গৌরনদী
ভূয়া দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প ॥ গৌরনদীতে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে দরিদ্র পরিবারের ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে উধাও
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ দারিদ্র বিমোচনের নামে পরিচালিত ভূয়া বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পল্লী উন্নয়ন সংস্থা (পি,ইউ,এস) নামের একটি সংগঠন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ২শতাধিক নিরহ পরিবারকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ২শত আমানাতকারী ঋৃনের অনূকুলে রাখা সঞ্চয়ের অর্থসহ সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে । ভূক্তভোগী আমানতকারীরা গতকাল শনিবার গৌরনদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
স্থানীয় লোকজন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নড়াইল জেলা সদরের জনৈক জাহানারা বেগম (৪৫) ও গোপালগঞ্জ জেলা সদরের জনৈক সালমা আক্তার গত এপ্রিল (২০১৬) মাসে গৌরনদীর মাহিলাড়া বাসষ্টা- সংলগ্ন মো. শাহজাহান খানের বাড়ি ভাড়া নেন। তারা নিজেদের পল্লী উন্নয়ন সংস্থা (পি,ইউ,এস) নামে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপজেলা সমন্বয়কারী ও মাঠ কর্মি হিসেবে পরিচয় দেন। সংস্থার কেন্দ্রীয় প্রধান কার্যালয় হিসেবে সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়, বি,বি এভিনিউ খদ্দর বাজার সপিং কমপ্লেক্সে (৬ষ্ঠ তলা) ৫৮নং রুম, ঢাকা-১০০০। এন,জিও রেজিঃ নং ম/বি/অ-ঢাকা-১৫২/৯৮।
সংস্থার সদস্য ফরমে দেখা যায়, গ্রামের ১৮ থেকে ৪৫ বছরের নারী ও পুরুষ এক শত পঞ্চাস টাকা জমা দিয়ে ফরম পুরন করে সদস্য হতে পারবেন। একই পরিবারের একাধিক সদস্য হতে পারবেন। সদস্য হওয়ার পরে সপ্তাহে ২৫ টাকা সঞ্চয় জমা দিতে হবে। তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলে সমিতির এক তৃতীয়াংশ সদস্যকে ঋৃনের আওতায় আনা হবে।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, পল্লী উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা নিরহ মানুষকে অধিক মাত্রার প্রলোভনে ফেলে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের মাহিলাড়া, বাঘার, ভিমেরপাড়, কেফায়েতনগর, ও বাটাজোর ইউনিয়নের বাটাজোর, হরহর, বছার, ঘেয়াঘাট, লক্ষকাঠী, জয়সুরকাঠী, চন্দ্রহার, উত্তর পশ্চিম চন্দ্রহার ১২ টি গ্রামের ২শ পরিবারের ৩ শ জনকে সদস্য করেন। এবং প্রলোভনে ফেলে প্রতারনা করে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
ভ’ক্তভোগীরা আরো জানান, গ্রামের হতদরিদ্র মানুষকে ঋৃন দিয়ে স্বাবলম্বি করার লক্ষে সদস্যদের সামান্য সুদে সর্বন্মি ১০ হাজার টাকা থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা ঋৃন দেওয়া হবে। ঋৃনের অনুক’লে কোন মর্গেজ দিতে হবে না শুধু ঋৃন পাওয়ার পূর্বে শতকরা ১০ ভাগ হারে সঞ্চয় আমানাত জমা দিতে হবে। কোন সদস্য সদস্য হওয়ার পরে তিন মাসের মধ্যে মারা গেলে মৃত ব্যাক্তির নমিনিকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে এবং ঋৃনের টাকা মওকুফ হয়ে যাবে। লোভনীয় প্রলোভনে পরে গ্রামের হতদরিদ্র নিরহ মানুষ সংস্থাটির সদস্য হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন এবং ঋন পাওয়ার জন্য এককালীন ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় আমানাত জমা দেন।
ক্ষতিগ্রস্থ রুবিনা আক্তার(৩২) পারভিন বেগম(৩০) শিল্পী বেগম(৩৫) মাহমুদা(৪৫)সহ অনেকেই বলেন, গত দুই মাস ধরে দুই ইউনিয়নের ১২ গ্রামের প্রায় তিনশত সদস্যদের ঋৃন দেওয়ার কথা বলে ১০ পাসেন্ট আমানাত হিসেবে মোগো কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা আদায় করেন এবং গত ১৬ জুন সকলকে এক সঙ্গে ঋৃন দেওয়ার তারিখ নির্ধারন করেন। সেই অনুযায়ী মোরা অফিসে ঋন নিতে আহি। পল্লী উন্নয়ন কার্যালয়ে এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ কোন কর্মকর্তা নাই। এসময় বাড়ির মালিক মো. শাহজাহান খানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
বাটাজোর ইউনিয়নের বছার গ্রামের মাধব সরকারের পুত্র কৃষক নিহার সরকার(৪৫) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মোর সব শেষ অইয়া গেছে। প্রতারক এনজিওর লোভে পড়ে ধানের জমিটুকু বদ্ধক দিয়ে ২০ হাজার টাকা দিছিলাম। আশা ছিল ২ লাখ টাকা ঋৃন পেয়ে মাছের পোনার ব্যববসা করমু সংসার ভাল চলবে। কি দিয়া ঋন দিমু। লক্ষনকাঠী গ্রামের ওয়াহেদ আকনের পুত্র সাইদুল ইসলাম বলেন, ৫০ হাজার টাকা ঋৃনের আশার ধার করে ৫ হাজার টাকা দিছিলাম। ঋৃন পাইলে মটারআলা ভ্যানগাড়ী কিনে চালালে পোলাপান লইয়া চলতে পারমু। একইভাবে প্রতারিত হওয়ার কথা জানালেন, সত্য রঞ্জন হালদার, আলাউদ্দিন আকন, আরিফ সরদার, মনোয়ারা বেগম সাহিদা খানম।
অভিযোগের ব্যপারে পল্লী উন্নয়ন সংস্থার উপজেলা ব্যবস্থাপক জাহানারা বেগম (৪৫) ও মাঠ সংগঠক সালমা আক্তার(২৫)র সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া যায়নি। অফিসের ও ব্যাক্তিগত ৪টি মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাড়ির মালিক মো. শাহজাহান খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পুত্র আলিম খান(২৮) বলেন, বাবা হৃদরোগী তাই কথা না বলা ভাল। এ প্রসঙ্গে বলেন, ওরা আমাদের সঙ্গেও প্রতারনা করেছে। ঘরভাড়া না দিয়ে পালিয়েছে। ঘর ভাড়ার চুক্তিপত্র সম্পন্নর নামে দুই মাস তালবাহানা করে চুক্তি করেনি। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন প্রতারিতদের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি একটি সাধারন ডায়রী করা হয়েছে। প্রতারকদের ধারার জন্য অনুসন্ধান চলছে। গ্রামের দরিদ্র লোকজন লোভে পড়েই প্রতারিত হয়েছে।