গৌরনদী
ঘেরে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন, হারিয়ে গেল শতাধিক যুবকের স্বপ্ন, মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুরে একটি মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পটিবাড়ী-কুড়লিয়া মৎস্য ঘের প্রকল্পের পরিচালণা কমিটির সদস্য সৈকত মন্ডল বাদি হয়ে প্রতিপক্ষ হরষিত মন্ডল ও সঞ্জিত মন্ডলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে আসামি করে শুক্রবার উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
এজাহারে বলা হয়, উজিরপুর উপজেলার সাতলা ও জল্লা ইউনিয়নের স্থানীয় কর্মহীন ও বেকার যুব সমাজ গত দশ বছর ধরে সাতলা ও জল্লা ইউনিয়নের পটিবাড়ী-কুড়লিয়া মৎস্য ঘের প্রকল্প নামে ৩০ একর জমি লিজ নিয়ে মাছের ঘের করে মৎস্য চাষ করে আসছিলেন। শুরু থেকেই পটিবাড়ি গ্রামের মৃত হরিমোহন মন্ডলের পূত্র হরশিত মন্ডল ও তার ছোট ভাই সঞ্জিত মন্ডল এই মৎস্য ঘেরের বিরোধীতা করেন। বিভিন্ন সময় তারা মৎস্য ঘেরের ক্ষতি সাধনের হুমকি দেন। যা উজিরপুর থানায় একাধিক সাধারন ডায়রী করা হয়। হরশিত মন্ডল ও তার ছোট ভাই সঞ্জিত মন্ডল দলবল নিয়ে বুধবার জোরপূর্বক ঘেরে মাছ ধরে নেওয়ার চেষ্টা করলে প্রকল্পের সুবিধাভোগাীদের বাধা দেন এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে ১০ লাখ টাকার মৎস্য নিধন করেছে।
পটিবাড়ী-কুড়লিয়া মৎস্য ঘের প্রকল্পের পরিচালণা কমিটির সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশ অভিযোগ করে বলেন, ঘেরে জোরপূর্বক মাছ ধরতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষ হরশিত মন্ডল ও তার ছোট ভাই সঞ্জিত মন্ডল প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন। বৃহস্পতিবার রাতে হরশিত মন্ডল ও তার ছোট ভাই সঞ্জিত মন্ডল দলবল নিয়ে ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে চিতল, কাতল, রুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১০ লাখ টাকার মাছ নিধন করেছে। প্রকল্পের সাধারন সম্পাদক মোঃ সালেক মিঞা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ১৫ বছর বিদেশে শ্রমিক হিসেবে হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনী খেটে কাজ করে আয়কৃত অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এলাকার ১৬ বিঘা জমি নিজের নামে কিনেছি এবং এলাকার আরো শতাধিক বেকার যুবকদের নিয়ে পটিবাড়ী-কুড়লিয়া মৎস্য ঘের প্রকল্প নামে মাছ চাষ শুরু করেছি। গত ১০ বছর যা আয় রোজগার হয়েছে। তা দিয়ে আমরা সবাই বেকারত্ব দুর করে ভালই ছিলাম কিন্তু আমাদের ভাল থাকায় ঈর্শান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ হরশিৎ মন্ডল ও তার লোকজন ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে সব শেষ করে দিল। নিভিয়ে দিল শতাধিক বেকার ও যুবকদের সোনালী স্বপ্ন। ঘেরের সদস্য ও আগৈলঝাড়ার রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জল কুমার মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালীন সময়ে এলাকার বেকার যুবকদের মাচ চাষে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। তারই অংশ হিসেবে এলাকার শতাধিক বেকার ও চাকরী হাড়ানো যুবকরা মিলে মাছ চাষ করেছে। কিন্তু মৎস্য ঘেরের মধ্যে থাকা সকল জমির মালিক মাছ চাষে একমত হলেও বিরোধিতা করেন স্থানীয় প্রভাবশালী হরশিত মন্ডল ও তার সহদর সঞ্জিত মন্ডল । তারা বিষ প্রয়োগ করে শতাধিক যুবক ও বেকারের স্বপ্ন শেষ করে দিছে। আমরা হরশিত মন্ডল ও তার সহদর সঞ্জিত মন্ডলসহ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে বিষ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করে হরশিত মন্ডল ও তার সহদর সঞ্জিত মন্ডল বলেন, ৩০ একর মৎস্য ঘেরে মধ্যে আমার একটি ডোবা রয়েছে । বিগত দিনে মৎস্য প্রকল্পের আমি সদস্য ছিলাম বর্তমানে আমি থাকবো না। থাকতে অনুরোধ করলে অমি তাতে রাজি হইনি, এ নিয়ে বিরোধ আছে কিন্তু বিষ প্রয়োগের ঘটনায় আমরা জড়িত নাই। সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন হাওলাদার এ প্রসঙ্গে বলেন, পটিবাড়ী-কুড়লিয়া মৎস্য ঘের প্রকল্পের মধ্যে হরশিত মন্ডলের সামান্য কিছু জলাশয় রয়েছে এ নিয়ে সদস্যদের সাথে হরশিত মন্ডলের বিরোধ চলছিল। বিরোধ মিাংসার জন্য সাতলা ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক করেছি। আমিসহ বৈঠকে সর্বসম্মতি সিদ্বান্ত মোতাবেক হরশিতকে ২০ হাজার টাকা দেয়ার কথা হয়। ঘেরের শতাধিক সদস্যরা সবাই সিদ্বান্ত মেনে নিয়ে উক্ত টাকা দিলেও হরশিত মন্ডল তা মানেননি। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলী আরশাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘেরে বিষ প্রয়োগের খবর শুনই আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনায় পটিবাড়ী-কুড়লিয়া মৎস্য ঘের প্রকল্পের পরিচালণা কমিটির সদস্য সৈকত মন্ডল বাদি হয়ে হরষিত মন্ডল ও সঞ্জিত মন্ডলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।