গৌরনদী
গৌরনদীতে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনে গর্ভের সন্তন মারা গেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ যৌতুকের দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে এসে হামলা চালিয়ে দুই সন্তানের জননী মুন্নী আক্তার (২৫)কে শারীরিক নির্যাতন করে স্বামী সবুজ হাওলাদার (৩১)। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রী মুন্নী সোমবার মৃত সন্তান প্রসব করেছে। নির্যাতিতার অভিযোগ স্বামীর নির্যাতনে তার পেটের সন্তার মারা গেছে।
স্থানীয় লোকজন, আহতের পরিবার ও পুলিশ জানান, গত ৬ বছর পূর্র্বে গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের মজিবর কাজী’র মেঝ কন্যা মুন্নী আক্তারের (২৫) আগৈলঝাড়া উপজেলার উত্তর শিহিপাশা গ্রামের মৃত আয়নাল হাওলাদারের ছেলে সবুজ হাওলাদারের (৩১) সঙ্গে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ে জামাতা সবুজকে নসিমন ক্রয়ের জন্য যৌতুক হিসেবে নগদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১ ভরি স্বর্ণালংকারসহ ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল যৌতুক দেয়া হয়।
গৃহবধু মুন্নী আক্তার অভিযোগ করেন, গত ৬ মাস ধরে স্বামী সবুজ নতুন করে বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য চাপ দেন। বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় প্রায়ই সবুজ হাওলাদার তাকে শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল। গত ১৮ জানুয়ারি সবুজ হাওলাদার দাবিকৃত যৌতুকের টাকার জন্য পুনরায় তাগিদ দিলে অস্বীকার পিটিয়ে জখম করে বাড়ি থেকে বের করে তাড়িয়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
নির্যাতিতার মা অজুফা বেগম অভিযোগ করে বলেন, মেয়ে জামাতা সবুজ হাওলাদার ২ ফেব্রæয়ারি সকাল ৯টার দিকে আমাদের বাড়িতে এসে মুন্নীকে টানাহেচরা শুরু করে। এ সময় আমিসহ ঘরের লোকজন বাধা দিলে সবুজ হামলা চালিয়ে অন্তঃসত্ত¡া মুন্নীকে বেদম মারপিট করে জখম করে। এক পর্যায়ে পেটে লাথি মারে এবং মুন্নীর বাম হাত ভেঙ্গে ফেলে। এ সময় মুন্নীর আত্মচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে সবুজকে আটক করে গৌরনদী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এবং মুন্নীকে গৗরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি ঘটলে পরের দিন মুন্নীকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নির্যাতিতার বাবা মজিবর রহমান জানান, স্বামীর নির্যাতনের কারনে কন্যা মুন্নী বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকালে একটি মৃত নবজাতক প্রসব করেছে। মুন্নী অভিযোগ করেন, পাষন্ড স্বীর নির্যাতনের তার পেটের সন্তান মারা গেছে। কারাগারে যাওয়ার আগে থানা হাজতে সবুজ হাওলাদার যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেছিলেন, সংসারে টুকিটাকি নিয়ে ঝগড়াবিবাদ হয়েছে কোন নির্যাতন করা হয়নি। এ ঘটনায় ৩ ফেব্রæয়ারি নির্যাতিতার বাবা মজিবর কাজী বাদি হয়ে মেয়ে জামাতা সবুজ হাওলাদারকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলায় পাষান্ড স্বামী সবুজ হাওলাদার (৩১) বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। নির্যাতিতা মুন্নীর পরিবার মৃত সন্তন নিয়ে থানায় এসেছিল। গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্র্কে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে ডাক্তারী রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।