গৌরনদী
গৌরনদীতে মাদক বিরোধী অভিযান এক মাসে মামলা-৮২, ব্যবসায়ীসহ গ্রেপ্তার ১২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদীতে মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ এসাইমেন্ট নিয়ে গৌরনদী মডেল থানায় যোগদান করেন অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ ফিরোজ কবির। গত এক মাসে মাদক বিরোধী অভিযানে একশত আঠাস জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত এবং ৩০ জনকে নিয়মিত মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুই সহ¯্রাধিক ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
স্থানীয় লোকজন, মাদকাসক্ত পরিবারের অভিভাবক ও পুলিশ জানান, গৌরনদী উপজেলার সর্বত্র মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়ে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে দিন দিন বেড়েছে আসক্তের সংখ্যা। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেনির প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসার জড়িয়ে পড়ায় প্রশাসন অসহায় পড়েন। ২ এপ্রিল গৌরনদীকে মাদকমুক্ত করতে গৌরনদী মডেল থানায় যোগদান করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবির। এসেই তিনি ঘোষনা দিলেন “হয় গৌরনদীতে মাদক ব্যবসায়ী থাকবে, না হয় ওসি ফিরোজ কবির থাকবে”। মাদক নির্মূল করতে দৃঢ় শপথ নিয়ে কাজ শুরু করেন ওসি ফিরোজ কবির। যোগদানের পরে দিন রাত অবিরাম চেষ্টা আর অভিযান শীর্ষ স্থানীয় মাদক ব্যসায়ীদের পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছেন।
গৌরনদী মডেল থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ ইয়াবা, গাঁজা ও ফেন্সিডিলসহ একশত আঠাস জন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীকে গ্রেপ্তার করে ৮২টি মামলা হয়। তার মধ্যে ১৯টি নিয়মিত মামলায় আদালতের মাধ্যমে ৩০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছ্ ে এবং ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৬৩টি মামলায় ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। ্৪৮ জনকে ছয় মাস করে এবং ৫০ জনকে তিন মাস থেকে এক মাস মেয়াদে কারাদ- দেয় ভ্রম্যমান আদালত।
পুলিশ গৌরনদীর মাহিলাড়া এলাকা থেকে দক্ষিনাঞ্চলের বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা মো. মানিক মাঝি(৪০)কে ১২০পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার। তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিন আঞ্চলিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা করেছে। স্থানীয়রা জানান, গ্রেপ্তারকৃত মানিক মাঝি দলে কোন পদ পদবি না থাকলেও গত ৭/৮ বছর যাবত গৌরনদী উপজেলার প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক স্পটে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, জয়, স্থানীয় সাংসদ, সাংসদ পুত্র আশিক আবদুল্লাহসহ আওয়ামীলীগ নেতাদের ছবির পাশে নিজের ছবি দিয়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয়ে বিশাল বিশাল বিল বোর্ড ব্যানার ফেষ্টুন টাঙ্গিয়ে প্রভাব বিস্তার করে প্রকাশ্যে নিরাপদে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা পরিচালনা করত। মানিক মাঝিকে গ্রেপ্তার করতে সাহস পাননি কেউই। এর আগে মানিক মাঝির ছোট ভাই মো. হিরা মাঝিকে ৯শত ইয়াবাসহ সহযোগী ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ মোল্লা, শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। । গৌরনদীর টরকীর টরকী এলাকা থেকে বিপুল পরিমান ইয়াবা মাদানি সিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে। গৌরনদী বন্দরস্থ তিনবেলা হোটেলের সামনে থেকে রাত পোনে ১টায় ইয়াবাসহ মাদক বিক্রেতা উপজেলার চরগাদাতলী গ্রামের বিপ্লব সরদার (২৬), উত্তর পালরদী গ্রামের মাহাবুব খান (৩৬) ও ইয়াবাসেবী গৌরনদী এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈনুল আজম (৪২)কে গ্রেফতার করেছে। গৌরনদীর সুন্দরদী এলাকা থেকে পুলিশের তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী সোহাগ হাওলাদারকে ১৯৮ পিস ইয়াবা ও একই এলাকা থেকে ২৬১ পিস ইয়াবাসহ আরিফ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে। উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের ইয়াবা ব্যবসায়ী সুমন সরদারকে বোরাদি গরঙ্গল গ্রাম থেকে ১০০পিস ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
গৌরনদীকে মাদকমুক্ত করতে নবাগত ওসি ফিরোজ কবিরের ভূমিকার প্রশংসা করে গৌরনদী সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহির মাদকের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবির মাদক বিরোধী অভিযান সম্পর্কে বলেন, আমি যোগদানের পূর্বে গৌরনদীতে মাদকের ব্যপক বিস্তার ঘটেছে। উর্ধতন কর্তপক্ষের নির্দেশে মাদকমুক্ত করার বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে যোগদান করেছি। মাদক ব্যবসায়ী কোন দলের কত ক্ষমতাধর তা বিবেচ্য বিষয় নয়, কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হবে না। ২ এপিল থেকে ২ মে পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযানে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার হলেও গৌরনদীকে মাদকমুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যহত থাকবে। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা আওয়ামীলীগ কিংবা সহযোগী সংগঠনের কোন পর্যায়ের নেতা কর্মি নয়। কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকতে পারে। মাদক ব্যবসায়ীর একটাই পরিচয় সে মাদক ব্যবসায়ী। মাদক নির্মূল করতে দলের পক্ষ থেকে পুলিশকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক, বরিশাল -১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করেছে। এমন কি দলের কেউ কোন ততবির করতে গেলে তাদেরকেও গ্রেপ্তারের নিদের্শনা দিয়েছ্নে। মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান মাদক নির্মূলে প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করার জন্য দলের প্রতিটি নেতা কর্মিকে আহবান জানান।