গৌরনদী
গৌরনদীতে তিন স্থানে বোমা বিস্ফোরন ও রাস্তা কাটার ঘটনায় ১৩৬ জন বিএনপি নেতাকর্মির নাম উল্লেখ করে তিনটি মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া, সরিকল ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের তিনটি স্থানে শুক্রবার গভীর রাতে ১৫/২০টি বোমার বিস্ফোরন ও সড়ক বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় তিন আ.লীগ নেতা বাদি হয়ে পৃথক পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় ১শত ৩৬ জন নেতাকর্মির নাম উল্লেখসহ অসংখ্য অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, আসামিরা আ.লীগ নেতাকর্মিদের ওপর বোমা হামলা চালিয়ে অনেক নেতাকর্মিকে আহত করেছে। ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত বোমার আলামত ও অবিস্ফোারিত বোমা, রাস্তা কাটা শাপল কোদাল উদ্ধার করেছে বলে পুলিশ দাবি করেন। তিনটি ঘটনায় ২৫ জন আহত আ.লীগ নেতাকর্মিকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল রেজিষ্টারে উল্লেখ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক সজল সরকারের বাড়ির সন্নিকটে মাহিলাড়া নলচড়িা সড়কের লাল পোল এলাকায় ৭/৮টি, বোমার বিস্ফোরন ঘটনায় কে বা কারা। এ সময় তারা সড়কের লালপোল এলাকায় সড়ক কেটে ফেলে। একই রাতে আনুমানিক দেড়টার দিকে সরিকল ইউনিয়নের হোসনাবাদ ষ্টিমারঘাট চকিদার বাড়ির সন্নিকটে ব্রিজের কাছে ৫/৭াট বোমা ও কয়েক রাউÐ ফাকা গুলি ছুরে অজ্ঞাতনামা দূবৃত্তরা। এ সময় গৌরনদী হোসনাবাদ সড়কের ষ্টিমারঘাট চকিদার বাড়ি এলাকায় রাস্তা কেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একই রাত সাড়ে সাড়ে ১২টার দিকে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মেদাকুল গ্রামের দ্বীনবন্ধু সাহার বাড়ির কাছে দীঘির পাড় নামক এলাকায় ৫/৭টি বোমার বিস্ফোরন ঘটে। এ সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ইল্লা হইতে দোনারকান্দি সড়কের দীঘির পাড় সড়ক কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মেদাকুল গ্রামের বোমা বিস্ফোরন ও রাস্তাকাটার ঘটনায় ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি মো. মতলেব মাতুব্বর বাদি হয়ে ৫৫ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা অসংখ্য নেতাকর্মিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকন সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক সরদার, সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান মুন্সী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. সেলিম সরদার, সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মো. কবির হোসেন, জাতীয়তাবাদি মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মদলের বরিশাল জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আহসান উজ্জামান বাদল মিয়া, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম শাহীন, গোলাম কিবরিয়া , উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি লিটন তালুকদার। এ মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বাড়ি ফেরার পথে মেদাকুল গ্রামের দ্বীনবন্ধু সাহার বাড়ির কাছে দীঘির পাড় পৌছলে মটরসাইকেলের লাইটের আলোতে দেখি বিএনপি জামাতের নেতাকর্মিরা রাস্ত কেটে ক্ষতি সাধন করছে । এ সময় আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর বোমা হামলা চালায়। আমরা প্রান রক্ষায় পিছু হটে থানায় খবর দেই। পুলিশ পৌছলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
সরিকল ইউনিয়নের হোসনাবাদ এলাকার ঘটনায় সরিকল ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি মুুিক্তযোদ্ধা মো. মেজবা উদ্দিন আকন বাদি হয়ে ৫০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা অনেক জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সরোয়ার আলম, ছোট ভাই সৈয়দ খায়রুল আলম, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন মিলন, সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর মৃধা, সাধারন সম্পাদক আবুল বাশার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বিল্পব, প্রচার সম্পাদক মো. মজনু খান, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সুজন বেপারী, সাবেক সাধারন সম্পাদক ও স্কুল শিক্ষক মো. তৈয়ব আলী আকন, ১নং ওয়ার্ড সভাপতি আনিচ হাওলাদার, ৪নং ওয়ার্ড সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদার, ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি মো. জামাল হাওলাদার, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারন সম্পাদক মো. মাকসুদ মৃধা, সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের চাচাতো ভাই সদস্য পান্নু সরদার ও এলাকার চাকুরীজীবি মো. হিরা খান।
মামলার এজাহারে বাদি মেজবা উদ্দিন আকন উল্লেখ করেন, শুক্রবার রাত ১১টায় বাড়ি ফেরার পথে হোসনাবাদ গ্রামের স্টিমারঘাট চকিদার বাড়ির কাছে পৌছলে মটরসাইকেলের লাইটের আলোতে দেখি বিএনপি জামাতের নেতাকর্মিরা রাস্ত কেটে ক্ষতি সাধন করছে । এ সময় আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর বোমা হামলা চালায়। আমরা প্রান রক্ষায় পিছু হটে থানায় খবর দেই। পুলিশ পৌছলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। চাকুরীজীবি মো. হিরা খান অভিযোগ করে বলেন, আমি চাকুরী সুবাদে ঢাকায় থাকি। এলাকার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই। ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম তার পরেও আমাকে আসামি করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা আ. লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমাÐার মো. আনোয়ার হোসেন রাঢ়ী বাদি হয়ে ৩১ জনের নামোল্লেখ করে অনেককে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন, গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. জাফর ইকবাল, মাহিলাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ হুমায়ুন কবির, ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক সজল সরকার, ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি মো. সেকেন্দার মোল্লা, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুছা সরদার, উপজেলা যুবদলের সদস্য মনির আকন। বাদি আনোয়ার হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেন, শুক্রবার রাত বাড়ি ফেরার পথে রাত পোনে ১২টায় মাহিলাড়ার লাল পোল এলাকায় পৌছলে মটরসাইকেলের লাইটের আলোতে দেখি বিএনপি জামাতের নেতাকর্মিরা রাস্ত কেটে ক্ষতি সাধন করছে । এ সময় আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর বোমা হামলা চালায়। আমরা প্রান রক্ষায় পিছু হটে থানায় খবর দেই। পুলিশ পৌছলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে ২৫ জন আ.লীগ নেতাকর্মি চিকিৎসা নেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিখিল চন্দ্র সরকার বলেন, যে সকল রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন তারা কেউই বোমা আঘাতে জখম ছিলেন না এবং কারো শরীরে কোন জখমের চিহ্ন ছিল না।
গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সরোয়ার আলম বলেন, গত ১২ বছরেও আমি এলাকায় যাইনি এবং রাজনীতিতে আমার সক্রিয়তা নেই তারপরেও গায়েবী মামলায় আমাকে ও আমার ছোট ভাই চাকুরীজীবিকে আসামি করা হয়েছে। সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. আবুল বাশার বলেন, গায়েবী মামলা দিতে পুলিশ আ.লীগ নিজেরা ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, বোমা হামলা রাস্তা কাটার ঘটনায় আ.লীগের তিন নেতা বাদি হয়ে পৃথকভাবে তিনটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাস্থল থেকে রাস্তা কাটার সরঞ্জাম, বোমার আলামত ও অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।