বরিশাল
গৌরনদীতে বাল্য বিয়ে থেকে রক্ষা পেল চার স্কুল ছাত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তরিৎ পদক্ষেপ গ্রহন করায় গত দুই দিনে উপজেলার পৃথক চারটি স্থানে অভিযান চালিয়ে চারটি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছেন। এ সময় মুচলেকা গ্রহন সহ জেল জড়িমানা করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী পৌর সদরে ৫নং ওয়ার্ডের চরগাধাতলী মহল্লার আবুল কালামের কন্যা ও গৌরনদী গালর্স স্কুল এ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেনির ছাত্রী সাদিয়া অফরিনের (১৬) সঙ্গে বাবুগঞ্জ উপজেলার ঠাকুরমল্লিক গ্রামের মো. শাহজাহান শেখের পুত্র মো. শাহিন শেখের বিয়ে পাকাপাকি হয়। উভয় পরিবারের সিদ্বান্ত মতে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিয়ের তারিখ নির্ধারন করা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কনের বাড়িতে বিয়ের রান্না-বান্না, আপ্যায়নসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কনের আত্মীয়স্বজন সহ সকলের মধ্যে চলছে উৎসবের আমেজ। ৪০ জন বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে বাড়িতে হাজির হন বরের স্বজনরা। কনের একাধিক স্বজন জানান, রাত সাড়ে ৭টার দিকে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) খালেদা নাসরিন একদল পুলিশ নিয়ে উপস্থিত হয়ে বিয়ের আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালে কনে ও বরের অভিভাবকরা ক্ষমা চান। এক পর্যায়ে উভয় অভিভাবক লিখিত মুচলেকা দেন। পরবর্তিতে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক খালেদা নাসরিন বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে উভয় পরিবারে ৫হাজার টাকা করে জড়িমানা করেন এবং ভবিষ্যাতে বিয়ের চেষ্টা করলে কঠোর শাস্তির ঘোষনা দেন।
একই দিন দুপরে মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্রি গ্রামের মো. সহিদ বেপারীর কন্যা ও জঙ্গলপট্রি দাখিল মাদ্রসার দশম শ্রেনির ছাত্রী মরিয়ম আক্তারের (১৫)সঙ্গে একই গ্রামের মো. ফারুক বেপারীর পুত্র মো. বাপ্পি বেপারীর সঙ্গে বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়। ধার্য্য তারিখ অনুযায়ি বৃহস্পতিবার দুপরে কনের বাড়িতে বিয়ের সব আয়োজনসহ দেড় শতাধিক লোকের অপ্যায়ন সম্পন্ন হয়। শুধুই বরের অপেক্ষা কনের স্বজনরা। দুপুর ১টার দিকে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু গ্রামবাসি বিষয়টি জানালে চেয়ারম্যান বিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দেন। বরযাত্রীরা কনের বাড়িতে অভিযানের খবর পেয়ে পথিমধ্যেই সটকে পরে। পরবর্তিতে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যান কনের পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেন এবং সর্তক করেন। রান্না করার খাবার দিয়ে বরযাত্রীর পরির্বতে গ্রামবাসিকে আপ্যয়ন করা হয়।
গৌরনদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের সুপারভাইজার নারায়ন চন্দ্র দে জানান, উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামের মনরঞ্জন ঢালী তার কন্যা প্রতিরানী ঢালী পুজার (১৫) অমতে হিন্দুরীতি অনুযায়ী ঝালকাঠী জেলা সদরের পরিমল বলের পুত্র প্রাইমারি শিক্ষক দেবাশীষ বলের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকা করেন। কথা অনুয়ায়ি বুধবার রাত ১১টার লঘনে বিয়ের সময় নির্ধারন করা হয়। কনে পক্ষ বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন। বর ও বরযাত্রী ঝালকাঠি থেকে গৌরনদীর উদ্ধেশ্যে রওয়ানা হয়ে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল বাসষ্টান্ডে পৌছলে বিয়ে বন্ধের খবর পেয়ে নিজ বাড়ি ফিরে যান। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা নাছরিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত নয়টার দিকে একদল পুলিশ নিয়ে কনের বাড়িতে অভিযান চালান । এ সময় বরের বাবাকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন। একইসঙ্গে কনের বাবাকে জড়িমানা করে তার কাছ থেকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয় মুচলেকা নেন । একই দিন উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামের অলিল খন্দকারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা নাছরিন সুমি আক্তারের (১৬) বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা নাছরিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাল্য বিয়ে বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।