গৌরনদী
উজিরপুরে স্কুলভ্যান খালে পড়ে ২ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত-১০
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ মঙ্গলবার সকালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মুলপাইন দারুস সুন্নাহ নূরানী হাফেজী মাদ্রাসার ১৮ জন শিক্ষার্থী বহনকারী স্কুলভ্যান উল্টে খালে পরে পানিতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরো ১০ শিক্ষার্থী গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। খাল থেকে ৭ জন সাতাঁর কেটে পাড়ে উঠে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পুলিশ জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টায় উজিরপুর উপজেলার মুলপাইন দারুস সুন্নাহ নূরানী হাফেজী মাদ্রাসার ১৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ভ্যান চালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের সাকরাল গ্রাম থেকে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে মুলপাইনের রওয়ানা হন। সকাল সাগে ৮টার দিকে উজিরপুর ধামুরা সড়কের সমীর হালদারের বাড়ীর সম্মুখে পৌছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি ভ্যান শিক্ষার্থী বহনকারী ভ্যান গাড়ীকে ধাক্কা দিলে শিক্ষার্থী বহনকারী স্কুলভ্যানটি উল্টে খাঁলের মধ্যে পরে যায়। এ সময় দরজা বন্ধ থাকা ভ্যান গাড়ির ভিতরের শিশু শিক্ষার্থীরা কান্নাকাটি শুরু করলে স্থানীয়রা এগিয়ে শিশু শিক্ষার্থী উদ্ধারে চেষ্টা করে। ভ্যানের দরজা খুলে দেয়ার পরে সাতার জানা ৭ শিক্ষার্থী পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। স্থানীয়রা ১২ জন শিশু শিক্ষার্থী উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ জেলা সদরের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে লামিয়া (৬) ও সাকরাল গ্রামের সেলিম হাওলাদারের ছেলে আব্দুল্লাহকে (৭) মৃত ঘোষনা করেন। গুরুতরভাবে আহত আতিক (৬), বিল্লাল (৬), নিয়াজ মাহমুদ (৬), মুক্তা (৭) হোসাইন (৬), তাসফিয়া (৬), রহমতউল্লাহ (৬), তামিম (৬), আব্দুর রহমান (৭),আব্দুল্লাহ আল মাহিন ও ভ্যান চালক মহিউদ্দিনকে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি ঘটলে আতিক (৬), বিল্লাল (৬), নিয়াজ মাহমুদ (৬), মুক্তা (৭)কে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিশুদের উদ্ধারকারী দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল জলিল জানান, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী বহন করায় পিছন থেকে অন্য একটি ভ্যান ধাক্কা দিলে চালক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে দূর্ঘটনা কবলিত হয়্ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্র্শীরা জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারনে দূর্ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থীরা প্রান হারায়। একটি ভ্যানে ৮ জন শিক্ষার্থী বহন করার ক্ষমতা রয়েছে। অথচ প্রতিদিন একটি ভ্যানে ১৮/২০ জন শিক্ষার্থী বহন করে থাকে। উজিরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী বলেন, দূর্ঘটনা কবলিত শিশু শিক্ষার্থী লামিয়া ও আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আহত ৪ জনকে বরিশাল পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমানকে বার বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা গ্রহন করেননি। এমন কি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নিতে হাসপাতালেও আসেননি। দূর্ঘটনায় দুই শিশু নিহত ও ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের মাতন চলছে। নিহতদের পরিবারের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
দূর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে তাৎক্ষনিক ছুটে আসেন বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রকিব উদ্দিন, উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ মজিদ সিকদার, পৌর মেয়র মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারী। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল এ প্রসঙ্গে বলেন, দুই শিশুর লাশ নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশাল জেলা প্রশাসকের নিদের্শে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা আঃ লতিফ ঘটনাস্থলে পৌছে নিহত ও আহতদের খোঁজ খবর নেন। তিনি নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার করে প্রদান করে এবং আহতদেরকেও আর্থিক সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দেন।