বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় আওয়ামীলীগ নেতার দায়ের করা গায়েবী মামলায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মি আসামি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পয়সারহাট সেতুর পূর্ব পাশে বাজারের নিকট বোমা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা দেখিয়ে আওয়ামীলীগ নেতার দায়ের করা গায়েবী মামলায় আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মিকে আসামি করে শুক্রবার রাতে আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম পাইক বাদি হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০/৮০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সরোয়ার হোসেন মিয়া (৫৫), আবুল হোসেন মোল্লা (৫০), শাহ মোঃ বক্তিয়ার (৫২), মোঃ শামছুল হক খোকন, খোন্দকার মোহাম্মদ আলী (৩৬), মোঃ জাহিদ মোল্লা সানিয়াত (৫৭), বাকাল ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ হান্নান মিয়া (৫২), জিকরিয়া খান (৫০), বাগধা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মোঃ রেজাউল ফয়েজ (৪২), বাগধা ইউনিয়ন বিএনপির ৪নং ওয়ার্ড কমিটির আহবায়ক মোঃ এমদাদুল হক বক্তিয়ার (৫৮), গৈলা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মোঃ এনায়েত হোসেন (৫১), রতœপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মোঃ মিজানুর রহমান (৫০), সদস্য সচিব মোঃ মিজান শাহ (৫৫), বরিশাল জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আলী হোসেন স্বপন (৫২), আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শোভন রহমান (৫২), উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মোঃ সালমান হাসানন রিপন (৫১), রতœপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হাসান কাজী (৪৭), যুবদল বাকাল ইউনিয়ন আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ আকবর ফকির (৩৮), বাকাল ইউনিয়ন যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম পাইক (২৮), বাগধা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোঃ লুৎফর রহমান ভাট্রি (৪৬), আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোঃ জুয়েল মোল্লা (৫১), আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মোঃ মহিদুল মোল্লা (৩৫), যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আলাল মৃধা (৪০) ও আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোঃ হেমায়ত হোসেন তালুকদার (৪৯)।
মামলার বাদি উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম পাইক এজাহারে উল্লেখ করে বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৬টার দিকে আমি স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতা বিপুল দাস (৪৮), ফিরোজ সিকদার (৫৫), রাজ্জাক শেখ (৩৫)সহ ১৫/২০ নেতাকর্মিদের নিয়ে পয়সার হাট আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে সভা শেষ করে আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক সড়কের পয়সারহাট সেতুর পূর্ব পাশে বাজারের নিকট পৌছলে জামাত ও বিএনপির এজাহারে উল্লেখিত নামীয়সহ শতাধিক সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদের দেখতে পাই। তারা সরকারি সড়কে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে টায়ার জ¦ালিয়ে গাড়িতে আগুন দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় আমরা ডাক চিৎকার দিলে সন্ত্রাসীরা ৩/৪টি বোমা নিক্ষেপ করে সটকে পড়ে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ধরনের কোন আলামাত পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের কাছে রাতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখানে সহিংতা ও বোমা হামলার ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। এ পয়সারহাট সেতু সংলগ্ন বাজারের তিন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এজাহারে উল্লেখিত সময়ে এখানে কোন ঘটনা ঘটেনি। বা আমরা বোমার কোন শব্দ পাইনি। আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক বরিশাল জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ আবুল হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের হামলা মামলা নির্যাতনে বিএনপি নেতাকর্মিরা এলাকাছাড়া । নেতাকর্মিও এলাকায় থাকতে পারে না। অথচ বিনা ঘটনায় হামলা ভাংচুর, আগুন ও বোমা হামলার মিথ্যা ঘটনা দেখিয়ে শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মিদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা করেছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্কালে বিএনপি নেতাকর্মিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে দুরে সরিয়ে রেখে এক তরফা নির্বাচন করতেই এ গায়েবী মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদি আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ শহিদুল ইসলাম পাইক প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুনীল কুসমার বাড়ৈপ্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির অভিযোগের কোন সত্যতা নাই, বিএনপির সন্ত্রাসীরা ঘটনা ঘটিয়েছে বলেই মামলা হয়েছে। আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাজাহারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম পাইক বাদি হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০/৮০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। ঘটনাস্থলে ঘটনার আলামত না পাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
উল্লেখ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্কালে ২০১৮ সালের একই দিনে (৩ নভেম্বর ) আগৈলঝাড়া বিএনপির প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মিকে আসামি করে তিনটি গায়েবঅ মামলা দায়ের করা হয়েছিল।