গৌরনদী
গৌরনদীতে প্রধান শিক্ষককের অপসারনের দাবিতে এক ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ, হাজারো মানুষের দূর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের মাহিলাড়া এ,এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রনয় কান্তি অধিকারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে অপসারনের দাবিতে রোববার দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাহিলাড়া বাসষ্টান্ডে এক ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে দুই পাশে কয়েক শত দুরপাল্লার বাস আটকা পরে সাধারন যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়। দুপুর ১টার দিকে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট প্রত্যহার করে নেন।
দুপুর ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক আটকে অবরোধ করেছে মাহিলাড়া এএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকরা। এর সাথে সংহতি প্রকাশ করে অবরোধে অংশ নিয়েছে পাশ্ববর্তি মাহিলাড়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ শত শত এলাকাবাসি। অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে কয়েকশ দুরপাল্লার বাস ও যানবাহন আটকা পড়েছে। এতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারো যাত্রীকে। মহাসড়কে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মোঃ সাগর সিকদার, মোঃ রানা হাওলাদার। এ সময় স্থানীয় লোকজন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, গৌরনদীর মাহিলাড়া এ,এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সালের ১৩ আগষ্ট প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার প্রনয় কান্তি অধিকারী। যোগদানের পরে সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাপট দেখিয়ে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী করেন এবং দাপট দেখিয়ে স্কুলে কার্যক্রম পরিচালনায় অনিয়ম, দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা করে এক ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিনত হন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক প্রনয় কান্তি অধিকারী বিদ্যালয় পরিচালণা কমিটিরকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে নিজের একক সিদ্বন্তে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করত। গত ১২ বছরে প্রতিটি এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনে অতিরিক্ত ফি নির্ধারন করে পরিশোধে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করত। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রভারানীর অসুস্থ্যতার থাকা কালীন সময়ে বিদ্যালয়ের অংশ তো দেননি করং সরকারি অংশের টাকা থেকে প্রধান শিক্ষক প্রায় ৪ বছর ধরে প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা নিজে নিয়ে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া ২০২০ সালে দূর্নীতি দমন কমিশন থেকে বরাদ্দকৃত “সততা ষ্টোরের” দুই কিস্তির ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। ওই বছর ইউনিক আইডি তৈরী করার নামে ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন পরবর্তিতে ইউনিক আইডির সকল ব্যায় সরকার বহন করলে শিক্ষর্থীদের ৫০ হাজার টাকা আত্মসাধ করেছে। প্রতিবছর একটি বিশেষ প্রকাশনীর বই পাঠ্য তালিকাভূক্ত করে প্রাাপ্ত অর্থ নিজেই আত্মসাত করেছে। এমনিভাবে প্রনয় কান্তি অধিকারী কোটি কোটি টাকা স্কুল থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে ১০ টি অভিযোগ করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাগর সিকদার, রুদ্র দত্ত, রুহুল আমিন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রনয় কান্তি অধিকারী গোপালগঞ্জের ক্ষমতার দাপটে গত ১২ বছর মানুষকে মানুষ মনে করেনি। বিস্তর দূর্নীতি ছাড়াও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে দূর্বব্যবহার করেছে। কমিটির সঙ্গে অশালীন আচরন করেছে। স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব কায়েম করে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এবং তহবিল তসরুপ করেছে। এর প্রতিবাদ করলে প্রনয় কান্তি অধিকারীর নিজের তৈরী সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারধর নির্যাতনসহ অত্যাচার করেছে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। অভিভাবক আব্দুল মান্নান (৬৫), আমিনুল ইসলাম (৫৫) অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকে ইচ্ছা মাফিক স্কুল পরিচালনা করেছেন এবং ইচ্ছামত অর্ত ধার্য্য করেছেন। আমরা প্রতিবাদ করলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমাদের সাথে অশ্লীল অশোভন আচরন করেছেন। এমন কি গায়ে হাত তুলেছেন। বিদ্যালয়ের সিনিয়ন সহকারী শিক্ষক মোঃ ইউসুফ হোসেন খন্দকার অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সহকর্মির সাথে তার কেনা গোলাম সুলভ আচরন করেছেন। তার দূর্নীতি নিয়ে কথা বললে সকলকে চাকুরীচ্যুত করার ভয় দেখাত। তার অত্যাচারে শিক্ষর্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসি অতীষ্ঠ। আজকে তাকে প্রত্যহার ও বরখাস্ত করার দাবিতে সব মাঠে আন্দোলন করছে। আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী রানা হাওলাদার বলেন, অনতিবিলম্বে প্রধান শিক্ষক প্রনয় কান্তি অধিকারীকে প্রত্যাহার ও চাকুরীচ্যুত করতে হবে। নতুবা লাগাতার বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত ও প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করলে দুরপাল্লার বাস আটকা পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরবর্তি সেনা বাহিনীর সহায়তায় দাবি পুরনের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে কর্মসূচী প্রত্যহার করে নেন এবং দুপুর ১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগুলোর তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।