গৌরনদী
যে গ্রামে ত্রান পৌছেনি, কস্টে কর্মহীন মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হতদরিদ্র। করোনা শুরুর পর থেকে এ গ্রামের খেটে খাওয়া প্রায় সাড়ে ৫ শত পরিবার বেকার হয়ে পরেছে। এখন পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন ত্রান সামগ্রী। খাদ্য সহায়তা চেয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছে খাদ্য সংকটে থাকা মানুষেরা।
জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রাম অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অশিক্ষা ও হতদরিদ্র অধি্যুষিত । এ গ্রামে সাড়ে ৬শত পরিবার রয়েছে তার মধ্যে সাড়ে ৫ শত পরিবার নিন্ম আয়ের হতদরিদ্র পরিবার। যারা দিনমজুর, ভ্যান চালক, অটো চালক ও ভিক্ষা পেশায় জড়িত। গ্রামের তানভীর সোহেল (৪৭) বলেন, গ্রামের মানুষগুলো অভাবি ও হতদরিদ্র। গ্রামের প্রায় সকল মানুষ কাজ করলে চুলায় পাতিল চলে, কাজ না করলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকতে হয়। করোনার কারনে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তাদের খবর নেয়নি কেউ। খুবই কষ্টে আছে গ্রামের সাড়ে ৫ শত হতদরিদ্র পরিবার।
সরেজমিনে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ঘুল্লিরপাড় চায়ের দোকানে অলস বসে আছে কয়েকজন কর্মহীন মানুষ। তারা জানান পাশ্ববর্তি মাদারীপুরে করোনা ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিলে গৌরনদীর স্থানীয় প্রশাসন গৌরনদী-কালকিনি সীমান্তবর্তী সকল সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে একমাস যাবত তারা বেকার । পরবর্তি বরিশাল জেলা প্রশাসক বরিশালকে লকডাউন ঘোষনা করায় তারা কোন কাজ কর্ম করতে পারছেন না । বাহিরে গেলে পুলিশ লড়ায়। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে খুবই কষ্টে আছেন। গ্রামের কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোগো গ্রামডা খয়রাতি, অভাবি হেইয়ার লাইগ্যা কেউ মোগো খবর নেয় না। মোরা খাইয়া আছি, না মইররা গেছি কেউ জানতে আহে না। দিন মজুর ইদ্রিস তালুকদার (৫০) বলেন, মুই মাটি কাটা কামলা খাইট্টা চাউল ডাইল কিন্না পোলাপান লইয়া ডাইল ভাত খাইয়া কোন রহম দিন কাটাইতাম। কাম কাইজ বন্ধ অইয়া যাওয়ায় বউ পোলাপান লইয়া না খাইয়া কষ্টে আছি। ২/৩ দিন চুলায় পাতিল ওডে (উঠে) না।
সিদ্দিকুর রহমান (৫২) বলেন, কাম কাইজ নাই খাইিতে পারি না। ঘরে বহা (অলস) কি কইররা পোলাপান লইয়া বাঁচমু। মোগো গ্রামে কেউ সাহায্য দেয় নাই । ভিক্ষুক হনুফা বেগম (৫৪) বলেন, মাইনসের দুয়ারে যাইতে পারি না, খাওনও জোটে না। ঘরে যে ভিক্ষার চাল ছিল হেইয়া খাওয়া শেষ অইয়া গেছে। এ্যাহন মুই কি খামু? ভিক্ষুক ফজিলাতুন নেছা (৪৫) বলেন, পুত নাই পরিজন নাই চাইয়া চিন্তা খাই, এ্যাহন ঘইরদা বাইর অইতে পারি না, না খাইয়া কষ্টে আছি। পাশের গ্রামে রিলিফ দেয় হুইননা গেছি হারাদিন খাড়াইয়া থাইক্কা খালি হাতে বাড়ি আইছি। অটো চালক সাইদুল (৩৫) দিন মজুর শহিদুল (৩৩), বাহারদুর (৪৫) ভ্যান চালক লিটন মিয়া (৪১) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রিলিফ দিয়া বলে ভাসাইয়া দিছে তয় মোগো গ্যারামের মোরা কেউই কিছু পাই নাই। গ্রামের অনাহারি মানুষেরা জেলা প্রশাসকের কাছে ত্রানের আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বেপারী বলেন, মুই গৌরনদীর সবচেয়ে খয়রাতি গ্রামের মেম্বর। এর্যাহন পর্যন্ত মোর গ্রামে সরকার কিছুই দেয় নাই। খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ নুর আলম সেরনিয়াবাত বলেন, বাদুরতলা গ্রামের মানুষ হতদরিদ্র। বেশীর ভাগ মানুষ দিন মজুর ও ভিক্ষা পেশায় জড়িত। করেনার প্রভাবে কর্মহীন এই মানুষগুলোকে কোন সাহায্য দিতে পারি নাই । তারা খুবই কষ্টে আছে ।