গৌরনদী
অবশেষে তিন কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত বিদ্যালয় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে অবশেষে মঙ্গলবার বিকেলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেল উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নে তিন কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সাইক্লোন সেন্টার)। শারদীয় দূর্গা উৎসব উপলক্ষে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কোন প্রানহানি ঘটেনি। সম্প্রতি ভাঙ্গনের কবল থেকে বিদ্যালয় রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন সহ আন্দোলন করেছিল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি। এ নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে “ভাঙ্গন থেকে স্কুল রক্ষার আকুতি” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সরেজমিনে গেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ধীরে ধীরে ভাঙ্গন ভবনের দিকে এগুতে থাকে। ১১টার দিকে ভবনের উত্তর অংশ কাত হয়। দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে সম্পূর্ন ভবনটি ভেঙ্গে পরে। পূজার বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রানহানি থেকে রক্ষ পান। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোসলেম আলি হাওলাদার জানান, নদী ভাঙ্গনে যখন ভবনের এক অংশ কাত হয়ে পরে ঠিক তখন জীবনের ঝুকি নিয়ে লাইব্রেরীতে থাকা বিদ্যালয়ের কিছু মূল্যবান কাগজপত্র ও মালামাল উদ্ধার করেছি। তবে কোন আসবাবপত্র উদ্ধার করা যায়নি। আশোয়ার গ্রামের গৃহবধু রাবেয়া বেগমসহ কয়েকজন জানান, নদী ভাঙ্গনে তাদের বাড়ি ঘর বিলীন যাওয়ার পর থেকে গত এক বছর ধরে মোরা সাইক্লোন সেল্টারটিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। মোগো সর্বশেষ আশ্রয় কেন্দ্রও নদীতে বিলিন হয়ে গেল।
আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগদিস হালদার বলেন, ভাঙ্গন যখন স্কুল ছুই ছুই তখন স্কুল ভবন ভাঙ্গনের আশংকা করে আমি স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্কুল রক্ষায় লিখিতভাবে আবেদন করি। স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ আন্দোলন করে। কিন্তু কেউই কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। অবশেষে ভবনটি নদী গ্রাস করে নিল। গ্রামের নাজিম খলিফা, আবুল হোসেন ফকির, জহির হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলটি থাকায় শিক্ষার্থীরা এখানে শুধু লেখাপড়াই করে না, ঘূর্নিঝড় ও বন্যায় ৪টি গ্রামের শত শত নারী পুরুষ শিশু এখানে আশ্রয় নেই। এটি বিলীন হলে গ্রামের শিশুদের লেখাপড়া বন্ধসহ দূর্যোগে মোরা আশ্রয়হীন হয়ে গেছি।
তারা আরো বলেন, নদী ভাঙ্গনের মুখে বিদ্যালয় বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। বিভিন্ন সময় ঝড় বন্যায় মোরা এখানে আশ্রয় নিতাম এ্যাহন মোরা কোথায় যামু? কর্তৃপক্ষ আগে ভাগে ব্যবস্থা নিলে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষা করা যেত। স্কুল রক্ষার দাবিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্কুল চত্বর ও ভাঙ্গন কবলিত সন্ধ্যা নদীর পাড়ে মানববন্ধন করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও গ্রামবাসি। উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাছলিমা বেগম বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। বিষয়টি বিষয়টি স্থানীয়, উর্ধতন প্রশাসন, এলজিইডির কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংসদকে অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি সময়ে উজিরপুরের সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়ে যায়। উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের দাসেরহাট, কমলাপুর, আশোয়ার, চথলবাড়ি, নারকেলী, চৌধুরীর হাট, কালিরবাজার ভেড়ীবাঁধ ও শিকারপুরসহ উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটর এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত এক মাসে গুঠিয়া ইউনিয়নের রৈভদ্রাদী, দাসেরহাট, হানুয়া, আশোয়ার গ্রামর রাস্তাঘাট, স্কুল-মসজিদ, বাড়ি, ভেরীবাঁধ ও ফসলী জমি নদীর তীব্র ¯্রােতে ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। ১৪ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বরিশাল এলজিইডি কর্তৃক তিন কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সাইক্লোন শেল্টার) পর্য়ন্ত পৌছে। শেষ পর্যন্ত ভবনটি নদী গ্রাস করে নিল। ২০০৩ সালে বরিশাল এলজিইডি তিন কোটি টাকা ব্যায়ে আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সাইক্লোন সেন্টার) নির্মান করেন।