বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় শব্দ দূষণে অতিষ্ট মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শব্দ দূষণে অতিষ্ট হয়ে পরেছে উপজেলার সাধারন মানুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহন, মটরসাইকেল, মাহিন্দ্রা, বাস, ট্রাকে অতিমাত্রায় হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়। প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ নাগরিক সমাজের। নীরব ঘাতক ভয়ানক ক্ষতিকর শব্দ দূষন থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান সচেতন নাগরিকেরা।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পু, অটো রিক্সা, অটো গাড়ী, টমটম, মাহেন্দ্রা ও থ্রিহুইলারের হাইড্রোলিক হর্ন এর মাধ্যমে শব্দ দূষণ হয়। এছাড়াও রোগীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকের নামে প্রচার, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্রয়লার মুরগি, মাছ, মাংস, সবজি বিক্রিসহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। এতে উপজেলা শহরে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রনাদায়ক। শব্দ দূষণের কারনে মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে প্রতিনিয়ত হাইড্রোলিক হর্ন ও বিভিন্ন প্রচার মাইকের শব্দে অতিষ্ট হয়ে পরেছে হাসপাতালের রোগী ও সামনে থাকা ব্যবসায়ীরা। শব্দ সৃষ্টি করাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়েছে। বিধিমালায় উল্লেখ আছে, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সকল জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য একমাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ সকল নিয়ম নীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকে প্রচার ও বিভিন্ন গাড়ীর হাউড্রোলিক হর্ন অহরহ বেজে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক শব্দ দূষণ হচ্ছে। যে কোন উপায়ে শব্দ দূষণ রোধ করতে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজল দাশ গুপ্ত বলেন, উপজেলার বেশির ভাগ সড়কেই অহরহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা ও গাড়ীর হাউড্রোলিক হর্নের কারনে বসবাস করা এখন খুবই কষ্টদায়ক। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও ইজিবাইক চলাচল করে। এসব রিক্সা ও ইজিবাইকে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয় যা সহ্য করা কষ্টসাধ্য। প্রশাসনের কাছে শব্দ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শিশির কুমার গাইন জানান, শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী, কোথাও কোনো হাসপাতাল থাকলে সেটি ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। এই উপজেলা হাসপাতালে শত শত রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নেন। মুমূর্ষু রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। কিন্তু নানা রকম যানবাহনের মুহুর্মুহু হর্নের আওয়াজে রোগীদের গুরুতর অবস্থা হয়। অতিরিক্ত হর্ন বাজানো এসব স্থানে যারা বসবাস করছেন, তাঁরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, শব্দ দূষণের কারনে শ্রবণ শক্তি ও মেমোরি কমে যায়। কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের কারোনারি হার্ট ডিজিজ, কণ্ঠনালির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও মস্তিস্কের রোগ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল এলাকায় মাইকিং ও হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হচ্ছে এবং মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার প্রচারণা হয়। ক্ষতিকর শব্দ দূষন থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন বলেন, শব্দ দূষণ যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর চেয়ে এই আইন ও বিধিগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানানোটা অনেক বেশি জরুরি। আমরা এ বিষয়ে খুব দ্রæত প্রচারণা শুরু করব।