বরিশাল
বরিশালের হিরণের সাথে মৃত্যু হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ আধুনিক বরিশাল নগরীর রূপকার প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর কার্যত তার আমলের বহু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজেরও মৃত্যু হয়েছে। এমনকি তার সম্পন্ন করা কাজগুলোরও সঠিকভাবে সংস্কার কিংবা তদারকি হচ্ছেনা। অথচ তিলোত্তমা নগরী গড়ার মাধ্যমে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র সৃজনশীল নগরী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে অনুন্নত বরিশালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন হিরণ।
সূত্রমতে, বরিশাল নগরবাসীর ভাগ্যের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল। আকস্মিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জনপ্রিয় মেয়র ও সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরণ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মেয়র থাকাকালীন অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন হিরণ। আবার কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পরপরই সেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। বিশেষ করে প্রকল্পগুলো এগিয়ে না নেওয়ায় হিরণ অনুসারীরা ক্ষুব্ধ বর্তমান পরিষদের ওপর। এ প্রকল্পগুলো আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে খোঁদ নগর চিন্তাবিদরাও বলতে পারছেন না। সূত্রে আরও জানা গেছে, হিরণের প্রতি স্নেহের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর পড়েছিলো বরিশাল নগর উন্নয়নের দিকে। আর সেই স্নেহের কারণে মেয়র হিরণ ২০৮ কোটি টাকার বরাদ্দও পেয়েছিলেন। আজ এসব প্রকল্প মাঝপথে পড়ে আছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ তারিকুল হক বলেন, নগরীর আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র হিরণ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে নগরের রূপই পাল্টে যেতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর আমতলার মোড় জিরো পয়েন্ট এলাকায় রাজধানী ঢাকার আদলে সংস্কৃতিচর্চার জন্য একটি মুক্তমঞ্চের কাজ শুরু করেছিলেন প্রয়াত মেয়র হিরণ। ক্ষমতার পালাবদলে গত তিন বছর যাবৎ কাজটি অসম্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। কাশিপুর থেকে রূপাতলী পর্যন্ত চার লেন সড়কের কাজ আমতলা গিয়েই ঠেঁকে আছে। এটি আর সামনের দিকে এগোয়নি। শহরের মধ্যে চাঁপ কমাতে চারপাশ দিয়ে রিং-রোড করার পরিকল্পনাও ছিল হিরণের। সেটিও ফাইলচাঁপা পড়ে আছে। পাশাপাশি শহরের ভারী যানবাহনের চাঁপ কমাতে বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন হিরণ কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া নথুল¬াবাদ থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল গড়িয়ারপাড়ে স্থানান্তর করে নথুল¬াবাদে নগর ভবন নির্মাণ এবং নগরীকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে চারটি আলাদা আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন হিরণ। গড়িয়ারপাড়ে ট্রাক টার্মিনাল ও পৃথক বাস টার্মিনালেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তিনি। মেয়র হিরণের সময়ে কাজ শুরু হওয়া দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প¬্যান্টের সুবিধা আজও পায়নি নগরবাসী। নগরের উত্তরে মহাবাজ থেকে তালতলী বাজার এবং দক্ষিণে কর্ণকাঠী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে সেতুর সংযোগ সড়কের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত নগর পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন হিরণ। নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকার বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প ভেস্তে গেছে। এমনকি রাতের আধাঁরে সেখানকার সাইনবোর্ডটি খুলে নিয়ে বধ্যভূমি সংরক্ষণের সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির একাধিক নেতারা বলেন, এক প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই মেয়র হিরণের নেওয়া এসব উন্নয়ন প্রকল্প মুখ থুবরে পড়েছে। তারা আরও বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর সুবিধার্থে কোনো পরিকল্পনা নিলে ওই মেয়র থাকুক আর নাই থাকুক তা তার অবর্তমানে সম্পন্ন করা উচিত। বিশেষ করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা না থাকলে কার্যকর বা টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বর্তমান পরিষদ এসব উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন নগরবাসী। মেয়র হিরণের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, মেয়র হিরণের চিন্তা-চেতনা ছিলো নগর উন্নয়নের মাধ্যমে পুরো নগরবাসীর জীবনমানের আমূল পরিবর্তন করা। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন কিন্তু আজ তিনি নেই; প্রকল্পগুলোও থমকে আছে। নগরবাসীর সুবিধার্থে এসব উন্নয়নকাজ সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও তিনি উলে¬খ করেন।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সহধর্মিণী জেবুন্নেছা আফরোজ বলেন, হিরণ শুধু একজন রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না। দলমতের উর্ধ্বে তিনি পুরো বরিশালের জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি ছিলেন। একজন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, হিরণের চিন্তা-চেতনায় শুধু নগরের উন্নয়নই ছিলো। কিন্তু তার আসনে যারা অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তারা যদি সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতেন তাহলে এ নগরী হতো দেশের মধ্যে একটি মডেল শহর। এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, সাবেক মেয়র হিরণের প্রকল্পসহ আরও নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এগুলো এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে নতুন-পুরান সব উন্নয়ন প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা হবে।