গৌরনদী
গৌরনদীর সাবেক মেয়র-আওয়ামীলীগ নেতা সন্ত্রাসী দানব খ্যাত হরিচের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বিশস্থ সহযোগী গৌরনদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হারিছুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মার্কেট দখলসহ বিস্তর অভিযোগ থাকলেও ৫ আগষ্ট শেখ পালিয়ে যাওয়ার পরে হারিছের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় ৫টি মামলা দায়ের করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা। গ্রেপ্তারের খবর গৌরনদীতে ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার দুপুর বারটায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে হারিছুরের ফাঁসীর দাবীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপির নেতাকর্মী, ক্ষতিগ্রস্থ ও ভূক্তবোগীরা। গত উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গৌরনদীতে হারিছুর রহমানের ১৭ বছরের একছত্র আধিপত্যের অবসান হয়েছিল। পরবর্তিতে শেখ হাসিনার পতনের পরে আত্মগোপনে ছিল হারিছুর রহমান।
স্থাণীয়রা জানান, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ অনুসারিদের মতে গোটা দক্ষিনাঞ্চলের অভিভাবক হলেও সাধারন মানুষের চোখে আসলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ দক্ষিনাঞ্চলের সন্ত্রাসী গডফাদার। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই পরিচয়ে জেলা ছাড়িয়ে বরিশাল বিভাগে দলের রাজনীতিতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আওয়ামী লীগের অভিভাবক ও শীর্ষ নেতা। হারিছুর রহমােনর নেতৃত্বে নিজের অনুসারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি শক্তিশালী ক্ষমতার কেন্দ্র। দলীয় কমিটি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নকাজের বড় কমিশন আদায় এবং জমি দখলের অভিযোগসহ তার বিরুদ্ধে বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে হাসানাত আবদুল্লাহ ‘বরিশালের গডফাদার’ হয়ে উঠেছিলেন আর গৌরনদীর গডফাদার হয়েছিলেন হারিছুর রহমান। হাসানাতকে টাকা না দিলে জেলায় কোনো সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতো না। দখল, চাদাবাজি ও কমিশন আদায় থেকে শুরু করে হাসানাতের সকল অপকর্মের বিশস্থ সহযোগী ছিলেন মোঃ হারিছুর রহমান। হাসানাতের এসব কাজ করে মধ্যসত্ব ভোগের মাধ্যমে হারিছুর রহমান নিজেও হয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক।
বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা জানান, দক্ষিনাঞ্চলের সন্ত্রাসী গড ফাদার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আসকারা ও সমর্থন পেয়ে হারিছুর রহমান হয়ে উঠেন গৌরনদীর সন্ত্রাসী গডফাদার। হাসানাতের বিশস্থতাকে আরো দৃড় করতে হারিছুর রহমান গত ১৭ বছর গৌরনদীর কয়েক হাজার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিকে বাড়ি ছাড়া করেছেন। হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন ছাড়াও বিএনপি নেতাকর্মির প্রতিটি পরিবারের উপর চালানো হয় অসহনীয় ও নির্মম নির্যাতন। হারিছুর রহমানের সন্ত্রাসী কমান্ডো বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মিকে। গায়েবী মামলার মাষ্টার মাইন্ড হারিছুর রহমান ঘটনা ছাড়াই বিস্ফোরক আইনে মামলাসহ অর্ধ শতাধিক মামলায় আসামি করেছিল গৌরনদীর বিএনপির হাজারো নেতাকর্মিকে।
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মিরা বলেন, ২০০৮ সালে হারিছুর রহমান গৌরনদীতে এসে রাজনীতির শুরু করে যুবলীগের সদস্য হন। পর্যায়ক্রমে সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মনজয় করে তার আস্থাভাজন হয়ে তিনবার (২০১০, ২০১৫, ২০২০এর নির্বাচনে) মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে (হারিছুর) আবুল হাসানাতের আস্থাভাজন হয়ে দলের মধ্যে নিজের ব্যক্তিগত বলয় সৃষ্টি করে গোটা রাজনীতির নিয়ন্ত্রন নিয়ে আওয়ামীলীগের দূর্দীনের ত্যাগি নেতা কর্মিদের রাজনীতি থেকে বিদায় করে দলছুট জামাত বিএনিপর সুবিধাবাদিদের নিয়ে নিজস্ব বাহীনি গড়ে তোলেন। উন্নয়ন প্রকল্প, অফিস-আদালত, থানাসহ সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রনে চলে। হারিস এতই ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন যে, তার কথাই ছিল গৌরনদীতে শেষ কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, হারিছুর রহমান গত ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে নিজস্ব হারিচ বাহিনী গড়ে তুলেছেন। সেই সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে সাহস পান নাই। হারিচ গৌরনদীর দানব হিসেবে পরিচিত লাভ করে। গত ১৭ বছরের প্রচেষ্টায় গৌরনদী উপজেলা ও পৌরসভার সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে দানব প্রতিহত করা হয়েছে। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর দোহাই দিয়ে হারিছুর রহমান থানা ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন নিয়ে গৌরনদীতে রামরাজত্ব কায়েম করেছিল। শেখ হাসিনার পতনের আগেই সুষ্ঠ দুটি নির্বাচনে তার দুঃশাসন থেকে গৌরনদীর নিরিহ মানুষ মুক্তি পেয়েছে। গত ১৭ বছরে হারিছুর রহমানের হাতে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মি শারীরিকভাবে নির্যাতিনের শিকার হয়েছেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে সাহস পান নাই। তারা বলেন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে হাসনাতের সমর্থিত পরাজিত হওয়ার পরে হারিছুর রহমানের একছত্র আধিপত্যর অবসান হয়েছে। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হারিছুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মার্কেট দখলসহ বিস্তর অভিযোগ থাকলেও ৫ আগষ্ট শেখ পালিয়ে যাওয়ার পরে হারিছের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন সময়ে দলীয় আভ্যন্তরীন কোন্দলের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে।