গৌরনদী
গৌরনদী হাইওয়ে পুলিশের বেপরোয়া চাাঁদাবাজি, অতীষ্ট যান চালক ও সাধারন মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে । ঢাকা Ñ বরিশাল মহাসড়কে ভুরঘাটা থেকে নতুন হাট ৩২ কি: মি: সড়কে চলাচলকারী যানবহনের চালকরা পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে । প্রতিদিন সকাল থেকে গভির রাত পর্যন্ত চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ মালামাল ও কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে বিভিন্ন পন্য বোঝাই ট্রাক, পিকআপ, নসিমন, করিমন, মাইক্রবাস থেকে মালামাল বহনের উপর নির্ভর করে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা প্রর্যন্ত উৎকোচ আদায় করছেন। চাহিদা মাফিক উৎকোচ দিতে অস্বীকার করলে ঠুকে দেয়া হয় বিভিন্ন হয়রানি মূলক মামলা । গতকাল সোমবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত হাইওয়েতে অভিযান চালান ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুব আলম। এসময় তিনি ১২টি অবৈধ যানবাহনকে একটি মামলায় অর্ন্তভূক্ত করে ৪ হাজার ৮শত টাকা জড়িমানা আদায় করেন। স্থানীয়রা জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুব আলম দুপুর ১টায় অভিযান শেষ করে চলে যাওয়ার পরে হাইওয়ে পুলিশ গনহারে অবৈধ যানবাহন আটক করেন। হাইওয়ে সড়কে চলাচলকারী প্রায় শতাধিক অবৈধ নসিমন, করিমন, ইজিবাইক আটক করে হাইওয়ে থানার সামনে মাঠে আটকে রাখেন এবং মামলার ভয়ভীতি দেখান। পরবর্তিতে স্ব-স্ব মালিকরা দফারফা করে প্রতিটি যানবাহন বাবত ২ থেকে ১০ হাজার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নেন। হাইওয়ে থানার ইনচার্জ একদিনেই এসব অবৈধ যানবাহন থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন ।
এ ছাড়া অবৈধ যাত্রিবাহী যানবহন, নছিমন, করিমন, টেম্পু, বেটারি চালিত অটো, মাহেন্দ্রা, মটরসাইকেল থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় করা হয় । সরকারি নিতিমালা অনুযায়ী মহাসড়কে সকল ধরনের নছিমন, করিমন, টেম্পু, বেটারি চালিত অটো, মাহেন্দ্রা চলাচলের হলেও গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিলেই বৈধতা পান। গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ বেপরোয়া চাাঁদাবাজির মাধ্যমে প্রতিমাসে অবৈধভাবে ৭/৮ লাখ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করে থাকেন। পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট সাধারন যান চালক।
যান চালক, স্থানীয় লোকজন, হয়রানীর শিকার ও ভূক্তভোগীরা জানান, মহাসড়কে মাহিন্দ্র, ইজি-বাইকসহ থ্রি-হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ২০ কিলোমিটার মহাসড়কে মাহিন্দ্র, ইজি-বাইকসহ থ্রি-হুইলার অবাধে চলাচল করছে। উপজেলার গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড মাহিন্দ্র শ্রমিক সমিতিভূক্ত ১৪৪ টি, টরকী বন্দর ইজি-বাইক স্ট্যান্ডভূক্ত ৫৮টি, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডভূক্ত ইজি-বাইক ৩৪টি, বাটাজোর বসস্ট্যান্ডভূক্ত ৩২টি মাহিন্দ্র রয়েছে। এসব থ্রি-হুইলার গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড থেকে ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড, টরকী বন্দর ইজিবাইক স্ট্যান্ড থেকে বার্থী বাসস্ট্যান্ড, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক স্ট্যান্ড থেকে মাহিলাড়া ইজি-বাইক স্ট্যান্ড, ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে ইছলাদী বাসস্ট্যান্ড, বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড থেকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রতিদিন অবাধে চলাচল করছে। এ ছাড়া গৌরনদী, টরকী, বাটাজোর, বার্থী, মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডভূক্ত ভাড়ায় চালিত অর্ধশতাধিক মোটর সাইকেল প্রতিদিন এ মহাসড়কে চলাচল করছে। এ মহাসড়কে ভাড়ায় চালিত অনেক মোটর সাইকেলের লাইসেন্স নেই। আবার অনেক মোটর সাইকেল চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। হাইওয়ে থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে এসব মোটর সাইকেল মহাসড়কে চলছে। এ মহাসড়কে অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচল করায় প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। গত চার বছরে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৪০ জন মারা গেছে ও ২ শতাধিক আহত হয়েছে। সড়কে প্রানহানির ঘটনায় গৌরনদী থানায় ২০টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতা জানান, নসিমন, করিমন, ইজিবাইক প্রতিটি গাড়ী থেকে মাসিক ২/৩ শত টাকা আদায় করে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি ইজিবাইক, নসিমন ও মাহেন্দ্র সমিতি থেকে মাসিক তিন হাজার হাইওয়ে থানাকে পরিশোধ করতে হয়। টাকা দিতে ব্যার্থ হলে চালানো হয় অভিযান। ভূক্তভোগীরা জানান, গৌরনদী হাইওয়ে থানার বিরুদ্ধে কোন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলে দৈনিক ও মাসিক রেড বহুগনে বৃদ্ধি হয়। তখন উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে উৎকোচের অংশ দিতে হবে বলে আরো অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। কালকিনির মাহেন্দ্র চালক সেকেন্দার হোসেন অভিযোগ করেন, তাকে বার্থী এলাকায় আটকে রেখে হাইওয়ে পুলিশ ৫ হাজার টাকা আদায় করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্চুক বার্থী গ্রামের ইজিবাইক চালক অভিযোগ করেন, তাকে আটকে হাইওয়ে পুলিশ দুই হাজা টাকা দাবি করেন টাকা না দেওয়ায় আটকে হাইওয়ে থানায় নিয়ে এসে মামলা দিয়ে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিদিন গৌরনদীর মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোষ্ট বসানোর নামে মানুষকে হয়রানী অর্থ আদায় করা হয়।
