গৌরনদী
বিনা নোটিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেডবিহীন ৪টি বসতবাড়ি গুড়িয়ে দিলেন গৌরনদী পৌর কর্তৃপক্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী পৌর সভা কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের খামখেয়ালী ও সেম্বচ্ছাচারিতায় ৪টি পরিবার একমাত্র মাথা গোজার ঠাই বসত ঘর হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে । ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ মহল্লার সড়ক সংস্কার করতে গিয়ে বিনা নোটিশে, নিয়মনীতির তোযাক্কা না করে এবং ম্যজিস্ট্রেডবিহীন গৌরনদী পৌর কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার ও পৌর মেয়রের একান্ত সচিব গত দুই দিনে ৪টি আধাপাকা বসত গুড়িয়ে দিয়েছে। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে নিন্ম আয়ের ওই পরিবারগুলো। তাদের অভিযোগ বসতঘর ভাঙ্গ শুরু করলে তারা পৌর মেয়রের কাছে লিখিত সময় চেয়ে আবেদন করলেও কোন সময় দেয়া হয়নি। এতে চারটি পরিবারের দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থরা জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে মহল্লার বাসিন্দা, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার, পৌরকর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের দক্ষিন বিজয়পুর মহল্লার বাসিন্দারা আধাপাকা পুরানো সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে আসছিল। মহল্লার বাসিন্দাদের সুবিধ্যার্থে পৌর কর্তৃপক্ষ পৌর সভার দক্ষিন বিজয়পুর মহল্লার পোদ্দার বাড়ি সেতু পশ্চিম পাশ থেকে দক্ষিনে হালিম শরীফোর বাড়ির কোনা পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের জন্য ২০১৬-২০১৭ইং অর্থ বছরে একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি মাসে ঠিকাদার কাজ শুরু করেন।
মহল্লার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আইনুল হক খান(৭৫), মোঃ আতাউর রহমান(৬২), অনিমা পাÐে(৪৫) মোঃ জিল্লুর রহমান(৬০) জানান, আমরা বাড়ি করার সময় রাস্তার জন্য জায়গা রেখে বাড়ি ঘর নির্মান করেছি। পৌর সভার রাস্তা সম্প্রসারনে আরো জমি প্রয়োজন হলে তা আমরা দিতে রাজি আছি। কিন্তু সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করলে পৌর কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার আমাদের কোন রকম কিছু না জানিয়ে আমাদের আধাপাকা ভবনে ষ্কাভেটর দিয়ে বসত ঘর ভেঙ্গা শুরু করে । ভাঙ্গার খবর পেয়ে পরবর্তিতে তারা পৌর মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ হারিছুর রহমানের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করলে তিনি কোন পাত্তাই দেননি। আমাদের মালামাল সরানোর কোন সুযোগ না দিয়ে জুলুম করে অন্যায় ও অবৈধভাবে ভাবে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। সড়ক উন্নয়ন হবে আমাদের যাতায়াতের জন্য । আমাদের গৃহহারা করে নয়। এভাবে জুলুম করে সড়ক সংস্কার করা স্চ্চোচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়াই কিছুই নয়।
মাথা গোজার ঠাই বসত ঘর হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অবঃসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আইনুল হক বলেন, একশ দেড়শ টাকা বেতনে চাকুরী করে অবঃসরে গিয়ে কিছু টাকা পেয়ে ২০/২৫ বছর আগে আধাপাকা বাড়ি ঘর নির্মান করে স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম বসবাস করছি। রাস্তার মধ্যে আমার ঘর পরেও নাই। তারপরেও আমার বসত ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল পৌর মেয়র ও ঠিকাদার । তিনি আরো বলেন, আমাকে কোন নোটিশ দেয়নি এমনকি আমি মেয়রের কাছে সময় চাইছি তাও দিল না। ঘর ভেঙ্গে দিয়ে আমার ৪০/৪৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে। একইভাবে আহাজাড়ি করে বিধুবা অনিমা পাÐে বলেন, আমি অসহায় বহু কষ্টে একটি আধাপাকা ঘর করেছিলাম পৌর সভা এভাবে আকস্মিকভাবে অন্যায়ভাবে ভেঙ্গে দিবে তা ভাবতেও পারিনি। আমাকে কোননোটিশও দেয়া হয়নি। নৌ-বাহিনীর সদস্য মোঃ জিল্লুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমি সামান্য ছোট চাকুরী করে পরিবারের ভরন পোষন ও ছেলে মেয়ের পড়াশোনা করিয়ে একটু মাথাগোজার ঠাই করেছিলাম। তা রাস্তার মধ্যে পড়েনি তবুও ভেঙ্গে দেয়া হল। ২০/২৫ বছর ধরে বসবান করছি। ঘর অপসারন করতে হলে কিছু আইনকানুন রয়েছেকিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোন নোটিশ না দিয়ে ম্যজিষ্ট্রেড ছাড়া ভেঙ্গে দেওয়া হল। আকস্মীক ভেঙ্গে দেয়ায় ভবন ও ঘরের মালামাল বিনষ্ট হয়ে ২৫/৩০ লক্ষ টাকা ক্ষমিগ্রস্থ হয়েছি।
এ প্রসঙ্গে মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ মাহবুব তালুকদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার নামে লাইসেন্স কিন্তু প্রকৃত ঠিকাদার পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমানের একান্ত সচিব ও যুবলীগ নেতা মোঃ আল আমিন এ বিষয়ে সে-ই ভাল বলতে পারবে। ঠিকাদার আল আমিনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের লোকজন নিয়ে বাড়ির মালিকদের সঙ্গে নিয়ে ঘর দুয়ার অপসারন করেছে, অভিযোগ সত্য নয়। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি তা রিসিপ করেননি। এ অভিযোগ সম্পর্কে পৌর কাউন্সিলর গোলাম রাসেল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় আমি কিছুই জানি না। এ প্রসঙ্গে পৌর সভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এমদাদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়ক সংস্কার চলছে জানি কিন্তু বসতঘর উচ্ছেদ সম্পর্কে কিছুই জানি না। পৌর সচিব মোঃ সফিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা নাসরিন বলেন, যে কোন উচ্ছেদের পূর্বে নোটিশ দেয়া বিধান রয়েছে। বিনা নোটিশে, বিনা আদেশে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেড ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সম্পূর্ন অবৈধ।