গৌরনদী
কাংশী ডেভলপমেন্টে সোসাইটির মেডিকেল ক্যম্প \ প্রত্যন্ত পল্লির হতদরিদ্র তিন হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাপত্র ও ওষুদ প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের কাংশী ডেভলপমেন্ট সোসাইটি(কেডিসি)র উদ্যোগে শুক্রবার কাংশী আলহাজ্ব আদম আলী দাখিল মাদ্রসায় দিনব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা ক্যম্পের আয়োজন করা হয়। ক্যাম্পে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন হাজার রোগীকে বিনামূল্যে সেবা প্রদান ও ওষুদ বিতরন করা হয়। ক্যাম্পে ১৫বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখে চিকিৎসাপত্র প্রদান করেন।
স্থানীয় লোকজন, আয়োজক ও সেবা নিতে আসা লোকজন জানান, কাংশী এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী ও কৃতি সন্তানরা সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০১০ সালে কাংশী ডেভলপমেন্ট(কেডিসি) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে গ্রামের মানুষের কল্যানে সামাজিক কার্যক্রম শুরু করেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাওলানা এবিএম অহিদুজ্জামান জানান, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা এলাকার মেধাবী শিক্ষাথীদের বৃত্তি প্রদান, অসহায়ের চিকিৎসা সেবাসহ নানান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামটি বরিশালের প্রত্যন্ত পল্লি এলাকা হওয়ায় এখানকার অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এই হতদরিত্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য আমরা দিনব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্পের আয়োজন করেছি। ক্যাম্পের মাধ্যমে নিউরী সার্জারী বিশেষজ্ঞা লেঃ কর্নেল মো. আল-আমিনের নেতৃত্বে শিশু, গাইনী, অর্থপেটিক, মেডিসিন, ডায়াবেটিকস, চক্ষু, নাক কান গলা, হৃদ রোগ বিশেষজ্ঞাসহ ১৫ জন চিকিৎসক আগত রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাপত্র ও ওষুদ প্রদান করেন। রোগীদের মাঝে দশ লক্ষ টাকার ওষুদ বিতরন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, এই চিকিৎসা ক্যাম্পে উজিরপুরের কাংশী, উত্তর কাংশী, দক্ষিন কাংশী, বাবরখানা, ধামুরা, শোলক, খাটিয়ারপাড়, হস্তিশুন্ডসহ আশপাশের ১০টি গ্রামের প্রায় ৩থেকে ৪ হাজার রোগী সেবা নিতে আসেন। সেবা নিতে আসা খাটিয়ারপাড় গ্রামের মোতালেব মৃধার স্ত্রী সুফিয়া বেগম(৫৫) বলেন, মুই খুব খুশি, অর্থের অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছিলাম না এই ক্যাম্পে আইয়া বিনা পয়সার ডাক্তার দেখাইছি এবং ওষুদ পাইছি। কাংশী গ্রামের শাহনাজ বেগম(৪৫) বলেন, মোর মাইয়া সালমা(১৫) অনেক দিন ধইররা মহিলাজনিত রোগী ভূগছিল অর্থের অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারি নাই। আইজ বিনা পয়সার এখানে ডাক্তার দেখালাম। বাবারখানা গ্রামের মো. ইউনুস সরদারের স্ত্রী সালেহা(৪২) বলেন, মোর স্বামী একজন দিনমজুর যা আয় করে তা দিয়ে সংসার চলে না। দীর্ঘদিন অসুস্থ্য টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছি না। তাই এহানে আইয়া বিনা পয়সার ডাক্তার দেহাইছি। এইভাবে সব সময় চিকিৎসা দিলে খুবই ভাল অইত।
ওয়াজেদ আলী(৭৭) বলেন, অর্থের অভাবে চিকিৎসা চলছিল না, এই সুযোগ ডাক্তার দেখালাম বিনা পয়সার ওষুদ পাইলাম।
শোলক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম(৫০) বলেন, এই ক্যাম্পের মাধ্যমে দিনব্যাপী প্রায় চার হাজার রোগীকে চিকিৎসা পত্র ও বিনামূল্যে ওষুদ প্রদান করা হয়েছে। এতে ১০টি গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ সেবা পেয়েছে। এ ধারা অব্যহত রাখার জন্য তিনি আহবান জানান। ধামুরা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম সরদার(৫৫) বলেন, এই ধরনের স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প করায় আমরা খুবই খুশি। কারন প্রত্যন্ত পল্লির হতদরিদ্র মানুষ সেবা পারছে। প্রতি বছর এই ক্যাম্প করার জন্য তিন দাবি জানান। এ ধরনের প্রসংসনীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ধারাবাহিকতা চালু রাখার আহবান জানান, মাদ্রসা পরিচালনা কমিটির চেয়ারম,্যান মো. সিরাজুল ইসলাম(৭৫), মাদ্রসার সুপারেন্ডটেন্ড আব্দুল আউয়াল(৬০) ও মানসুর আলী সরদার।
কাংশী ডেভলপমেন্ট সোসাইটি(কেডিসি)র চেয়ারম্যান বলেন, আমরা কাংশী ও আশপাশ গ্রামের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করেছি । ভবিষ্যাতে আমরা উজিরপুর উপজেলাকে এর আওতায় নিয়ে আসবো। এ ছাড়া কাংশীতে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মানের জন্য প্রকল্প গ্রহন করবো।