বরিশাল
উজিরপুরে উৎকোচ নেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে হামলা, আহত-৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের এক সদস্যর বিরুদ্ধে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উৎকোচ নেওয়ায় বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে শোলক তেঁতুলতলা বাজারে বিক্ষোভ মিছিলে ইউপি সদস্যের সমর্থরা হামলা চালিয়ে ৫ জনকে পিটিয়ে জখম করেছে। এ ঘটনায় কামাল হোসেন বাদি হয়ে মহিলা ইউপি সদস্য তার স্বামী ও দুই সন্তান উল্লেকসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে শুক্রবার উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, ভুক্তভোগী, আহতরা জানান, উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য পার্বতী রানী দাসের (৪৮) বিরুদ্ধে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধীভাতার তালিকাভুক্ত করতে উৎকোচ নেওয়া, উৎকোচ নিয়ে তালিকাভূক্ত না করা, তালিকাভূক্ত করার পরে অতিরিক্ত টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পশ্চিম শোলক গ্রামের রাজ্জাক সরদারের ছেলে লিটন সরদার (৩৫) অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবার বয়স্ক ভাতার তালিকাভূক্ত করতে ইউপি সদস্য পার্বতী রানী দাস আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেন পরবর্তিতে আরো ১ হাজার টাকা দাবী করে। টাকা না দেওয়ায় মহিলা মেম্বরের স্বামী দিরীপ কুমার দাস, ছেলে প্রদীপ ও সজীব দাস আমাকে গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করলে আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে মুখের একটি দাঁত ভেঙ্গে দেয়। বয়স্ক ভাতার তালিকাভূক্ত তালতলা গ্রামের সাহেব আলী সরদার (৫৬) ও শোলক গ্রামের খলিল সরদার (৫৮), রশিদ সরদার (৬২) মোবারক হাওলাদার (৬৮) সুনীল সাধু (৭০) অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার করে টাকা নিয়ে কার্ড দেওয়ার পরে আরো ১ টাকা দাবি করেন। অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর ভয় দেখায়।
যুগীহাটি গ্রামের গ্রামের আদম আলীর ছেলে রহমান আলী হাওলাদার (৩৭) অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবাকে প্রতিবন্ধী ভাতার থালিকাভূক্ত করতে মেম্বরকে ২ হাজার ৫শত টাকা দেই আরো এক হাজার টাকা দাবি করে না দেওয়ায় অকথ্য ভাষায় গলিাগালজ করেছে। পশ্চিম শোলক গ্রামের মৃত সামসু খলিফার স্ত্রী জয়নব বেগম (৫০) অভিযোগ করেন, আমাকে বিধবা ভাতা দিতে মহিলা মেম্বর নগদ ৬ হাজার টাকা নিয়ে কার্ড না দিয়ে তালবাহানা করে। পরে দাবিকৃত আরো ২ হাজার টাকা পরিশোধ করলে আমাকে কার্ড দেয়। প্রতিবন্ধী নিপু চন্দ্র দাস (৩৬) অভিযোগ করে বলেন, আমাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়ার কথা বলে মহিলা সদস্য পার্বতী রানী দাসের স্বামী দিলীপ কুমার দাস (৬০) ২ হাজার টাকা নেয় পরবর্তিতে আরো ২ হাজার টাকা দাবি করে, টাকা না দেয়ায় আমাকে কার্ড দেননি।
হামলা আহত যুগীহাটি গ্রামের কামাল হোসেন হাওলাদার (৪৫) শাহ আলম সরদার (৫০), নুর ইসলামসহ ৫জন ভূক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, সংরক্ষিত ৭, ৮ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য পার্বতী রানী দাসের অনিয়ম, দূর্নীতি ও উৎকোচ নেওয়ার প্রতিবাদে আমরা ভূক্তভোগীরা বৃহস্পতিবার বিকেলে তেতুলতলা বাজারের আশ্রমের সামনে প্রতিবাদ সভা করে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে মহিলা মেম্বরের স্বামী দিলীপ কুমার দাস (৬০), ছেলে প্রদীপ দাস (৩০) ও সজীব দাসের (২৬) নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী দেশীয় ধারাল অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় পিটিয়ে ও কুপিয়ে আমাদের ৫ জনকে জখম করে সঙ্গে থাকা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। আহতদের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। শোলক ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য আফজাল হোসেন খান বলেন, মহিলা সদস্য পার্বতী রানীর বিরুদ্ধে আমার কাছে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করলে আমি বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে পার্বতীকে অনুরোধ করেছি কিন্তু সে কোন কর্নপাত করেনি। মিছিলে হামলা চালালে আমি স্থানীয়দের নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছি।
সংরক্ষিত আসনের সদস্য পার্বতী রানী দাসের স্বামী দিলীপ কুমার দাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হামলা জখমের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি তবে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। পার্বতী রানী অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। প্রতিপক্ষ লোকজন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শোলক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী হুমায়ুন কবির বলেন, হামলার বিষয়টি শুনেছি। উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আহত কামাল হোসেন বাদি হয়ে মহিলা ইউপি সদস্য তার স্বামী ও দুই সন্তানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে গতকাল শুক্রবার থানায় মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।