপাস সড়কে অবস্থিত দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসাপতালে অভিযান চালান। এ সময় ১০ বেডের ওই হাসপাতালে তিন জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ৬ জন প্রশিক্ষিত নার্স, ল্যাবরেটরী টেকনিশিয়ানসহ প্রয়োজনীয় জনবল কাঠোমো না থাকা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের সনদপত্র না থাকায় হাসপাতালটি অবৈধ ঘোষনা করে তার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে সিল করে দেন।
অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে দুঃস্থ মানবতা হাসপাতালের ম্যানেজার মো. সুমন ফকির বলেন, প্রসূতি পলির হার্টের রোগী ছিল তাই অস্ত্রপাচারের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হার্টের পরীক্ষা ও চিকিৎসা না করিয়ে অপারেশন করা ঠিক হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বিপুল বিশ্বাস ও পরিচালক স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।
হাসপাতালটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার কথা স্বীকার করে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারকে তাদের বৈধ কাগজপত্র অঅগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র পেলে যাচাই বাচাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।