গৌরনদী
গৌরনদীতে কাজ না করে এবার ৪৯ লক্ষ টাকার চূড়ান্ত বিল উত্তোলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এলজিইডির মেমার্স তামিম এণ্টারপ্রাইজের মালিক মো. আফজাল হোসেন কাজ না করে আড়াই কোটি টাকা বিল উত্তোলন করে নেওয়ার রেস কাটতে না কাটতে একই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এবার শৌলকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মান কাজের ৪৯ লক্ষ টাকা চূড়ান্ত বিল উত্তোলর করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শতকারা ২০ ভাগেরও কম কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্বেও গত ১৮ জুন চূড়ান্ত বিল তুলে নেন ঠিকাদার আফজাল হোসেন।
স্থানীয় লোকজন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লী শিশু শিক্ষা বঞ্চিত শৌলকর গ্রামে ১৯৭৬ সালে স্থানীয় মো. মোসলেম আকন, দেবেন্দ্র নাথ হালদার, উপেন্দ্র নাথ হালদার ও ধীরেন্দ্র নাথ হালদার ৪৪ শতাংশ জমি দান ও অনুদান দিয়ে শৌলকর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টি শৌলকর সরকারি প্রাথমিব বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য শ্যামল চন্দ্র ঘরামী ও সুভাষ চন্দ্র মিস্ত্রী জানান, বিদ্যালয়ের লেখাপড়া, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে বিশেষ অবদান রাখায় দিন বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পরে ফলে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকে। টিনের ঘরে শিক্ষার্থী সংকুলান না হওয়ায় ১৯৯৯ সালে বরিশাল এলজিইডি টিনের ঘর ভেঙ্গে সেখানে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মান করে সেখানে পাঠদান করে আসছিল। বর্তমানে প্রায় দেড় শত ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। তিনটি কক্ষের একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যহার করায় বাকি দুটি কক্ষে প্রথম থেকে ৫ম শ্রেনির এতগুলো ছাত্র ছাত্রীর পাঠদান দেয়া সম্ভব না হওয়ায় তারা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন।
গৌরনদী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল এলজিইডি তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী- থ্রি (পিইডিপি-৩) প্রকল্পের অধীনে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে ৪৯ লক্ষ এক হাজার টাকার প্রাককলন তৈরী করে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে দরপত্র আহবান করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আফজাল হোসেনকে ২৩ এপ্রিল ২০১৫ইং কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে ২২ এপ্রিল ২০১৬ ইং শেষ সময়সীমা নির্ধারন করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৌড়াঙ্গ লাল হালদার অভিযোগ করে বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিকাদার যথা সময়ে নির্মান কাজ শুরু করলেও কিছুদিন যেতে না যেতে ২০ শতাংশ কাজ করার পরে একটি চলতি বিল তোলেন এবং কাজ বন্ধ রাখেন। নির্মান কাজ বন্ধ রাখায় ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদানে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। কারন তিনটি কক্ষের একটিতে ঠিকাদার মালমাল সংরক্ষন করেন। আর দুটি কক্ষে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান ও লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। ফলে ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক পাঠদান একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার গত সোয়া দুই বছর ধরে কাজ না করে ফেলে রাখার বিষয়টি বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিদেরকে অসংখ্যবার লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে কিন্তু তারা কোনই পদক্ষেপ গ্রহন করেন না। নবনির্মিত ভবনের কাজ শেষ না করায় ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি সর্বশেষ গত ৭ জুন (২০১৭) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয় ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন কক্ষের পুরাতন ভবনটির একটি কক্ষে ঠিকাদার মালামাল রাখতে দুই বছর ধরে আটকে রেখেছে। অপর দুটি কক্ষে একটিতে পঞ্চম শ্রেনি ও আরেকটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনির পাঠদান চলছে এক সঙ্গে। এসময় সহকারী শিক্ষক হাসিনা মমতাজ বলেন, ছোট একটি কক্ষে এক সঙ্গে দুই শ্রেনির পাঠ করায় উভয়ের ক্লাসেরর ছাত্রছাত্রীদের কথাবার্তায় পড়াশোনা ব্যহত হয়। পুরাতন ভবনের পাশেই নির্মানাধীন ভবনটি। সেখানে দেখা যায়, ফাউ-েশন ও গ্রেট বিম করার পরে শুধুমাত্র ভবনের কলামগুলো করা হয়েছে। আর কোন চাজ করা হয়নি। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় অভিভাবক মো. শাহজাহান সরদার, আব্দুল মালেক বলেন, গত দুই বছর ধরে ঠিকাদার আফজাল হোসেন শতকরা বিশ ভাগ কাজ করতে পারে নাই। স্বেচ্ছাচারীভাবে কাজটি এভাবে ফেলে রেখেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমা রানী নাথ বলেন, আমি বহুবার অফিসে ধর্না দিয়ে কাজ শেষ করার অনুরোধ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
গৌরনদী উপজেলা এলজিইডির অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তামিম এণ্টারইজের মালিক মো. আফজাল হোসেন প্রকল্পটির চূড়ান্ত বিল নিয়ে গেছে। বাস্তবে শতকরা ২০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও তিন মাস পূবেই ৪৯ লক্ষ এক হাজার টাকার চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করা হয়। এ প্রসঙ্গে ঠিকাদার আফজাল হোসেন বলেন, মালামাল পরিবহনে সমস্যা থাকায় কাজটি করতে বিলম্ব হয়। দুই একদিনের মধ্যে কাজ শুরু করবো। শতকরা ২০ ভাগ কাজ করে চূড়ান্ত বিল নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখনো এ কাজের চূড়ান্ত বিল নেইনি। প্রকল্প তদারকি কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান বলেন, চূড়ান্ত বিল দেয়া হয়েছে এটাই সঠিক কথা। কিভাবে দেয়া হয়েছে এর উত্তর আমার কাছে নাই বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী বলতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী ফজল আহম্মেদ বলেন, ঠিকাদারকে কোন বিল প্রদান করা হয়নি। শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে। গৌরনদী উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুল বারেক বলেন, শৌলকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মান কাজের ঠিকাদার মেসার্স তামিম এন্টাপ্রাইজের মালিক মো. আফজাল হোসেনকে চূড়ান্ত বিল বাবত ৪৯ লক্ষ এক হাজার টাকা বিল প্রদান করা হয়েছে।