বরিশাল
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন আগৈলঝাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগররা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মাঘ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার ও নৃত্য কলার দেবী সরস্বতীর পূজা। পূজা উপলক্ষে শীতকে উপেক্ষা করে বিদ্যার আরাধ্য দেবী সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীরা।
জ্ঞানের আলো ছড়াতে অনুষ্ঠিত হবে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা। তাই মৃৎশিল্পীদের পাশাপাশি বাড়িতে নারী শিল্পীদেরও বিশ্রামের সময় নেই। খড়, কাঠ, বাঁশ ও মাটি দিয়ে তৈরী প্রতিমার গায়ে দেয়া হয়েছে প্রলেপ ও রং। আগেই রোদে শুকিয়ে মাটির অলংকার পরানোর কাজ শেষ করেছেন শিল্পীরা।
উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা পাল পাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী শিবু পাল, তার স্ত্রী কল্পনা পাল, একই বাড়ির কানাই পাল, লিটন পাল জানান, সারা বছরই বিভিন্ন দেব দেবীর প্রতিমা বাড়িতে তৈরি করেন তারা। আবার অর্ডার অনুযায়ী বাড়িতে গিয়েও প্রতিমা তৈরী করে থাকেন তারা। তবে বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠিত হবার কারনে মৌসুমের সময় অনুযায়ী তারা প্রতিমা তৈরী করেন। বর্তমানে সরস্বতী প্রতিমাই তৈরির কাজ শেষ করছেন তারা। ১৪ জানুয়ারী বুধবার সকাল থেকে পঞ্চমী তিথি শুরু হয়ে শেষ হবে রাত পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি হিন্দু বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পীরা আরও বলেন, দু’রকমের প্রতিমা তৈরী করেন তারা। ছাঁচে (ডাইস) নির্মিত ও ব্যানায় নির্মিত প্রতিমা। ছাঁচে নির্মিত প্রতিমা ৭০ থেকে ২শ টাকা এবং ব্যানায় নির্মিত প্রতিমা ৭শ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে আসছেন তারা।
বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে অন্তত শতাধিক প্রতিমা তৈরি করেছেন তারা। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পছন্দ মতো প্রতিমা নির্মানের অর্ডার দিয়েছেন। ওই প্রতিমার কাজও শেষ করে তা ডেলিভারী দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। পুরুষ শিল্পীদের সাথে নারী শিল্পীরাও কাজ করছেন দু’হাতে সমান তালে। বুধবার বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনায় নতজানু থাকবে হিন্দু ধর্মালম্বীরা।
স্থানীয় কাজল দাশ গুপ্ত জানান, প্রতিবছরের মতো জ্ঞানের আলো ছড়াতে আবারও এসেছেন বিদ্যার দেবী সরস্বতী। বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎস তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। এবার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মালম্বীরা পালন করবে সরস্বতী পূজা। শাস্ত্র মতে, এদিন দেবীর কাছে বিদ্যার অর্জনের প্রার্থনা করে ভক্তরা। পূজার সময় ভক্তরা প্রিয় দেবীর শ্রীচরণে অঞ্জলি প্রদান করে থাকেন। এছাড়া পুরোহিতের মন্ত্র পড়ার সাথে সাথে উপস্থিত ভক্তরাও সে মন্ত্র মনে মনে পাঠ করতে থাকেন এবং দেবীকে স্মরণ করেন।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুনিল কুমার বাড়ৈ জানান, আসন্ন সরস্বতী পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আগৈলঝাড়া উপজেলায় প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে সরস্বতী পূজা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় প্রতিটি গৃহেই অনুষ্ঠিত হবে । শাস্ত্রীয় মতে আরও জানা যায়, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মেই হয়। তবে এতে কয়েকটি সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে অভ্র-আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শীষ এবং বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল অন্যতম। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত।