গৌরনদী
স্বপ্নডাঙ্গা ভেঙ্গে দিল দুই হাজার হতদরিদ্র পরিবারের স্বপ্ন
জহুরুল ইসলাম জহির ঃবরিশালের আগৈলঝাড়ায় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) স্বপ্নডানা নামের একটি প্রতিষ্ঠান হতদরিদ্র মানুষকে বসতঘর ও খাবার দেয়ার প্রলোভনে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, গৌরনদী ও কোটালীপাড়া উপজেলার দুই হাজার হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা সর্বষ্য হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী পরিবার ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খৃষ্ঠান অধ্যুষিত এলাকা আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের মরান্দিরপাড় গ্রামে গত ১৪ নভেম্বর স্বপ্নডানা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) কার্যক্রম শুরু করেন। ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগাতে এই প্রতারকচক্র সংস্থার সদস্য কার্ডে যীশু খ্রীস্টের ছবি সম্মিলিত রেজিষ্টেশন নম্বর হিসেবে ১৯৮৬ লেখা রয়েছে। এই প্রতারকচক্র সুবিধাগোভীদের প্রলোভনে ফেলতে আগৈলঝাড়া উপজেলার মরান্দিরপাড় পিরাতিক র্গীজায় সভা করতেন। সংস্থাটি পরিচালণায় স্থানীয় সায়মন বিশ্বাস পরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় প্রধান রিচার্ড রায় এলিও তার স্ত্রী বিউটি সরকার, খুলনা বিভাগীয় প্রধান মেরী বিশ্বাস নিজেদের উপ-পরিচালক পরিচয় দেন। এসব কর্মকর্তারা বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিদের আকর্ষনীয় বেতনে মাঠি কর্মি নিয়োগ দেয়ার কথা বলে আবেদনপত্র জমা নেন এবং চার উপজেলায় মার্টিন রায়, মিতালী সরকার, রিনা রায়, পিন্টু সমদ্দার, রিনা বৈজ্ঞব, তৃজ্ঞা হুর, নিত্যনন্দা বাড়ৈসহ ৮জনকে মাঠ কর্মকর্তা পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগদেন। এসব মাঠ কর্মীরা বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার মরান্দিপাড়, ছবিখারপাড়, আস্কর, জোবারপাড়, স্বরবাড়ি, নাঘিরপাড়, বড়মগরা, বাগধা, বাকাল, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়ি, পীরেরপাড়, গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ও উজিরপুর উপজেলার পটিবাড়ি, ইন্দুরকানী, কুড়ালিয়া গ্রামসহ আশপাশের ৫০টি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ২২৯ জন সদস্যেকে আধাপাকা ঘর দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিটি পরিবারের কাছ তেকে ২০ হাজার টাকা করে এবং চাল, ডাল, আটা, চিনি ও তৈল দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ১৫৩২জন সদ্যস্যের কাছ থেকে ২০৪০ টাকা করে উত্তোলন করে কর্মকর্তাদের কাছে জমা দেন। এক মাসের মধ্যে কোটি হাতিয়ে নিয়ে এনজিওটির পরিচালক সায়মন বিশ্বাস, খুলনা বিভাগীয় প্রধান মেরী বিশ্বাস, বরিশাল বিভাগীয় প্রধান রিচার্ড রায় এলিও ও তার স্ত্রী বিউটি সরকার গা-ঢাকা দিয়েছে।
মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত স্থানীয় রিনা রায় অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক পরিচালকগন আমাদেরকে বড় বেতনের অফার দিয়ে চাকুরীর কথা বলে আমাদের দিয়ে মাঠে কাজ করান কিন্তু লিখিত নিয়োগ দেননি। কর্মকর্তাদের কথামত আমরা মাঠ পর্যায়ে হতদরিদ্র পরিবারকে বিভিন্ন আকর্ষনীয় লোভ দেখিয়ে টাকা তুলে তাদের একাউন্টে দিয়েছি। হঠাৎ তারা ফোন বন্ধ করে উধাও হয়ে গেছে। এখন আমরা সদস্যদের চাপে আছি। মাঠ কর্মী জন রায় বলেন, ৪শত ৯৮জন সদস্যের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ ২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আমি পরিচালক সায়মন বিশ্বাসের বিভিন্ন বিকাশ একাউন্টে পাঠিয়েছি। মাঠকর্মী নিত্যনন্দা বাড়ৈ বলেন, ১শত ১৪ জন সদস্যের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন পরিচালক মেরী বিশ্বাসের নির্দেশে পরিচালক সায়মন বিশ্বাসের কাছে পাঠিয়েছি। আরেক মাঠকর্মি ম্যাথিউ রায় বলেন, আমি ২৫০জন সদস্যদের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে পরিচালক সায়মন বিশ্বাসের বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে প্রেরন করেছি।
সুবিধাগোগী সদস্য আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামের অতুল বালার স্ত্রী গোলাপী বালা অভিযোগ করে বলেন, জীর্নশীর্ন বসতঘরে ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে পুড়ে পোলাপান লইয়া থাকতে হয়। হেইয়ার লাইগ্যা এক খানা ঘর পাওয়ার আশায় ধার দেনা কইররা সুদে টাহা আইন্না ২০ হাজার ও চাউল আটা পাওয়ার আশায় ২হাজার ৪০ টাহা দিছি। এ্যাহন মুই কি দিয়া দেনা দিমু। উজিরপুর উপজেলার কুড়ালিয়া গ্রামের সন্টু বাড়ৈর স্ত্রী আলোমতি বাড়ৈ বলেন, লোভে পইররা ঘর পাওয়ার লাইগ্যা টাহা দিছি হেই এনজিও উধাও অইয়া গেছে। মোর সব শেষ অইয়া গেল। জোবারপাড় গ্রামের সুশান্ত বালার স্ত্রী সঞ্জিতা বালা বলেন, মোগো লগে প্রতারনা করবে হেইয়া বুঝতে পারি নাই। দেণা অইয়া ঘর পাওয়ার লোভে ২০ হাজার টাহা দিছি । এ্যাহন পাওনাদের কি দিয়া দেনা দিমু।
আগৈলঝাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা এ প্রসঙ্গে বলেন, এনজিওটি’র কোন রেজিষ্টেশন নম্বর নেই। যে রেজিষ্টেশন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তা ভুয়া। কথিত এনজিওর সদস্য, হতদরিদ্রদের কাছে নেওয়া টাকা আগামি ১০ দিনের মধ্যে সদস্যের মাঝে ফেরত দেওয়ার জন্য মাঠ কর্মিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। টাকা ফেরত না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওযা হবে। স্বপ্নডানার খুলনা বিভাগীয় প্রধান মেরী বিশ্বাসের কাছে াভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি না বুঝে খুলনার দায়িত্ব নিয়ে ৪শত সদস্যের কাছ থেকে টাকা তুলে এনজিওর পরিচালক সায়মন বিশাসকে দিয়েছি। আমি নিজেও প্রতারনার শিকার হবো তা বুঝতে পারি নাই। এনজিও স্বপ্নডানার পরিচালক সায়মন বিশ্বাসের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।