গৌরনদী
গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়ে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ, আহত-১৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পর রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরাজিত প্রার্থীর দুই থেকে আড়াইশ সমর্থক উপজেলার দিয়াশুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের ১৫টি বাড়ি, একটি দোকান, চারটি মটরসাইকেল ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহতদের ৫ জনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন, আহত ও পুলিশ জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও গৌরনদী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মিয়া প্রতিদ্বন্ধীতা করেন। রোববার রাত ৯টার দিকে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষনা করা হয়। এতে মনির হোসেন মিয়া বিজয়ী হন। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরাজিত প্রার্থী মোঃ হারিছুর রহমানের দুই থেকে আড়াইশ সমর্থক দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে দিয়াশুর গ্রামে ঢুকে তান্ডব চালায়। সন্ত্রাসীরা বিজয়ী প্রার্থী মোঃ মনির হোসেন মিয়ার সমর্থকদের ১৫টি বাড়ি, একটি দোকানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ঘন্টাব্যাপি তান্ডবে পুরো গ্রামের মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে এতে ১৫ জন আহত হন। আহুত ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মনির মিয়ার সমর্থক, গৌরনদী পৌর সভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সহসভাপতি মোঃ ইখতিয়ার হোসেন হালদার অভিযোগ করে বলেন, আমার বাড়ি আর পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের বাড়ি একই গ্রামের পাশাপাশি (৫/৭শ গজ দুরে) উপজেলা নির্বাচনে মোঃ মনির হোসেনকে বিজয়ী ঘোষনার পর সে পরাজিত হওয়ার জন্য আমাকে দায়ি করে। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হারিছুর রহমানের একান্ত সহযোগী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইমরান হোসেন, যুবলীগ ক্যাডার কালা আমিন, নয়ন প্যাদা, রিপন মৃধার নেতৃত্বে তার দুই থেকে আড়াইশ সন্ত্রাসী সমর্থক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গুলে করতে করতে আমার বাড়িতে ঢুকে আমার বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে একের পর এক গ্রামের ১৫টি বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় একটি দোকান ৪টি মটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। কুপিয়ে ও পিটিয়ে কমপক্ষে ১৫ জনকে আহত করেছে।
যেসব বাড়ি ভাঙচুর করা হয় দিয়াসুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, এনাম হাওলাদার, জাফর হাওলাদার, তোফাজ্জেল হোসেন, মনির হাওলাদার, আনিস হাওলাদার, বাবুল হোসেন, হারুন আর রশিদ, তাহের উদ্দিন, আলো হাওলাদার, রকিম হোসেন, রুবেল হাওলাদার ব্রাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আহতরা হলেন, কাউন্সিলর ইকতিয়ার হোসেনের মা দেলোয়ারা বেগম (৬৫), মৃত বড় ভাই সাবেক কাউন্সিলর বকতিয়ার হোসেনের স্ত্রী পলি বেগম (৪৫), প্রতিবেশী মর্জিনা বেগম (৪৫) ফিরোজা বেগম (৫২), কামরুন নাহার (৪০), জাহেদা বেগম (৯০), আনিস হাওলাদার (৬০), স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৪৭) প্রতিবন্ধী কন্যা আন্নি (১৭) লুতফুন নেছা (৪০), নাসিমা বেগম (৪৫), রানু বেগম (৬০), হারুন হাওলাদার (৬০), মাসুম সিকদার (৪২)।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দিয়াসুর গ্রামের রোববার রাতের তান্ডব দেখার জন্য আশপাশের গ্রামের শত শত মানুষ ভীর করেছে। ১৫টি বসত ঘর ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের মধ্যে ঢুকে তান্ডব চালানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে অধিকাংই নারী। বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন কাদতে কাদতে বলেন, আকস্মীকভাবে রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির মধ্যে গুলির শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বের হই মৃহুর্তেই দেখি শত শত সন্ত্রাসী কাউন্সিলরের বাড়ি ভাঙচুর করছে। এ সময় বাড়ির মহিলা- বৃদ্ধ শিশুরা বাচাও বাচাও আর্তনাত করতে থাকে। কিছুক্ষনের মধ্যে সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে হামলা চালায় আমি প্রান রক্ষায় দৌড়ে পাশ্ববর্তি বাগানে আশ্রয় নেই। ফিরোজা বেগম বলেন, আমার গ্রামের কাউন্সিলরের কথামত আমরা সবাই কাপ পিরিচের সমর্থক ছিলাম এবং সবাই এক জোট হয়ে ভোট দেই। রাত পোনে ১০টার দিকে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমার ঘরে কোন পুরুষ ছিল না। সন্ত্রাসীরা ঘর ভাঙচুর করে ভিতরে ঢুকে আসবাবপত্র নছনছ করে আমাকে পিটিয়ে জখম করে এবং নগত টাকা, স্বর্নালংকারসহ প্রাই লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। গ্রামের মনির হাওলাদারের স্ত্রী কামরুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, আমি ছেলে সিয়ামমকে নিয়ে রাতের খাবার খাইতেছিলাম এসময় গ্রামে প্রতিবেশীর বাড়িতে কান্নাকাটি, আর্তনাত ও চিৎকার শুনতে পাই। কিছু সময়ের মধ্যে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে লুটপাট করে আমাকে ও ছেলে সিয়ামকে পিটিয়ে জখম করেছে। এভাবেই ক্ষয়ক্ষতির বর্ননা দিলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে ফোন করলে ছাত্ররীগ ইমরান মিয়ার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হামলা ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে পরাজিত প্রার্থী মোঃ হারিছুর রহমান বলেন, নির্বাচনে ফলাফলের পরে আমি অসুস্থ্য ছিলাম আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানিনা। শুনেছি আমার সমর্থক টুকু মল্লিক ও তার ছেলে মিরাজ মল্লিক বাড়ি যাওয়ার পথে কাউন্সিলর ইখতিয়ার ও তার সমর্থকরা কুপিয়ে জখম করেছে। এ ঘটনা ছড়িয়ে পরলে তাদের স্বজন ও সমর্থকরা প্রতিবাদ করতে গেরে সহিংতার ঘটনা ঘটে। নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন মিয়া বলেন, হারিছুর রহমান পরাজিত হয়ে নিজেই কয়েকশ সন্ত্রাসী নিয়ে দিয়াসুর গ্রামে হামলা চালিয়ে আমার সমর্থকদের ১৫/২০টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। হারিচ নিজেই সটগান নিয়ে গুলি করতে করতে গ্রামে ঢকে ঘন্টাব্যাপি তান্ডব চালায়। রাতে পুলিশ র্যাবসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যা গ্রামে ঢুক পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। আগামি ৭২ ঘন্টার মধ্যে হারিছুরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি নতুবা আমরা কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার পর পর পুলিশ র্যাবসহ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেছি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুুতি চলছে।