গৌরনদী
স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান না হওয়ায় ৪৮তম গৌরনদী প্রতিরোধ দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম / ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল । পাকিস্তানি পাক হানাদার অত্যাধুনিক অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দক্ষিাঞ্চলের ৬ জেলার অবস্থান নিতে সড়ক পথে বরিশালের উদ্দেশ্যে হন। পাক বাহিনী মাদারিপুর পর্যন্ত এসেছে এ খবর পেয়ে মুক্তি বাহিনীর ৩৭ সদস্যের একটি দল দক্ষিনাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার সাউদের খালপাড় নামক স্থানে অবস্থান নেন। শক্তিশালী পাক বাহিনীর সংঙ্গে শুধুমাত্র থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে এক ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধে টিকতে না পেরে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হন। ওই যুদ্ধে চার মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সেই থেকে ২৫ এপ্রিল গৌরনদী প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার ৪৮তম গৌরনদী প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। ৪৮ বছরেও শহীদদের স্মরনে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
ওই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া পশ্চিম শাওড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক চোকদার জানান, সড়ক পথে পাক বাহিনী গৌরনদীতে প্রবেশ করছে খবর পেয়ে সেনা বাহিনীর সার্জন সৈয়দ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে আমরা সেনা, পুলিশ, ইপিআর, আনসারসহ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ৩৭ জন সদস্য একটি দল তৈরী হয়ে ৬টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে পাক বাহিনী প্রতিরোধের রওয়ানা হন। তিনি বলেন, আমরা সাউদের খালপাড় গিয়ে দুই ভাগ হয়ে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বটগাছের গোড়ায় একদল এবং পূর্ব পাশে বন ক্ষেতে আরেক দল অপেক্ষা করতে থাকি। দুপুর ১টার দিকে পাক আর্মি সাউদের খালপাড় পৌছার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আর্মির গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছুড়ি পাকবাহিনী পাল্টা গুলি ছুড়লে এক ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে ৭ জন পাক সেনা মারা যান। পাক সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে আমাদের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁদশী গ্রামের পরিমল মন্ডল, নাঠৈ গ্রামের সেনা সার্জেন্ট সৈয়দ আবুল হোসেন, বাটাজোরের মোক্তার হোসেন, গৈলার আলাউদ্দিন সরদার ওরফে আলা বক্স ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। তখন আমরা পিছু হটতে বাধ্য।
ওই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলির ফকির দুঃসহ সময়ের স্মৃতিচারন করে বলেন, আমরা পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে পালিয়ে যাওয়ার পরে পাক সেনারা সাউদের খালপাড়ে আশ পাশের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং বহু নিরিহ মানুষকে হত্যা করে। পরবর্তিতে টরকী, গৌরনদী বাসষ্টÐে এসে শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে সরকারি গৌরনদী কলেজে ক্যম্প স্থাপন করেন। পরবর্তিতে সেখান বরিশালের বিভিন্ন জেলা উপজেলার অবস্থান নেন পাক বাহিনী।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমাÐার মো. মনিরুল ইসলাম, সহকারী কমাÐার আনোয়ার হোসেন, মেজবা উদ্দিন সবুজসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পরেও প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে চার শহীদসহ গৌরনদীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কোন স্মৃতি স্মৃতিস্তম্ভ বা নাম ফলক নির্মিত হয়নি। অনতিবিলম্বে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান ও শহীদদের নাম ফলক নির্মানের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। সাউদের খালপাড় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।