গৌরনদী
বাবার বিয়ের সাড়ে ৩ বছর আগে ছেলের জন্ম
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে চন্দ্রহার কে, আর. শিক্ষায়তন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ছাত্রীকে (১৫) অপহরন করে একই ইউনিয়নের পশ্চিম শাহজিরা গ্রামের এক প্রভাবশালীর পুত্র ও একই স্কুলের সহপাঠি বখাটে সোহাগ মোল্লা (১৬)। অপহৃতার সঙ্গে অপহরনকারী বখাটের বিয়ে সম্পন্ন করে মামলা থেকে বাঁচতে বখাটের বাবা মোঃ মনির মোল্লা বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদে থেকে একটি ভূয়া জন্ম তোলেন। সনদে দেখা গেছে বাবা মনির মোল্লার বিয়ের সাড়ে ৩ বছর পূর্বে ছেলের জন্ম হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অপহরন মামলা থেকে বাঁচতে অপহরনকারী সোহাগ মোল্লার প্রভাবশালী বাবা মনির মোল্লা অপহৃতা স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে বখাটে ছেলের বিয়ে দেয়ার সিদ্বান্ত নিয়ে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করার পায়তারা চালায়। কিন্তু বিয়েতে বাধ সাধে ছেলে মেয়ের বয়স। তখন মনির মোল্লা প্রভাব খাটিয়ে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ছেলের ভূয়া জন্ম সনদ উত্তোলন করেন। মনির মোল্লার বিবাহ রেজিষ্টারে দেখা গেছে, ২০০০ সালের ১৯ জুলাই মনির মোল্লা উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের আইয়ুব অলী সরদারের মেয়ে শাহনাজ বেগমকে বিয়ে করেন। সমাপনী, জেএসসি একাডেমী সনদ ও এসএসসির রেজিষ্ট্রেশন সনদ অনুযায়ি ছেলে সোহাগ মোল্লার জন্ম তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০০৩। প্রভাব খাটিয়ে বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাবা মনির মোল্লা কর্তৃক উত্তোলন করা জন্ম সনদ অনুযায়ি ছেলে সোহাগ মোল্লার জন্ম তারিখ ১২ ডিসেম্বর ১৯৮৭ ইং। কয়েকজন এলাকাবাসি জানান, মামলা থেকে বাঁচর জন্য অপহৃতার সঙ্গে অপহরনকারীর বিবাহ সম্পন্ন করতে ছেলের বাবা মনির মোল্লা জাল জালিয়াতি জন্ম সনদ তোলেন।
অপহৃতার বাবা অভিযোগ করেন, মেয়ে অপহরনের আগে উত্যক্তের ঘটনা নিয়ে বখাটে সোহাগ মোল্লার বাবা মনির মোল্লার কাছে বিচার দিলেও সে বখাটে ছেলের কোন বিচার করেন নাই। অপহরনের পরে মামলা করলে ছেলেসহ অপহরন মামলার আসামিদের রক্ষায় মনির মোল্লা ভূয়া জাল জন্ম সনদ দিয়ে ছেলের বিয়ে রেজিষ্টির কাগজপত্র তৈরী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মনির মোল্লার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করা হবে।
গৌরনদী মডেল থানার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের আধুনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে চন্দ্রহার কে, আর. শিক্ষায়তন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ছাত্রীকে উত্যক্ত করে একই উপজেলার একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তি পশ্চিম শাহজিরা গ্রামের প্রভাবশালী মনির মোল্লার ছেলে ও একই স্কুলের সহপাঠি বখাটে সোহাগ মোল্লা। গত ৩০ জুলাই (২০১৮) স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আধুনা গোপ্তের বাড়ির কাছে পৌছলে বখাটে সোহাগ মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছাত্রী অপহরন করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে ৬ জনকে আসামি করে অপহরন মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাতে পাঠান। গত ফেব্রæয়ারি মাসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ জমা দেন। অপহরনকারী মামলার প্রধান আসামি জেল হাজতে ও স্কুল ছাত্রী নিরাপত্তা সেলে রয়েছে।
মনির মোল্লার বাড়িতে গিয়ে বসতঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাড়ির লোকজন জানান, মামলার আসামি হওয়ার কারনে তারা কেউই বাড়ি থাকেন না। অভিযোগ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মনির মোল্লা কথা বলতে রাজি হননি। বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রব হাওলাদার এ প্রসঙ্গে বলেন, মনির মোল্লা সরিকল ইউনিয়নের পশ্চিম শাহজিরা গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামটি আমার ইউনিয়নের অর্ন্তভূক্ত নয়। ওই নামে পরিষদ থেকে কোন জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়নি।