বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় ইউএনও’র নির্দেশ উপেক্ষা করে সরকারি জমিতে পাকা ভবন নির্মাণ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালÑ গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা রথখোলা এলাকায় বরিশাল সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সরকারি জমি ও সরকারি খাল দখল করে পাকা ভবন নির্মান শুরু করে এক স্কুল শিক্ষকসহ দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্থানীয়রা বাধা দিলে তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন দুই দখলদার। পরবর্তিতে তারা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া সত্বেও তা উপেক্ষা করে নির্মান কাজ চালিয়ে চাচ্ছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, দখলদার, স্থানীয় প্রশাসন, সওজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালÑ গোপালগঞ্চ ভায়া পয়সারহাট সড়কটি জেলা সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্প্রতি সময়ে এই সড়কটিকে আঞ্চলিক সড়কে উন্নীত করার জন্য বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ) যৌথভাবে প্রকল্প প্রস্তবনা পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে পাঠান। যা ইতিমধ্যেই একনেকে অনুমোদন হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, বরিশালÑ গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা রথখোলা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের সামনে সওজ’র আঞ্চলিক সড়কের কালভার্ট সংলগ্ন জায়গা ও গৌরনদী Ñ আগৈলঝাড়া খালের ৪শতাংশ জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মান কাজ শুরু করেন পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের নবী আলী হাওলাদারের ছেলে গৈলা নোনা পুকুরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রভাবশালী মাসুদ হাওলাদার ও দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের রফিজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে প্রভাবশালী জহিরুল ইসলাম। তারা শুধু সওজের সরকারি জমি দখলই তারা করেননি তারা গৌরনদী Ñ গৈলা সরকারি খালের মধ্যের জমিও দখল করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রখখোলা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীসহ অনেকেই জানান, প্রভাবশালী মাসুদ হাওলাদার ও জহিরুল ইসলাম সওজের ও সরকারি খারের জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মান কাজ শুরু করলে গত মঙ্গলবার তারা নির্মান কাজে বাধা দেন। তাদের বাধা না শোনলে তারা বিষয়টি গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সফিকুল হোসেনকে জানান। তাতেও কাজ বন্ধ না করলে স্থানীয়রা বিষয়টি আগৈলঝাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার দাসকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে নির্বাহী কর্মকর্তা গৈলা ইউনিয়নের তহশিলদার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গৈলা ইউনিয়নের তহশিলদার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বুধবার তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পান এবং নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানান, তহসিলদারের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে নির্বাহী কর্মকর্তা ওই দিন দখলদারদের নির্মান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালী দুই দখলদার নির্মান কাজ অব্যহত রাখেন।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার রথখোলা বাসষ্টান্ডের পশ্চিম দিকের দক্ষিন পাশে বরিশালÑগোপালগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ঘেষেই চলছে পাকা ভবনের নির্মান কাজ। এতে কাজ করছেন ৭/৮ জন নির্মান শ্রমিক। পাকা ভবনের নিচের অংশের ভীত ঢালাই দেয়া শেষ করে উপরের অংশের ঢালাইর কাজ চলছে। এসময় সরকারি জমিতে পাকা ভবন নির্মান অবৈধ কিনা জানতে চাইলে একাধিক নির্মান শ্রমিক বলেন, মোরা বৈধÑঅবৈধ বুঝ না। মোরা দিনমজুর হিসেবে কাম করি টাহা পাই। মালিক আদেশ দিছে মোরা কাম করি।
সুজনকাঠী গ্রামের জোনাব আলী (৪৫), ভদ্রপাড়া গ্রামের বিমল বাড়ৈ(৩৮)সহ অনেকেই জানান, সড়কের জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মান করায় সড়ক সম্প্রসারনে কাজ বাধাগ্রস্থ হবে এবং ঝুকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হবে। পাশাপাশি গৌরনদী Ñ আগৈলঝাড়ার প্রধান খালটি থেকে কমপক্ষে ১০ শাখা খালে পানি সরবারহ হয়। ওই খাল থেকে সুজনকাঠী, ভদ্রপাড়া, নবযুগ, গৈলাসহ আশপাশের এলাকার কমপক্ষে ২০টি বোরো প্রকল্পের জমিতে সেচ সরবারহ করা হয়ে থাকে। খালের জমি দখল করায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে বোরো চাষ ব্যহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তারা জরুরিভিত্তিতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।
দখলদার মাসুদ হাওলাদারের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা ওই জমিতে ঘর দুয়ার তৈরী করে ভোগ করেছে বর্তমানে আমি পাকা ভবন নির্মান কাজ করছি। তবে তার কাছে জমির রেকর্ডিয় কোন কাগজপত্র নেই। আরেক দখলদার জহিরুল ইসলামের সঙ্গে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দিলে তা ধরেননি। বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, সওজের জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মানের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নই। লোক পাঠিয়ে খবর নিয়ে দখলের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, সরকারি খাল ও সওজের জমি জনসাধারনের সম্পদ। জনস্বার্থেই ওই সম্পদ ব্যবহৃত হবে। জনস্বার্থেই তা দখলমুক্ত করা হবে। নির্মান কাজ বন্ধের নির্দেশ উপেক্ষা করে পুনরায় কাজ শুরু করেছি বলে শুনেছি। কাজ বন্ধে পুনরায় সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে অইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।