গৌরনদী
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির উপর হামলার চার মামলা, সাবেক মেয়র হারিচ-ভিপি সুমনসহ ২৩৪ আসামি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগের হামলা-মামলা ও নির্যাতনের কারনে গত সাড়ে ১৫ বছর বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা ছিল এলাকা ছাড়া। ছাত্রলীগ-যুবরীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মহড়া দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মির বাড়িতে হামলার ঘটনা ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার। গত ১৫ বছরে অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটলেও থানা কোন মামলা নেয়নি। বিএনপি নেতাকির্মদের উপর হামলার পুরানো ঘটনায় চলতি মাসে গৌরনদী মডেল থানায় চারটি মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা। চার মামলার প্রতিটি মামলায় গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মাহমুদ ওরফে ভিপি সুমন ২৩৪ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে নেতাকর্মিকে আসামি করা হয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইউনুস মিয়া জানান, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ বদিউজ্জামান মিন্টু বাদি হয়ে দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর হামলার ঘটনায় গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মাহমুদ ওরফে ভিপি সুমনকে প্রধান আসামিসহ ২৪ নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪০/৪৫ জনকে আসামি করে গৌরনদী থানায় মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করা করেছে।
মামলার আসামিরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল হাওলাদার, সাধারন সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র হারিছুর রহমান, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুন্সি, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি স্বপন হাওলাদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রেঝাউল করিম টিটু, সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সুমন মাহমুদ ওরফে ভিপি সুমন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পৌর কাউন্সিলর সুজন হাওলাদার, পৌর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক প্রিন্স রোনাল্ড বেপারী, সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রাতুল শরীফ, আ’লীগ নেতা নয়ন শরীফ, (কালা) আল-আমিন, ওলামালীগের নেতা মাওলানা নুরুল হক, সালাম হাওলাদার, সৈয়দ দিদার, রাসেল ফকির, সাকিল ওরফে মোটা সাকিল, জসিম শরীফ, সুমন সরদার, কালু তালুকদার ওরফে হাতকাটা কালু, রায়হান মিয়া, রাসেল রাঢ়ী, মামুন মিয়া, সাগর মোল্লা।
মামলার বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, মামলার আসামিরা ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর বাদআছর সরকারি গৌরনদী কলেজ মসজিদে হামলা চালিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়। ওইদিন সন্ধ্যায় জয়নাল হাওলাদার ও হারিছুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০টি মোটর সাইকেল যোগে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজারে এসে আসামিরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় আসামিরা রমেন শীলের সেলুনে ঢুকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে বাদি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ভিপি সুমন বদিউজ্জামান মিন্টুকে লক্ষ্য করে গুলি করলে গুলি কের। তখন সাগর মোল্লা ও রায়হান মিয়া দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে বাদিকে (মিন্টু) কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। গৌরনদী মডেল থানায় দ্বিতীয় মামলাটি করেন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক শরীফ শাহাবুব হাসান ওরফে শাহাবুব শরীফ। এতে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মাহমুদ ওরফে ভিপি সুমনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিকে আসামি করা হয়। বাদি এজাহারে উল্লেখ্য করেন, ২০২২ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি বাদি শাহাবুব শরীফ নিজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বসা ছিলেন। এ সময় তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন গৌরনদী পৌর কাউন্সিলর খোকন শিকদার, যুবলীগ নেতা ইকবাল ফকির, ইমরান মৃধা, কাঠ ব্যবসায়ী নুরুল বেপারী, কালু বেপারী, টরকী বন্দরের ব্যবসায়ী রুহল শিকদার, বাবুল সিকদার। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঘটনায় তৃতীয় মামলাটি করেন বিএনপি কর্মি ও ব্যবসায়ী বাচ্চু সরদার। এতে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মাহমুদ ওরফে ভিপি সুমনসহ ২৮ নেতাকর্মীর নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিরা হলেন চাঁদশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মাহমুদুল রহমান সুমন মোল্লা, সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাতুল শরীফ, উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও চাঁদশী ইউপির সদস্য বরকত সরদার, চাঁদশী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান বেপারী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপির সদস্য রনি শিকদার, ইউপি সদস্য রাসেল সরদার মেম্বার, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নয়ন খান, যুবলীগ নেতা সৈয়দ দিদার, মানিক সরদার, সুজন কর্মকার, লতিফ বেপারী, রাসেল ফকির, জাহিদুল সরদার, মাহির কাজী, তানজিল সরদার, আতিক সরদার, শাওন হাওলাদার, সাহব হাওলাদার, রবিউল তালুকদার, শাহাদাত বেপারী, জুলহাস বেপারী, ছাত্রলীগ কর্মী সৈয়দ তুহিন, সৈয়দ জসিম, সৈয়দ নুর, রহিম সরদার, মনিরুজ্জামান বেপারীসহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জন। মামলার এজাহার বলা হয়, আসামিরা দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর রাতে চাঁদশী বাজারে রহিম তালুকদারের ফার্মেসির সামনে হামলা চালায়। এ সময় বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসামি সুমন মোল্লা দা দিয়ে কুপিয়ে ও অন্য আসামিরা পিটিয়ে বাদী বাচ্চু সরদারকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মির বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় চতুর্থ মামলাটি দায়ের করেন চাঁদশী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক ফিরোজ হাওলাদার। এতে মামলায় গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মাহমুদ ওরফে ভিপি সুমনসহ৪৮ জন নেতা-কর্মী নামসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪০ জনকে আসামি করে বুধবার মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য আসামিরা হল, চাঁদশী ইউনিয়ন সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক লুৎফর রহমান মোল্লা, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিয়ান ইসলাম রাতুল শরীফ সহ ৪৮ জন। বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর সকালে মামরার বাদি ফিরোজ হাওলাদার পশ্চিম শাওড়া খান বাড়ির সংলগ্ন দিয়ে যাওয়া সময় পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা মামলার প্রধান আসামি হারিছুর রহমানের নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে আসামিরা বাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এ সময় বাদি মাথা সড়িয়ে ফেললে প্রতিবেশী হেপী আক্তারের মাথায় কোপ লেগে গুরুতর জখম হয়। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, চার মামলায় ২৩৪ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে নেতাকর্মিকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে।