গৌরনদী
গৌরনদীতে ভাইসচেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইসচেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন ও এলাহী এগ্রো অটো রাইস মিলের মালিক মো. ফরহাদ মুন্সীর (৪৫) বিরুদ্ধে গৌরনদী উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র পালকে শারীরিক লাঞ্চিত, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৩৬ লাখ টাকার চেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায়, পচা চাল গুদামজাত করতে বাধ্য করাসহ নানান অভিযোগ করেন। গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করে বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও বরিশাল জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি সরকারি দায়িদ্ব পালনে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।
উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র পাল লিখিত অভিযোগে বলেন, আমি গৌরনদীতে যোগদানের পর থেকে ভাইসচেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন. ফরহাদ মুন্সী বিভিন্ন সময় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছেড়া বস্তায় পচা চাল গুদামজাত করতে বাধ্য করিয়েছেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় আমাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে। অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল।
অভিযোগে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে সারা দেশব্যাপি আমন ধান সংগ্রহ চলছে। আমি যখন গৌরনদীতে ধান সংগ্রহে ব্যস্থ তখন ফরহাদ মুন্সী চাল গুদামজাত করার প্রস্তবা দেন। আমি এই মুহুর্তে চাল ক্রয় ও গুদামজাত করতে অপরগতা প্রকাশ করলে সে ক্ষিপ্ত হয়। আমি ধান সংগ্রহে গুদাম খালি রাখার সিদ্বান্ত জানিয়ে দিলে এক পর্যায়ে চাল নিতে সে আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন। গত ১৮ মে ফরহাদ মুন্সী আমার অফিস কক্ষে অবৈধ অস্ত্র রেখে আমাকে ভয়ভীতি দেখান এবং শারীরিক লাঞ্চিত করে কক্ষে অবরুদ্ধ করেন। পরে চাল না দিয়ে জোরপূর্বক ৩৬ লাখ ৭শত বিশ টাকার চেকে স্বাক্ষর আদায় করে নেন। (চেক নং-ডবিøউকিউএসসি ২৬৬০৯৫০)। এ ছাড়া বর্তমানে চাল সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও গত ২০ মে দুপুরে ফরহাদ মুন্সী ৩/৪টি ট্রাক ভর্তি ৮শত বস্তা পচা চাল এনে তা গোড়াউনে গুদামজাত করতে বলেন এবং জোরপূর্বক গোডাউনে তোলার চেষ্টা করেন। আমি ভাইসচেয়ারম্যানের অবৈধ কাজে বাধাদান করলে সে আমাকে লাঞ্চিত করে। অবৈধ হস্তক্ষেপ, জোরপূর্বক চাল না দিয়ে সরকারি টাকার অগ্রীম চেক দিতে বাধ্য করা ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখানোসহ তার (সুভাষ) ওপর অন্যায় অত্যাচারের ফিরিস্তি লিখিত অভিযোগে তুলে ধরে বলেন, এসব বিষয়গুলো পূর্বেও আমি গৌরনদী খাদ্য পরিদর্শক অশোক কুমার চৌধুরীকে অবহিত করেছি। আমি সরকারি দায়িত্ব পালনে জীবনের নিরাপত্তা চাই।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভাইসচেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন ও এলাহী এগ্রো অটো রাইস মিলের মালিক মো. ফরহাদ মুন্সী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। প্রকৃত ঘটনা হল দলীয় আভ্যন্তরীন বিরোধের জের ধরে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান আমাকে জব্দ করতে অভিযোগপত্র লিখে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র পালকে তাতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। পরে ওই অভিযোগপত্র ইউএনওর কাছে জমা দেন। এ প্রসঙ্গে খাদ্য পরিদর্শক অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র পাল কিছু কিছু ঘটনা আমাকে অবহিত করেছে এবং একাধিক ঘটনা মিমাংসা করে দিয়েছি। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা নাসরিন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে সেই অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।