বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্যক্ত ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে একই অফিসের উচ্চমান সহকারী হিসাব রক্ষক রীতা রানী বিশ^াসকে উত্যক্ত, কু-প্রস্তব ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৭ জুলাই রীতা রানী বিশ্বাস কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পরে ১১ জুলাই বরিশাল জেলা কৃষি প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমাদদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও কৃষি কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, ২০০৯ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন সুভাষ চন্দ্র মন্ডল। ১৫ বছর ধরে সে একই স্থানে চাকুরী করার সুবাদে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সাথে সখ্যতা তৈরী হওয়ায় সহকর্মিদের সঙ্গে সব সময় দাপটের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরন করে থাকেন। ২০২১ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে উচ্চমান সহকারী হিসাব রক্ষক হিসেবে যোগদান করেন রীতা রানী বিশ্বাস । যোগদানের পর থেকে উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল তাকে উত্যক্ত, কু-প্রস্তব দিয়ে আসছিল।
রীতা রানী বিশ্বাস লিখিত অভিযোগে বলেন, আমি আগৈলঝাড়ায় যোগদানের পর থেকে উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল আমাকে উত্যক্ত শুরু করে। ২০২৩ সালের জুন মাসে আমার স্বামী প্রভাষক অসিত বরন চৌধুরী অসুস্থ্য হয়ে মারা যাওয়ার পর উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল অফিস চলাকালীন সময়ে আমার অফিস কক্ষে ঢুকে নানানভাবে বিরক্ত ও মানষিকভাবে চাপে রাখেন এবং অবাঞ্চিত কথা জিজ্ঞাসা করে কু-প্রস্তাব দেয়। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে অশ্লীলভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি আমি একা কক্ষে কাজে থাকলে কোন লোকজন অফিসে না থাকলে সে আমাকে শ্লীলতাহানি করে। রীতা রানী বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, যোগদানের পরে উত্যক্ত করলেও আমার স্বামী মারা যাবার পর থেকেই সুভাষ আমাকে বেপরোয়াভাবে উত্যক্ত করে ও একাধিকবার শ্লীলতাহানীর ঘটায়। আমি তাকে অনেকবার অনুনয় বিনয় করে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। বিষয়টি আমি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করেও কোন ফল পাইনি। নিরুপায় হয়ে আমি কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
অভিযোগের ব্যাপারে উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রীতা রানীর সাথে আমার অফিসের কিছু কার্যক্রম নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে উত্যক্ত ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ সঠিক না। আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় বলেন, ঘটনাটি পুরানো তবে আমি যোগদানের পর আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তাছাড়া উচ্চমান সহকারী হিসাব রক্ষক রীতা রানী বিশ^াস কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করায় বরিশাল জেলা কৃষি প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ মরিয়মকে প্রধান করে ও উজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও বানরীপাড়া কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তাসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিহা তানজিন এ প্রসঙ্গে বলেন, কৃষি অফিস থেকে বিষয়টি আমাকে অবহিত করা হয়নি। আপনাদের কাছেই শুনলাম খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও বরিশাল জেলা কৃষি প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ মরিয়ম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরে কমিটির সদস্যদের নিয়ে তদন্ত শেষ করেছি এবং সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সিদ্বান্ত গ্রহনের দায়িত্ব উর্ধতন কর্তৃপক্ষের। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি (মরিয়ম) বলেন, কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিলেই বিষয়টি জানতে পারবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, তদন্তে উচ্চমান সহকারী হিসাব রক্ষক রীতা রানী বিশ^াসের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে।