বরিশাল
উজিরপুরে নির্মানাধীন সেতুর দুটি গার্ডার ভেঙ্গে নদীতে বিলীন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের সাতলা-চৌমোহনী সড়কের কঁচা নদীতে এলজিইডিরি নির্মানাধীন সেতুর দুটি পিসি গার্ডার (৯০ মিটার) শনিবার দুপুরে আকস্মীক ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। এতে সেতুতে কাজে নিয়োজিত তিন শ্রমিক গুরুতরভাবে আহত হয়। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন সেতু ভেঙ্গে পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে এলাকাবাসি। তাদের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়ম দূর্নীতির কারনে প্রকল্পের শেষ প্রান্তে সেতুর গার্ডার দুটি ভেঙ্গে গেছে।
বরিশাল এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত পল্লি অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করন ও বিল অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকারর বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের সাতলা-চৌমোহনী সড়কের কঁচা নদীতে সেতু নির্মানের সিদ্বান্ত নেন। বরিশাল এলজিইডি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৪০৫ মিটার দৈর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মানের জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করে। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে দরপত্র আহবান করে। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স কহিনুর এ্যান্ড কোং ও ওটিবিএলজেবির অনূকূলে কার্যাদেশ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করে নির্মান কাজের উদ্ধোধন করেন। কার্যাদেশ অনুযায়ি ২০২০ সালে নির্মান কাজ শেষ করার কথা থাকলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করে সময় বৃদ্ধি করেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় রুহুল আমিন, মাছুম হাওলাদার, জাহাঙ্গীর শেখ অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকেই অনিয়ম ও দূর্নীতিসহ নির্মান কাজে নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করে আসছিল। বিষয়টি আমরা একাধিকবার উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করলে তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় রমনী কান্ত বাড়ৈ, সাহেরা বেগমসহ স্থানীয় কয়েকজন জানান, শনিবার দুপর আড়াইটার দিকে সেতুর নির্মান কাজ চলছিল হঠাৎ আকস্মীক বিকট শব্দে সেতুর মাঝখানের ৪৫ মিটারের পিসি দুটি গার্ডার (৯০ মিটার) ভেঙ্গে নদীর মধ্যে পড়ে যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন ও নির্মান শ্রমিকদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। গার্ডার ভেঙ্গে পড়ে তিন জন শ্রমিক গুরুতরভাবে আহত হন। এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগামি ডিসেম্বরের আগে নির্মান কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে উদ্ধোধনের লক্ষ্য নিয়ে তরিঘড়ি করে নির্মান কাজ চলছিল। ইতোমেধ্যই সেতুর ৪টি গার্ডার ঢালাইসহসহ মূল সেতুর প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষের পথে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনাকাঙ্খিতভাবে নকশার কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে নির্মানাধীন সেতুটির গার্ডার ভেঙ্গে থাকতে পারে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিককে ফোন দিলে তিনি তা রিসিপ করেননি। তবে ওটিবিএল কোম্পানীর প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম অনিয়ম-দূর্নীতি ও নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেতুর ৪টি গার্ডার স্থাপন করা হয়েছিল। শনিবার দুপুরে ক্রেনের মাধ্যমে ৫ গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের যান্ত্রক ত্রæটির কারনে পূর্বে স্থাপিত গার্ডারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাঝখানের দুটি গার্ডার ভেঙ্গে নদীর মধ্যে পড়ে যায়। এটি একটি দূর্ঘটনা ছাড়া কিছুই না। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে ফোন করলে তিনি অসুস্থ্যতার কথা জানিয়ে ফোন রেখে দেন। উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মীর মহিদুল ইসলামকে অসংখ্যবার ফোন দিলে তিনি তা গ্রহন করেননি পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সারা মেলেনি। এক পর্যায়ে ফোন বন্ধ করে দেন। বরিশাল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ খলিলুর রহমানের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাঝের দুটি গার্ডার ভেঙ্গে নদীতে পড়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, লিফটিং শিপটিংএর সময় জ্যাক সিলিপিং করেছে ফলে দুটি গার্ডার ভেঙ্গে নদীতে পড়েচে। তবে এতে মূল সেতুর কোন ক্ষতি হবে না। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হবে এবং ঠিকাদার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাছাড়া সেতুর ভেঙ্গে পড়া অংশের বিল ঠিকাদারকে পরিশোধও করা হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রকল্পস্থান নির্বাচন করতে বিলম্বসহ কিছু বিষয়ে নকশাও পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফলে আগামি ডিসেম্বরে উদ্ধোধনের কথা থাকরেও তা সম্ভব হচ্ছে না।