প্রধান সংবাদ
আওয়ামীলীগ-জাপা নেতার খামখেয়ালীপনায় ভবন নির্মান কাজ তিন বছরেও শুরু করতে পারেনি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ ও জোপা নেতাসহ কতিপয় প্রভাবশালীদের খামখেয়ালীপনায় তিন বছরেও দক্ষিন কমলাপুর সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদার। ভবন নির্মান না হওয়ায় পাঠদান কক্ষ সংকটের কারনে লেখাপড়া বিগ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় লোকজন, স্কুল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের প্রত্যন্ত পল্লি উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন কমলাপুর গ্রামের শিশুদের শিক্ষার জন্য ১৯৪৫ সালে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৬-১৯৯৭ অর্থ বছরে রেজিষ্টার্ড স্কুল হিসেবে অর্ন্তভূক্ত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিকে জাতীকরন করা হয়। রেজিষ্টার্ড স্কুল থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে একটি ভবন নির্মান করা হয়। বর্তমানে ভবনটি ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে । স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যালয়ে তিনতলা ভবন নির্মানের জন্য ১ কোটি ৫লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করে ২০২০ সালের ৮জুলাই দরপত্র আহবান করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স এস,এইচ, এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই বছর ১৫ জুলাই কার্যাদেশ দেন । ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল কাজ শেষ করার কথা ছিল।
উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাসলিমা বেগম বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসারকে দেয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, দক্ষিন কমলাপুর সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা থাকায় প্রধান শিক্ষক নতুন ভবন স্থান্তরিত করার আবেদন করেন। পরবর্তিতে গত ৮ ফেব্রæয়ারি আমি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যালয় পরিদর্শন করি। আমরা সকলেই বর্তমান জমিতে ভবন নির্মান অত্যাধিক ঝুকি হিসেবে বিবেচনা করি। তাই পুরাতন ভবন থেকে ৬শ মিটার দুরে ভবন নির্মান হলে ৬৮ বছরেও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভবনা নাই। এই মর্মে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডও মতামত প্রদান করেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা অফিসার নতুন স্থানে ভবন নির্মান অনুমোদন দেন। সেই অনুসারে উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারকে অনুমোদিত স্থানে কাজ করতে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিন বছরেও কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদার।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ সাহাবউদ্দিন আজাদ জানান, বিদ্যালয় পরিচালণা কমিটি ও উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা কমিটির প্রকল্প স্থান অনুমোদনকৃত স্থানে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ভবন নির্মান কাজ শুরু করতে যাই। এ সময় গুঠিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ নান্না হাওলাদার (৫০), গুঠিয়া ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক, ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালণা কমিটির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি এসএম কেরামত আলী নির্মান কাজে বাধা দেন। তারা জানান, “আমরা যেভাবে যেখানে প্রকল্প স্থান দিবো সেখানেই কাজ করতে হবে”। তিন নেতার খামখেয়ালীপনায় গত তিন বছরেও কাজ শুরু করতে পারিনি। ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির নির্ধারিত স্থানে মাটি ভরাটসহ নির্মান সামগ্রী নেওয়া হলে তারা আমাকে কাজ করতে দেয়নি । এমনকি বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন হামলা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। বিদ্যালয়ের জমিদাতা আরিফুল ইসলাম (৩২) অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা নান্না হাওলাদার, রফিকুল ইসলাম ও কেরামত আলী বিদ্যালয়ের ১৮.২৫ শতাংশ জমির পুকুর জবর দখল করে ভোগ দখল করে আসছেন। স্কুলের পুকুর পাড়ে থাকা এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৫টি রেন্ট্রি গাছ জোর বিক্রি করেছে । এ ছাড়া স্কুলের পুকুরের লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি করে তা আত্মসাত করেছে। এ বিষয়ে উজিরপুর ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও কোন লাভ হয়নি। অভিভাবক মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, সরকারিভাবে অনুমোদিত স্থানে ভবন নির্মানের পক্ষে থাকার কারনে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য নান্না হাওলাদার গংরা আমিসহ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে একাধিক হয়রানীমূলক মামলা ও একাধিকবার হামলা করেছে। অভিভাবক খোকন হাওলাদার, আব্দুল কাদের বলেন, আওয়ামীলীগ-জাপা নেতারা নদী ভাঙ্গনের ঝুকিতে থাকা স্থানে ভবন নির্মানের জন্য ঠিকাদারকে চাপ সৃষ্টি করে। ঠিকাদার সরকারিভাবে অনুমোদিত স্থানে কাজ করতে গেলে কাজ বন্ধ করে দেয়। গত তিন বছর পার হলেও নেতাদের খামখেয়ালীপনায় স্কুল ভবন নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে। পাঠদান কক্ষের সংকটের কারনে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বিগ্নিত হচ্ছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ নাসির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, নান্না হাওলাদার, রফিকুল ইসলাম ও কেরামত আলী এলাকায় ভূমি দস্যু হিসেবে পরিচিত। তারা স্কুলের সম্পত্তি জবর দখল করে ভোগ করে আসছে আমি জমি ছেড়ে দিতে বললে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এমনকি জমি নিয়ে কথা বললে আমাকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আমি বিষয়টি লিখিতভাবে উজিরপুর ইউএনও, মডেল থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক অনিমা রানী সমাদ্দার বলেন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান সরেজমিন পরিদর্শন করে নতুন স্থানে ভবন নির্মান ঝুকিমুক্ত ঘোষনা করেন। তারপরেও কতিপয় ব্যক্তিদের বাধার কারনে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান কাজ তিন বছরেও শুরু করতে পারেনি। পুকুর স্কুলের রেকর্ডিয় সম্পত্তি (১৮.২৫ শতাংশ ) সহসভাপতি রফিকুল ইসলামসহ প্রভাবশালীরা ভোগ দখল করছে।
১৯৯৭ অর্থ বছরে রেজিষ্টার্ড স্কুল হিসেবে অর্ন্তভূক্ত হয়। রেজিষ্টার্ড স্কুল থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে একটি ভবন নির্মান করা হয়। ভবনটিতে চারটি কক্ষ রয়েছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৯২ জন ছাত্র ছাত্রী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছে। একটি কক্ষ লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সরকারিভাবে বেঞ্চ সরবারহ করা হয়। কক্ষ সংকটের কারনে একটি কক্ষে বিদ্যালয়ের বেঞ্চ জমা রাখা হয়েছে। আর দুটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করা হয়। ভবনটি অনেকটাই ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ভিতরে ানেক জায়গায় পলেস্তার খসে পড়ছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাপা সভাপতি মোঃ কেরামত আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় দ্বন্ধের কারনে ভবন নির্মান কাজ রয়েছে। ভবন নির্মান কাজ বন্ধ করে রাখা, গাছ ও মাছ বিক্রির ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত না। কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক, ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালণা কমিটির সনসভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলামের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শুনেছি কে বা কারা স্কুলের পুকুরের মাছ ও গাছ বিক্রি করেছে তবে এর সঙ্গে আমি জড়িত না। আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ নান্না হাওলাদারের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে রাজি নই বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তিতে বার বার ফোন করলে তিনি তা রিসিপ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠানোও সারা দেননি। উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ তৌহীদুজ্জামান বলেন, সভাপতি নাসির উদ্দিনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত চলছে।