গৌরনদী
মাহিলাড়া কলেজের প্রভাষকের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা, আরেক গৃহবধূর ধর্ষনে সালিস
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক ও উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের মৃত খালেক আকনের ছেলের (৪৫) বিরুদ্ধে রোববার বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রইবুনালে ধর্ষন মামলা করেছে একই গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী। এদিকে উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের শাহজিরা গ্রামের গৃহবধূ ১ সন্তানের জননীকে (২৩) ধর্ষন করেছে স্থানীয় দুই যুবক। এলাকার প্রভাবশালীরা সালিস মিমাংসার নামে তালবাহানা করে অবশেষে সোমবার দুপুরে সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের উপস্থিতিতে দুই ধর্ষককে ২০ হাজার টাকা করে জড়িমানা করেন।
বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রইবুনালের পেশকার আজিবর রহমান জানান, রোববার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা এক যুবতি (২৬) ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল হালিম আকনকে (৪৫) আসামি করে একটি ধর্ষন মামলা করে। আদালতের বিচারক মোঃ আবু শামীম আজাদ মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এজাহারে বাদি উল্লেখ্য করেন, স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ার পরে সে বাবার বাড়ি হাপানিয়া গ্রামে অবস্থান করেন। একই গ্রামের মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল হালিম আকন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে বিভিন্ন সময় ধর্ষন করেছে। সর্বশেষ গত ২৭ আগষ্ট রাতে আব্দুল হালিম আকন তার সহযোগী রিপন আকনকে দিয়ে তার বসত ঘরে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে হালিম তাকে একাধিকবার ধর্ষন করে। পরবর্তিতে বিয়ের কথা বললে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। পরে প্রতারক হালিমের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্বান্ত নেন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রভাষক আব্দুল হালিম আকন বলেন, আমি ষরযন্ত্রের শিকার, অভিযোগ সঠিক নহে । গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশ এখনো হাতে পাইনি পেলে নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের শাহজিরা গ্রামের ধর্ষিতা (২৩) জানান, একই গ্রামের মৃত করিম হাওলাদারের ছেলে ইউসুফ হাওলাদার (৪০) তাকে বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করে এবং কু-প্রস্তাব দেয়। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউসুফ হাওলাদার ও তার সহযোগী একই গ্রামের মোসলেম সরদারের ছেলে কাওছার সরদার (৩৫) বাড়িতে এসে কথা শোনতে ঘর থেকে বাহিরে ডাকেন। এ সময় কথা শোনতে ঘর থেকে বের হলে দুই যুবক তাকে মুখ চেপে তুলে নিয়ে পাশ্ববর্তি এবতেদায়ী মাদ্রাসার একটি পরিত্যক্ত ঘরের মধ্যে নিয়ে দুই জনে পালাক্রমে ধর্ষন করে। নির্যাতিতা ঘরে এসে বিষয়টি শ্বশুড়ি ও নোনদকে অবহিত করলে মামলা করার সিদ্বান্ত নেন। এ সময় গ্রাম্য মাতবর ও জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টির বিচার করার আশ্বাস দিয়ে মামলা করতে বাধা দেন। পরবর্তিতে মিমাংসার নামে ৫ দিন যাবত তালবাহানার পরে সোমবার দুপুরে সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের উপস্থিতিতে সালিসে দুই ধর্ষককে ২০ হাজার টাকা করে জড়িমানা করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, নির্যাতিতা ভ্যান চালকের স্ত্রীকে ধর্ষকরা বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে সালিস বৈঠকের প্রস্তাব দেন। মিমাংসার নামে গত ৫ দিন যাবত তালবাহানা শুরু করে কালক্ষেপন করে মামলা করতে দেয়নি। পরবর্তিতে গতকাল সোমবার দুপুরে বিষয়টি মিমাংসায় ধর্ষককে ২০ হাজার টাকা করে জড়িমানা করা হয়। সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক সরদার (৪৫), ১.২.৩ সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য শাহানারা বেগম (৪২), আসামি পক্ষের ইদ্রিস হাওলাদার(৫০), হোসেন হাওলাদার (২৮) ও স্বপন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন। ১.২.৩ সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য শাহানারা বেগম সালিস বৈঠকে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মেম্বর ফারুক, ইদ্রিস ও স্বপনসহ অন্যন্যরা মিমাংসার বৈঠক করেছে সেখানে অভিযুক্ত বা তাদের অভিভাবকরা না আসায় সিদ্বান্ত হয়নি। তাতে আমি উপস্থিত ছিলাম না। ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক সরদার বলেন, শুনেছি সালিস করার উদ্যোগ চলছে আমি কোন সালিস ছিলাম না। আমি পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছি কিন্তু পুলিশ কোন উদ্যোগে নেননি। সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মোঃ অলিউল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি নিজে একাধিকবার ঘটনাস্থলে গিয়েছি ওই নারীর কোন অভিযোগ নেই। পুলিশ কোন সালিসেতে উপস্থিত ছিল না। ভুক্তভোগী অভিযোগ না দেয়ায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিষয়টি গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদারকে অবহিত করা আছে।