গৌরনদী
উজিরপুরে ওসি ও পুলিশ কনষ্টবল কর্তৃক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির তদন্ত শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল ও কনষ্টবল জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বুধবার বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গতকাল শুক্রবার তদন্ত শুরু করেছে। ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা বলা হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির কাছে নালিশ দেওয়ার অপরাধে বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদশর্কের (এএসআই) স্ত্রী রাশিদা বেগম (৬২) নামের এক নারীকে মারধর করে সিগারেটের আগুন দিয়ে গাল পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতিতা রাশিদা বেগম পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদশর্কের (এএসআই) স্ত্রী।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পানিচত্বর এলাকার স্বামী মৃত মোঃ মঈন উদ্দিন মাতবরের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৬২) জানান, তিনি উজিরপুর উপজেলার ইচলাদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ইচলাদি গ্রামের আবুল কালামের বাড়িতে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। গত আগষ্ট মাসে তার সপ্তম শ্রেনি পড়–য়া মেয়ে (১১) তার কাছে (মায়ের) উজিরপুরের ইচলাদি বাসায় বেড়াতে আসে। অগষ্ট মাসের ১৩ তারিখে মেয়েকে বাসায় রেখে সে বরিশাল গেলে উজিরপুরের ইচলাদি গ্রামের মৃত রহমত অলীর ছেলে বখাটে শুক্কুর আলী (৩২) নেতৃত্বে তার সহযোগী বোরহান হোসেন (৩২), আনিচুর রহমান (৩৮), কালাম হাওলাদার (৪০)সহ ৫/৬ জন বখাটে তার মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায়।
১৪ আগষ্ট তিনি বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিলে ওসি মামলা রুজু না করে ১৯ আগষ্ট মেয়েকে উদ্ধার করে তাকে বুঝিয়ে দেন। মেয়েকে হাতে পেয়ে অপহরনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওসিকে বললে ওসি তাকে বলেন মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন মামলার দরকার নেই। মেয়েকে নিয়ে বাসার আসার পথে অপহরনকারী পুনরায় মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায়। ওই রাতে থানার ফিরে এসে পুনরায় অপহরনের কথা ওসিকে জানালে ওসি নতুন করে অভিযোগ দিতে বলেন। তিনবার অভিযোগ নেন এবং ছিড়ে ফেলেন ওসি। ২/৩ দিন আগে রাশিদা বেগম বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির সাথে দেখা করে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন এবং ওসি শিশিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেঞ্জ ডিআইজি উজিরপুর থানার ওসি শিশিরকে রাশিদা বেগমকে আইনি সহায়তা দেয়ার দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
রাশিদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ডিআইজি স্যারের কাছে নালিশ দেয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় ওসি আমাকে থানায় ডেকে পাঠন। সন্ধ্যায় আমি থানায় দেখা করতে গেলে আমাকে চায়ের দোকানে গিয়ে বসতে বলেন। বাচ্চু মিয়ার চায়ের দোকানে গিয়ে বসলে থানার কনষ্টবল জাহিদুল ইসলাম আমাকে ধমকের সুরে বাড়ি কোথায়? এখানে কেন এসেছি? জানতে চান। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য জাহিদ আমাকে থাপ্পর চোপারসহ মারধর করে এবং গালে সিগারেটের আগুন চেপে ধরে পুড়িয়ে দেয়। ওই সময় চায়ের দোকানে উপস্থিত লোকজন আমাকে রক্ষা করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পুলিশ কিনা জানিনা তবে সিভিল পোষাকের এক লোক মহিলাকে মা বোনসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও বেদমভাবে মারধর করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ কনস্টবল জাহিদুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি কল রিসিপ করে বলেন, এ বিষয়ে আমি আপনাকে কোন বক্তব্য দিবো না।
রাশিদা বেগম আরো বলেন, জাহিদুল ইসলাম পুলিশের হাতে মার খেয়ে আমি ওসির কাছে বিচার দিতে গেলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে আমাকে গালি দিতে দিতে বলে, ‘শালির ঝি শালি থানা থেকে বের হ, এখানে আসছো কেনো।’ এরপর শুরু করে দুই গালে থাপ্পড় দিতে দিতে তার রুম থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় বরিশালের পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বুধবার তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান হলেন বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হক, সদস্য বাকেরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন, বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাসুমুর রহমান বিশ্বাস ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, ওই মহিলা একটা খারাপ লোক ও মামলাবাজ। তার স্বামীর হিসেবের কোন শেষ নেই। তার মেয়ে অপহরনের কোন ঘটনা নাই। এ প্রসঙ্গে বরিশাল পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটির সভাপতি বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হক বলেন, গতকাল শুক্রবার উজিরপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এখনো ভিকটিমের সাথে কথা হয়নি। প্রাথমিকভাবে তদন্ত চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।