গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে জখম করেছে ছেলে ও ছেলে বৌ, উদ্ধার করে চিকিৎসা দিলেন ওসি আফজাল হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়ার উপজেলার বারপাইকা গ্রামে করোনা ভয়ে মায়ের শরীরে ভাইরাসের জীবাণু থাকার আশঙ্কায় পরীক্ষা না করিয়ে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী মিলে ঘর থেকে বের করে দিয়ে প্রায় দুইমাস ধরে বসত ঘরের বাইরে একটি মন্দিরে বৃদ্ধা মা গেনোদা ব্যাপারীকে (৯৫) ফেলে রেখেছেন। ক্ষুধার্ত মা গেনোদা ব্যাপারী ছেলের বৌর কাছে খাবার চাওয়ায় ও নিজের বয়স্ক ভাতার টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী মিলে বৃদ্ধা গেনোদা ব্যাপারীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতিতা মাকে উদ্ধার করে পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রেখে সুস্থ্য করার উদ্যোগ নিলেন আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন। নির্যাতনকারী ছেলে ও ছেলে বৌয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলেন। ওসি আফজাল হোসেনের এ মানবিক কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
স্থানীয় লোকজন, গ্রামবাসি ও বৃদ্ধার স্বজনরা জানান, আগৈলঝাড়ার উপজেলার বারপাইকা গ্রামের সুর্য্য কান্ত বেপারীর স্ত্রী গেনোদা ব্যাপারী (৯৫) স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলে জগদীশ ব্যাপারী (৪০) ও পুত্রবধূ শিখা রানীর (৩৫) কাছে থাকতেন। গেনেদা ব্যাপারীর নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড রয়েছে। ছেলে জগদীস ব্যাপারী ওই কার্ডের টাকা তুলে ভোগ করেন। গ্রামবাসি বিভূতি মন্ডল, বাসুদেব সরকারসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, বৃদ্ধা গেনেদা ব্যাপারীর বয়সের কারনে হাছি কাশি থাকায় শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু থাকার আশঙ্কায় গত দুই মাস ধরে করোনা আতঙ্কে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বাড়ির সামনে বারপাইক্কা মন্দিরের বারান্দায় থাকতে দেন। এ সময় বৃদ্ধাকে ঠিকমত খাবার দেন না। খাবার ও পরিচর্চার অভাবে বৃদ্ধা অনেকটাই অসুস্থ্য হয়ে পরেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৫জন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজন জানান, সোমবার বিকেলে ক্ষুধায় কারনে বৃদ্ধা গেনেদা ব্যাপারী ছেলের বৌর কাছে খাবার চান। খাবার না দিলে বৃদ্ধা পুত্র বধূ শিখা রানীর কাছে বয়স্ক ভাতার টাকা চান। এতে পুত্রবধূ শিখা রানী ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে পুত্রবধূ শিখা টাকা চাওয়ার কথা বলে স্বামী জগদীস ব্যাপারীকে খেপিয়ে তুলে। এ নিয়ে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে পাষন্ড পুত্র জগদীস ও তার স্ত্রী শিখা মিলে নির্মমভাবে বৃদ্ধা গেনেদা ব্যাপারীকে পিটিয়ে গুরুত্বরভাবে রক্তাক্ত জখম করে। স্থানীয়রা জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে প্রভাবশালী জগদীস ও স্ত্রী শিখা রানী তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে তারা স্থানীয় সংবাদ কর্মী ও পুলিশ প্রশাসনকে জানান। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে এ সম্পর্কে নির্যাতিত বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলে ও ছেলের বৌ মোরে ঠিকমত খাওন দেয় না, খাওন চাইলে মোরে গালাগাল দেয়, মারে। তহন মুই মোর ভাতার টাহা চাইলে রাগ অইয়া মোরে আবার মারে। তিনি ক্ষত দেখিয়ে বলেন, দেহেন মোরে মাইররা কি করছে। ভগবান কেন মোরে লইয়া যায় না।
অভিযোগের ব্যাপারে জগদিশ ব্যাপারী ও তার স্ত্রী শিখা রানীর কাছে জানতে চাইলে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমাদের পারিবারিক সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করে নিবো। এখানে কাউকে নাক না গলালেও চলবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ অফজাল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, খবর পাওয়ার পরে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষাধপত্র সরবারহ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রফুল্লা মেম্বরের বাড়িতে তার জিম্মায় রেথে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বৃদ্ধা সুস্থ্য হওয়ার পরে এ ব্যাপারে ছেলে ও ছেলের বৌর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।