বরিশাল
ফলো আপঃ সেই বৃদ্ধাকে ফিরিয়ে নিলেন স্বজনরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭০ বছর বয়সের এক বৃদ্ধা মহিলাকে চিকিৎসা করানোর কথা ফেলে বারিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর বাটাজোর বাসষ্ট্যান্ড টাওয়ারের পাশে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধা মাজেদা বেগমকে বুধবার রাতে ফিরিয়ে নিলেন স্বজনরা। বাড়িতে ফিরতে পেরে বেজায় খুশি মাজেদা বেগম। তবে বৃদ্ধাকে ফিরিয়ে নিতে আসনেনি পুত্র শাহ আলম ও তার স্ত্রী । স্বজনদের দাবি তাকে ফেলে যাওয়া হয়নি। এ নিয়ে ১৯ জুলাই প্রথম আলো অনলাইনেন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
স্থাণীয় লোকজন ও গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭০ বছর বয়সের এক বৃদ্ধা মহিলাকে চিকিৎসা করানোর কথা ফেলে বারিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর বাটাজোর বাসষ্ট্যান্ড টাওয়ারের পাশে ফেলে যায় স্বজনরা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি পর। বৃদ্ধা মাজেদা বেগমের স্বজনদের পরিচয় উদঘাটন ও তাদের অনুসন্ধানে কাজ করে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তিতে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিনকে বিষয়টি অবহিতসহ বৃদ্ধা মাজেদা বেগমের স্বজনদের পরিচয় উদ্ধারে সহযোগীতা চাওয়া হয়। দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন মাজেদা বেগমের স্বজনদের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের খবর দিয়ে গৌরনদীতে পাঠান।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বুধবার রাতে বৃদ্ধা মাজেদা বেগমের মেয়ের ঘরে নাতনি নিলুফা বেগম (৩৮) ও তার চাচাতো মামা গাজী মমিন উদ্ধিন (৫০) গৌরনদীতে আসেন। এ সময় তাদের কাছে মাজেদা বেগমকে হস্তান্তর করা হয়। মাজেদা বেগম স্বজনদের পেয়ে বেজায় খুশি। মাজেদা বেগম খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলেন, মোর বেশী বেশী আনন্দ লাগছে, মুই বাড়ি যাইতে পারমু। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তৌকির আহম্মেদ জানান, মাজেদা বেগম এখন পুরোপুরি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক রয়েছে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস মাজেদা বেগমের স্বজনদের বরাত দিয়ে আরো বলেন, স্বজনদের দাবি অনুযায়ি বৃদ্ধা ভিক্ষা বৃত্তির সাথে জড়িত ছিল । কোন না কোনভাবে এখানে এসেছে। তাকে ফেলে যাওয়া হয়নি বলে স্বজনরা দাবি করেছে।
নাতি নিলুফা বেগম (৩৮) জানান, নাতি মাজেদা বেগম অতি দরিদ্র ও অভাবি। তার দুই মেয়ে ও এক পুত্র রয়েছে। একমাত্র পুত্র শাহ আলম একজন নির্মান শ্রমিক। তিনি যা রোজগার করেন তা দিয়ে তার পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকম মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি দাবি করেন, নানি মাজেদা বেগমকে চিকিৎসার কথা বলে এখানে ফেলে যাওয়া যাওয়া হয়নি, নানি বেশ কিছু দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। নিলুফা এ দাবি করলেও মাকে নিতে আসেননি ছেলে শাহ আলম। স্বজন মমিন গাজী (৫০) জানান, যারা মাজেদা বেগমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে তারাসহ গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি তারা কৃতজ্ঞত । স্থানীয়রা ও প্রশাসন যে কাজটি করেছেন তা মানবিক ঘটনা হিসেবে স্মরনীয় ভয়ে থাকবে। দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন জানান, হতদরিদ্র মাজেদা বেগমকে ভিক্ষুক পূর্নবাসন প্রকল্পের আওতায় পূর্নবাসন তার উন্নত চিকিৎসাসহ একটু ভাল থাকার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাত সাড়ে বারটার দিকে বারিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার বাটাজোর বাংলা লিংক টাওয়ারের কাছে এক বৃদ্ধাকে কাতরাতে দেখে তারা । ওই সময় বৃদ্ধা মাজেদা বেগমের শরীরে প্রচন্ড জ্বর ছিল এবং বৃষ্টিতে ভিজে মারাত্মকভাবে শারীরিক অবনতি ঘটেছিল। পরবর্তীতে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে পাশর্^বর্তী বাংলা লিংক টাওয়ারের গার্ড আব্দুল করিমের সহায়তায় তার গার্ড রুমে নেয়া হয়েছিল। রাত দেড়টার দিকে স্থানীয় মোঃ শিপন তার কয়েকজন বন্ধু মিলে রাত তিনটার দিকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। মোঃ শিপন জানান, বৃদ্ধার দুরাবস্থা দেখে মানবিক কারণে ওই বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাড়িয়েছি। উদ্ধারের পর মঙ্গলবার দুপুরে জ্ঞান ফেরার পর হাসপাতাল বেডে বৃদ্ধা জানিয়েছিল তার নিজের নাম মাজেদা বেগম, স্বামীর নাম চাঁন মিয়া মৃধা ও ছেলের নাম শাহে আলম মৃধা, উপজেলা দশমিনা, জেলা পটুয়াখালী । এ ছাড়া তার ছেলে শাহে আলম মৃধা ও পুত্রবধু তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে এবং ওই স্থানে তাকে রেখে চলে যান ।