টরকী বন্দর ইজি-বাইক স্ট্যান্ডভূক্ত ইজি-বাইক চালক হায়দার মাঝি, কাশেম সরদার বলেন, টরকী বন্দর ইজি-বাইক স্ট্যান্ডে ইজিবাইক শ্রমিকদের কোন সমিতি নেই। এখান থেকে গৌরনদী ও বার্থী বাসস্ট্যান্ডে ৫৮টি ইজিবাইক চলাচল করে আসছে। হাইওয়ে থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে পক্ষে রাখার জন্য সরকারি দলের রাজ্জাক তালুকদার টরকী বন্দর ইজিবাইক স্ট্যান্ড ফি বাবদ আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২৫ টাকা করে ও প্রতি মাসে আরো ১০০টাকা করে আদায় করছে। পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই মহাসড়কে ইজিবাইক চালাই।বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডভূক্ত মাহিন্দ্র চালক আলামিন সরদার, মিঠু হাওলাদার বলেন, বাটাজোরে মহিন্দ্র শ্রমিকদের কোন সংগঠন না থাকায় হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দেয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৬ শত টাকা দিতে হয় । মাসোহারা দিয়ে আমরা অবৈধ ভাবে মহাসড়কে মাহিন্দ্র চালাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক চালক বলেন, গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ ইল্লা দাখিল মাদ্রাসার দক্ষিন পাশে, তাঁরাকুপি, বেজগাতি, কাছেমাবাদ, কটকস্থল, বেজহার, বেজগাতি, আশোকাঠি, বাটাজোর বাইচখোলা এলাকায় বিভিন্ন সময় চেকপোস্ট বসিয়ে কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের নামে বিভিন্ন অজুহাতে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে ১’শ টাকা ধেকে ৫’শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। এ সময় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডের নির্ধারিত ষ্ট্রীকার বিহীন থ্রি-হুইলার চালকদের কাছ থেকেও ৫০ টাকা ধেকে ১০০টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদার করে থাকে পুলিশ। উল্লেখিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা মহাসড়কে চলন্ত অবস্থায় থ্রি-হুইলার পেলে তা আটক করে জরিমানা আদায় করি।
এলাকার অনেকেই জানান, রাস্তার মধ্যে যানবাহন থামিয়ে ঘুষের অর্থ আদায় করার সময় সড়কে দীর্ঘ লাইন দেখা দেয়। এসময় ঝানঝট ও দূর্ঘটনাসহ নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। গত বছর গৌরনদী ক্যাথলিক চার্জের দক্ষিন পাশে হাইওয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করতে গিয়ে একটি লোকাল বাস দূর্ঘটনার শিকার হয়ে কর্তব্যরত হাইওয়ে থানার এক কনষ্টবলসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজসহ তিন জন মারা যান। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় সহ¯্রাধিক অবৈধ ক্ষুদ্র যান আটক করে পরবর্তিতে টাকা বিনিময়ে সব যান ছেড়ে দেয়। মহাসড়কে যান চালকরা জানান, পূর্বে যে কোন ওসি মহাসড়কে উৎকোচ আদায়ে গোপনীয়তা সহনশীল পর্যায়ে থাকলেও বর্তমান ওসি মোঃ শাহাদাত হোসেন আসার পরে প্রকাশ্যে ও বেপরোয়াভাবে উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে। কখনো কখনো ওসি শাহাদাত হোসেন হুংকার দিয়ে বলেন, খুটির জোর নিয়ে গৌরনদী হাইওয়ে থানায় পোষ্টিং নিয়েছে পত্রিকায় লিখে বা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ দিয়ে আমার কিছু করতে পারবে না। জনমনে প্রশ্ন ওসি শাহাদাত হোসেনের খুটির জোর এতই বেশী যে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে না।
গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তারা মহাসড়কে মাদক পাচারকারী একাধিক গ্রুপের সঙ্গে ও জাটকা পাচারকারীসহ বিভিন্ন অবৈধ মামলামাল পরিবহনকারীদের কাছ থেকে মাসিক মাসোয়ারা নিয়ে অবৈধ কাজে সহায়তা করে আসছে। কয়েকজন ট্রাক চালক, স্থানীয় মিনি ট্রাক চালকরা জানান, তারা গৌরনদী হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। চলতি বছর হাইওয়ে থানার সঙ্গে দশ ফুট দুরত্বে মা মনি জুয়েলার্সে দূধর্ষ ডাকাতি সংগঠিত হয়। পুলিশ ছিল নির্বিকার। অনেকেই মন্তব্য করেন, ডাকাতের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের যোগসূত্র ছিল কিনা? । স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল ওই ডাকাতসকল অভিযোগ সম্পর্কে গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি মোঃ শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানী করে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয়।