গৌরনদী
গৌরনদী সহকারি কমিশনারের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মো. মিজানুর রহমানের বদলির আদেশে রোববার সকালে গৌরনদী অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মো. মিজানুর রহমানের বদলির আদেশকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না গৌরনদীর বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। তাদের মতে সৎ-ন্যায়নিষ্টভাবে দায়িত্ব পালনের এই যদি হয় পুরস্কার তাহলে কর্মকর্তারা সৎ ভাবে কাজ করতে অনুৎসাহিত হবে।
গৌরনদী ভূমি অফিসের বিভিন্ন সূত্রে গেছে, গৌরনদী উপজেলা সদরে জে এল ৭৩ নং উত্তর বিজয়পুর মৌজার এস এ ১১৪ নং খতিয়ানের ৩৪৬, ৩৪৭ নং দাগের ৮৮ শতাংশ ভূমির মালিক গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই জমি কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জালিয়াতি কাগজপত্র তৈরী করে মিউটিশনের মাধ্যমে তাদের নামে রেকর্ড নিতে চাপ সৃষ্টি করে। সহকারী কমিশনার মো. মিজানুর রহমান চাপের মুখে রেকর্ড দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। গৌরনদী থানা সংলগ্ন গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জে এল-৭২ চরগাধাতলী মৌজার এস,এ খতিয়ান-২, ৩০৩,২৮৫ ও ২৯২ নং দাগের ৩৫ শতাংশ জমি গৌরনদী উপজেলার একটি শ্রমিক সংগঠনের কতিপয় ব্যক্তি দখল নিয়ে অবৈধ ইমারাত নির্মান করলে তিনি (মিজানুর রহমান) তাদের নোটিশ দিয়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারনের নির্দেশ দেন। বার্থী ইউনিয়নের জে.এল ৩৮ বাঙ্গিলা মৌজার খতিয়ান নং ১, ৬৫৯, ৬৬৬ ও ৬৭০ দাগের ৪৭ শতাংশ জমি দখল নেন আরেক প্রভাবশালী । সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেন সহকারী কমিশনার। মাহিলাড়া ইউনিয়নের মাহিলাড়া বাসষ্টান্ড সংলগ্ন এলাকায় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি খাল দখল করে বহুতল পাকা ভবন নির্মান করলে সহকারি কমিশনার ভূমি অভিযান চালিয়ে তা গুড়িয়ে দেন। বার্থীর ধানডোবা এলাকায় সরকারি খাল দখল করে এক প্রভঅবশালী পাকা ভবন নির্মান করলে ভবন গুড়িয়ে দেন মিজানুর রহমান। সরকারি সম্পত্তি নিজেদের নামে রেকর্ড ও দখল নিতে না পারায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়ে সহকারী কমিশনার মিজানুরকে গৌরনদী থেকে তাড়াতে নানান ষরযন্ত্র শুরু করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সহকারী কমিশনার স্যার যখন কোন চাপের মুখে অন্যায় কাজ করতে রাজি হননি তখন তাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে স্যারকে গৌরনদী থেকে বদলী করার হুমকি দেন। সরকারি সম্পতি রক্ষা করাই স্যারের জন্য কাল হল। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, হুমকি ধামকি দিয়ে আমাকে দিয়ে অন্যায় কাজ করাতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হয় এবং নানান ষরযন্ত্র শুরু করেন কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ওই মহল অঅমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা চালায়। সঠিক কাজ করলে যদি এ অবস্থা হয় তাহলে সরকারি স্বার্থ সংরক্ষনে কি করে সৎ ও ন্যায়ভাবে কাজ করবো।
গৌরনদী গালর্স স্কুল এ্যাÐ কলেজের অধ্যক্ষ ও গৌরনদী শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক মীর আবদুল আহসান আজাদ বলেন, মিজানুর রহমান ছিলেন একজন সৎ, সাহসী কর্মকর্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তার দ্বারা গৌরনদীর সাংস্কৃতিক অঙ্গণ উজ্জীবিত হয়েছে। গৌরনদী শিশু একাডেমীর পরিচালক বাবুল সোম বলেন, বর্তমান পরিবেশে মিজানুর রহমানের মত সৎ কর্মকর্তা পাওয়া কঠিন। সরকারের স্বার্থ সংরক্ষন করতে গিয়ে অপবাদ নিয়ে তার চলে যাওয়া দুঃখজনক। গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বক্তব্যে বলেন, আমার জীবনে দেখা একজন সৎ কর্মকর্তা ও মানবদরদী মানুষ মিজানুর রহমান। তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষন করেছেন।
অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে গতকাল রবিবার সকালে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মো. মিজানুর রহমানের বিদায় সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার খালেদা নাসরিনের সভাপতিত্ব প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী। বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান সাহিদা আক্তার, কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন, উপজেলা প্রকৌশলী মো. অহিদুজ্জামান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ফয়সাল জামিল, মোঃ আব্দুল জলিল, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা খান মনিরুজ্জামান মনির, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা খানম, সমাজসেবা কর্মকর্তা বাদশা হাসান, গৌরনদী বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহির প্রমূখ।