গৌরনদী
গৌরনদীতে ঠিকাদারের গাফলতি কেঁড়ে নিল শিশুর প্রান
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদীতে ঠিকাদারের অনিয়ম ও গাফলতিতে কেঁড়ে নিল প্রথম শ্রেনির এক শিশুর প্রান। এ ছাড়া ৩০টি দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে আহত হয়েছে আরো শিশু শিক্ষার্থী, বৃদ্ধা, নারীসহ ৩০ পথচারী। এলাকাবাসী একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরেও কোন ব্যবস্থা নেননি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. হানিফ সিকদার।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, আহত-নিহতদের স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ত্রান ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয় ২০১৬-২০১৭ইং অর্থ বছরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা-বাকাই খালের উমেদ আলী বাজার সংলগ্ন এলাকায় ৩০ ফুট দীর্ঘ সেতু নির্মাণে ২৪ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯শত পনের টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প গ্রহন করে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দরপত্র আহবান করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মেমার্স তামিম এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের শুরুতেই অনিয়ম দুর্ণীতি ও গাফলতির শুরু করেন। ঠিকাদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে খামখেয়ালি ও স্বচ্ছাচারিতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নেন। ফলে সাধারন মানুষের চরম দূর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে গত দুই মাসে প্রায় ৩০টি দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এতে এক শিশু শিক্ষার্থী নিহতসহ ৩০ জন শিশু, নারী ও বৃদ্ধা আহত হয়েছে।
বরিশাল ত্রান ও দুর্যোগ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানান, সেতু নির্মাণের পূর্বে এলাকাবাসী ও পথচারীর যাতায়াতের জন্য একটি বিকল্প সড়ক নির্মান কথা ছিল কিন্তু ঠিকাদার বিকল্প সড়ক নির্মান না করে বিকল্প সেতু নির্মানের বরাদ্দ আত্মসাত করেন। বিকল্প সেতু নির্মান না করে মূল সেতু নির্মানের কাজ শুরু করেন। এতে সেতু নির্মানকালীন সময়ে প্রায় তিন মাস পথচারীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আবার সেতু নির্মান কাজ শেষ করার পরে সেতুর গোড়ায় দুই পাশে মাটি না দেয়ায় গত তিন মাস ধরে সেতুটি মত্যৃ ফাঁদে পরিনত হয়েছে।
ডুমুরিয়া গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান(৬৫), ইল্লা গ্রামের নুর আলম সরদার(৬৩)সহ গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সেতু নির্মান কাজে অনিয়ম দুর্নীতি ও গাফলতি করেছেন। নির্মান কাজ শেষ করে সেতুর গোড়ায় মাটি না দেয়ায় প্রতিদিন শত শত পথচারীকে দূর্ভোগ ও দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। রাবেয়া বেগম(৩৫)মাহমুদা আক্তার(৩২), আরিফ হোসেন বলেন, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন বাদুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাদুরতলা মহিলা নুরানী হাফীজিয়া মাদ্রাসা ও ইসলামি ফাউ-েশনের মক্তবে পড়–য়া শত শত শিশুরা যাতায়াত করে থাকে। ঠিকাদার কাজ শেষ করে দুই পাশে মাটি না দেওয়ায় দীর্ঘদিন যাতাযাতসহ শিশুরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকে । পরবর্তিতে এলাকার লোকজন নিজ খরচে সেতুর দুই পাশে বাঁশ দিয়ে সাকো তৈরী করে পথচারী ও শিশু শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। বাঁশের সাকোর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শিশু শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধা, নারীসহ যাতায়াত করে দূর্ঘটনায় শিকার হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইল্লা-বাকাই খালের উমেদ আলী বাজার সংলগ্ন স্থানে খালের মাঝখানে সেতুটি নির্মান কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রায় ৬০ ফুট চওড়া খালের মাঝখানে ৩০ফুট দীর্ঘ সেতু নির্মান করায় সেতুর দুই পাশে কোন মাটির কাজ করা হয়নি ফলে এলাকাবাসী বাঁেশর সাকো তৈরী করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন । সেতুর একশত ফুট উত্তর পাশের একটি বাড়িতে শোকের মাতন চলছে। এ সময় ডুমুরিয়া গ্রামের আকবর আলী কাজী(৬০) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ব্রিজের কন্টাক্টর মোর সব কাইয়া নিছে। মুই মোর পোলারে কি জবাব দিমু”। তিনি জানান, দুই দিন আগে তার সৌদি প্রবাসী পুত্র মিজানুর রহমানের একমাত্র পুত্র বাদুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনির ছাত্র সেতু পার হওয়ার সময় বাঁশের সাকো উঠলে পা ফসকে খালের পানিতে ডুবে মারা যান। গ্রামের সুলতানা আক্তার বলেন, কয়েকদিন আগে তার শিশু পুত্র বাদুর তলা স্কুলের ছাত্র পা ফসকে পড়ে গেলে পথচারীরা ঝাপিয়ে পড়ে মূমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে। পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের আয়শা বেগম(৩০) বলেন, কিছু দিন আগে আমার কন্যা তৃতীয় শ্রেনির ছাত্র হাফিজা ও আমার পুত্র প্রথম শ্রেনির ছাত্র আল আমিন স্কুলে যাওয়ার পথে সাকো থেকে পড়ে আহত হন। স্থানীয় ভ্যান চালক আঃ আউয়াল বলেন, বাঁশের সাকো পাড় হতে গিয়ে আমার স্ত্রী নুশরাত বেগম ও পুত্র প্রথম শ্রেনির ছাত্র লেমন আহত হয়। উমেদ আলী বাজার জামে মসজিদের ইমাম মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বাঁশের সাকো পাড় হতে গিয়ে ৩০টিরও বেশী দূর্ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনি নিজেসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেন, বিষয়টি তারা উপজেলা ত্রান ও দূয়োগ অধিদপ্তরের প্রকল্প কর্মকর্তাকে একাধিকবার লিখিতভাবে অবহিত করার পরেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি।
অভিযোগ সম্পর্কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তামিম এন্টাপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো. আফজাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ কিন্তু আমি ঠিকাদার নই। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুল আজিজ ও আঃ মজিদ হাওলাদার। অভিযোগ সম্পর্কে আব্দুল আজিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি না কাজটি করেছেন আ. মজিদ হাওলাদার। আ. মজিদ হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. হানিফ সিকদার বলেন, আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। বরং আমি উদ্যোগী হয়ে ঠিকাদার আফজাল হোসেনকে চাপ সৃষ্টি করেছি বালু ভরাট করে দেওয়ার জন্য। এ নিয়ে আমার সঙ্গে ঠিকাদারের ঝগড়া হয়েছে।