গৌরনদী
গৌরনদীতে জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতার ৬০ হাজার তুলে নিয়েছে এক প্রতারক
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামে প্রতারনার মাধ্যমে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত ব্যাংক চেকের তিনটি পাতা চুরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয়েছে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছয় মাসের সম্মানি ভাতার ৬০ হাজার টাকা।
বুধবার সকালে ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রাজেস্বর মধুর অসহায় স্ত্রী রেহানা বেগম উপজেলা ও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে এ ঘটনায় বিচার দাবি করেন। তাদের অভিযোগে জানা গেছে, বার্থী গ্রামের মৃত পন্ডিত মধুর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেস্বর মধু ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান রেখে মৃত্যুবরন করেন। মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর মৃত্যুর পর নিয়মানুযায়ী রেহানা বেগম সম্মানির টাকা উত্তোলণ করে আসছিলেন। রেহানা বেগম জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর গামেন্টস কর্মী মেয়েদের সাথে তিনি ঢাকার মিরপুরের সেনপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি সময়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ভাতা উত্তোলনের ব্যাপারে পূর্ব পরিচিত বার্থী গ্রামের আব্দুর রশিদ ওরফে রুস্তুম ঘরামীর পুত্র মুক্তিযোদ্ধা জাভেদ সালামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি (জাভেদ সালাম) চেকের দশটি পাতায় স্বাক্ষর করে রেহানার বড় মেয়ে গামেন্টস কর্মী মৌসুমী বেগমকে গৌরনদীতে পাঠাতে বলেন। সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা বাবার সম্মানির ভাতা উত্তোলনের জন্য সোনালী ব্যাংক গৌরনদী শাখার হিসাব নং ১৩৯৫২ চেকের দশটি পাতায় রেহানা বেগমের স্বাক্ষর করা বই নিয়ে মৌসুমী গৌরনদীতে আসেন।
মৌসুমী বেগম জানান, তার কাছ থেকে স্বাক্ষর করা পুরো চেক বইটি নিয়ে জাভেদ সালাম ব্যাংকের মধ্যে তাকে (মৌসুমী) বসিয়ে রেখে দীর্ঘসময় বাইরে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে জাভেদ সালাম তাকে জানায় তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার সম্মানির টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। পরবর্তীতে যোগাযোগ করার কথা বলে চেক বই ফেরত দিয়ে মৌসুমীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সূত্রমতে, ঢাকায় গিয়ে মৌসুমী বেগম দেখতে পান তার মায়ের স্বাক্ষর করা চেক বইয়ের পিছনের তিনটি পাতা কৌশলে খুলে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জাভেদ সালামকে তিনি জানালে সে নানা তালবাহানা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে তিনি ব্যাংকে এসে জানতে পারেন চুরি হওয়া তিনটি চেকের মাধ্যমে তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার ছয় মাসের (২০১৬ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর) সম্মানির ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি জাভেদ সালামকে জানিয়ে তিনি (মৌসুমী) এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে তাকে জাভেদ সালাম বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পূর্ণরায় ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়।
মৌসুমী আরও জানান, এ ঘটনার পূর্বে জাভেদ সালাম তাদের ঢাকার ভাড়াটিয়া বাসায় গিয়ে সরকারীভাবে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নগদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় জাভেদ সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নানাতালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে মৌসুমী তার অসুস্থ্য মা রেহানা বেগমকে নিয়ে বুধবার সকালে গৌরনদীতে আসেন। ওইদিনই তারা চেকের পাতা চুরির মাধ্যমে সম্মানির ছয়মাসের ৬০ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতসহ নগদ ১০ হাজার টাকা ফেরত পেতে জাভেদ সালামের সাথে যোগাযোগ করেন। এসময় বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হলে তাদের মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ দেয়ার হুমকি প্রদর্শন করেন জাভেদ সালাম। উপায়অন্তুর না পেয়ে এ ঘটনায় বিচার দাবি করে উপজেলা ও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে তারা অভিযোগ দায়ের করেন।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জাভেদ সালাম বলেন, চেকের পাতা চুরি কিংবা ছয়মাসের সম্মানির টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। হুমকির ও নগদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। অসহায় রেহানা বেগম ও তার কন্যা মৌসুমীর কাছ থেকে অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বার্থী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাস্টার আব্দুল হালিম বলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নেতৃবৃন্দের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।